পাতি পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Cuculus canorus সমনাম: নেই বাংলা নাম: পাতি পাপিয়া ইংরেজি নাম: Common Cuckoo. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Cuculus, Linnaeus, 1758; প্রজাতি/Species: Cuculus canorus (Linnaeus, 1758)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Cuculus গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৪টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ১১টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. পাতি পাপিয়া, ২. বউকথাকও পাপিয়া, ৩. ছোট পাপিয়া এবং ৪. উদয়ী পাপিয়া। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে পাতি পাপিয়া।

বর্ণনা: পাতি পাপিয়া বা সাধারণ কোকিল হচ্ছে ধূসর রঙের পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি., ওজন ৯০ গ্রাম, ডানা ২২ সেমি., ঠোঁট ২.৮ সেমি., পা ২.৩ সেমি., লেজ ১৬ সেমি.)। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। ছেলেপাখির পিঠ ধূসর ও দেহতল সাদা। থুতনি, গলা ও বুক ফ্যাকাসে ছাইরঙের। সাদা পেট, বগল, অবসারণী ও লেজের নিচের কোর্ভাটের ওপর কালো সরু ডোরা আছে। কালচে বাদামি লেজের আগা সাদা। মেয়েপাখির চেহারা দু’ধরনের হয়। এক ধরনের চেহারায় ধূসর বুকের নিচে প্রান্তদেশে লালচে আমেজ ছাড়া ছেলেপাখির সঙ্গে চেহারার কোন পার্থক্য নেই। অন্য রূপটিকে কলিজা রূপ বলে। এতে লেজসহ লালচে-বাদামি পিঠে কালচে বাদামি ডোরা ও সাদা দেহতলে কালচে ডোরা থাকে। ছেলে ও মেয়েপাখি উভয়েরই চোখ হলুদ, পা ও পায়ের পাতা হলুদ এবং নখর শিঙ-রঙের। শিঙ-বাদামি ঠোঁটের গোড়া হলদে। শ্লেট-ধূসর অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঘাড়ের পিছনটায় সাদা চিতি ও পালকের সাদা পাড় থাকে। ৪টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. c. bakeri বাংলাদেশে রয়েছে।

স্বভাব: পাতি পাপিয়া চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন, অপ্রধান বন ও পর্বতের তৃণভূমিতে বিচরণ করে। সাধারণত একা থাকে। বন বা ঝোঁপের উঁচু চাঁদোয়ায় শিকার ধরে। খাবারের মধ্যে রয়েছে পোকামাকড় বিশেষ করে লোমশসহ শুঁয়োপোকা। মার্চ-সেপ্টেম্বর হিমালয় ও সাইবেরিয়ায় প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় ছেলে পুনরুক্তিক সুরে ডাকে:কুক-কু… কুক-কু…। ছেলেপাখিকে সাড়া দিয়ে মেয়েপাখি অনুক্রমিকভাবে ডাকে: হুয়িহুয়িহুয়ি…। ভোরে ও গোধূলিতে বেশ কর্মচঞ্চল হয়। বাসা তৈরি, ডিম ফোঁটানো ও ছানা পালন এর কোনটিই করে না। মেয়েপাখি আকারের ছোট পাখি যেমন-ঝাড়ফিদ্দা, ঝাড়ফুটকি, খঞ্জন, তুলিকা ও চটকের বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম মাঝে মাঝে ঝাড়ফুটকির দোদুল্যমান বাসার ছোট ছিদ্রপথে বা মাটিতে ঝাড়ফিদ্দার বাসার গর্তের বাহিরে পেড়ে গড়িয়ে বাসার ভিতর প্রবেশ করায়।

আরো পড়ুন:  পাকরা পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি

বিস্তৃতি: পাতি পাপিয়া বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; গ্রীষ্মে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বৃক্ষবহুল অঞ্চলে থাকার কয়েকটি তথ্য আছে। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; পুরো ভারত উপমহাদেশে পাওয়া যায়।

অবস্থা: পাতি পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই পাকরা পাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: পাতি পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সুরেলা কোকিল (ল্যাটিন: cuculus = কোকিল, canorus = সুমধুর সুর)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Cuculus canorus“, http://www.iucnredlist.org/details/22683873/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!