[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Halcyon coromanda সমনাম: Alcedo capensis Linnaeus, 1766 বাংলা নাম: লাল মাছরাঙা, ইংরেজি নাম: Ruddy Kingfisher. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Dalcelonidae গণ/Genus: Halcyon, Swainson, 1821; প্রজাতি/Species: Halcyon coromanda (Latham, 1790)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Halcyon গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ১১টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি তিনটি হচ্ছে ১. লাল মাছরাঙা, ২. কালাটুপি মাছরাঙা ও ৩. ধলাগলা মাছরাঙা। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে লাল মাছরাঙা।
বর্ণনা: লাল মাছরাঙা বনের লাল রঙের জলার পাখি (দৈর্ঘ্য ২৬ সেমি, ডানা ১১.৩ সেমি, ঠোঁট ৬.২ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ লাল-কমলা ও দেহতল ফ্যাকাসে লাল। মাথায় দারুচিনি বা উজ্জ্বল লাল-তামাটে রঙ ও ঘাড়ে লাল বেগুনির সৌÍন্দর্য ফুটে উঠেছে। পিঠের নিচে ও পাছায় ফ্যাকাসে নীলের ওপর সাদা আমেজ আছে। কালচে গোড়া এবং ফ্যাকাসে বা পাটল বর্ণের আগাসমেত ঠোঁট লাল। চোখ কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা পাটল-লাল বা প্রবাল-লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ কালচে ও বেশ বাদামি, পাছা নীল ও লাল দেহতলে কালচে ডোরা রয়েছে। কালচে ঠোঁটের আগা কমলা লাল। তরুণ পাখির কোমর ও লেজউপরি-ঢাকনি গাঢ় নীল। গলা ও তলপেটের চারদিকে কালো বেড় থাকে তবে নীলের সৌন্দর্য অনুপস্থিত। ১০টি উপ-প্রজাতির মধ্যে H. c. coromanda বাংলাদেশে আছে।
স্বভাব: লাল মাছরাঙা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরসবুজ বনের নদী ও প্যারাবন জলাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। পানির উপরিতল ও কাদায় শিকার খোঁজে এবং তারপর শিকার ধরার জন্য নিচে নেমে আসে; খাবার তালিকায় মাছ, কাঁকড়া, গুবরে পোকা, ফড়িং ও খুদে প্রাণী রয়েছে। জোরে ও দ্রুত ডানা চালিয়ে তাড়াতাড়ি ও সোজা উড়ে চলে। সাধারণত তীব্র শব্দে কম্পিত সুরে ডাকে: টিটিটিটিটিটিটিটি.. এবং সুরেলা কণ্ঠে গান করে: কুয়িররর-র-র-র-র। মার্চ-এপ্রিল মাস প্রজনন ঋতুতে মাটির খাড়া পাড় বা গাছের কাণ্ডে বাসা বানায়; বাসার গর্ত সাধারণত ৪৫-১০০ সেমি. দীর্ঘ ও ৫ সেমি. চওড়া। মেয়েপাখি ৫-৬টি ডিম পাড়ে; ডিম সাদা ২.৭ × ২.৩ সেমি. চওড়া।
বিস্তৃতি: লাল মাছরাঙা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; খুলনা বিভাগের প্যারাবনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্পুচিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: লাল মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই লাল মাছরাঙাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]
বিবিধ: লাল মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ করোম্যান্ডেল-এর মাছরাঙা (গ্রীক: halkuon = মাছরাঙার সঙ্গে সম্পর্কিত পৌরাণিক পাখি; coromanda = করোম্যান্ডেল, চেন্নাইয়ের কাছাকাছি উপকূল, ভারত)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Halcyon coromanda“, http://www.iucnredlist.org/details/22683234/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।