সুন্দরবন ব্যতীত বাংলাদেশের একমাত্র মদনটাক পাখির কলোনি ছিলো ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার সিংহারি গ্রাম। এ গ্রামে গত ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৬ বছর বাসা তৈরি ও ছানা তুলেছিলো বাংলাদেশের মহাবিপন্ন ও পৃথিবীর সংকটাপন্ন পাখি ছোট মদনটাক বা Lesser Adjutant. কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে মদনটাকগুলো সে গ্রামের কলোনিতে বাসা তৈরি করেনি। গত ২০০৭ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর যাবত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সেখানে মদনটাকেরা বাসা তৈরি করে ডিম দিত এবং বৈশাখ বা এপ্রিল মাসের মধ্যেই ছানারা বড় ও উড়বার যোগ্য হতো। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে কোনো নভেম্বর মাসেই পাখিরা সেই শিমুল গাছে আসেনি, পুরোনো বাসা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
তবে মাঝে মধ্যে দু’একটি পাখি সেই শিমুল গাছে আসে এবং তাদেরকে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সেই গাছের মালিক শামসুল হক। গত ১০ নভেম্বর ২০১২ তারিখে কথা হয় সেই শিমুল গাছের আরেক মালিক আয়নুল হকের সঙ্গে। কি কারণে ২০১৩ সালে পাখিরা আসলো না এবং বাসা তৈরি করলো না জিজ্ঞ্যেস করলে তিনি আরো জানান এই বছর পার্শ্ববর্তি নদীর ও গ্রামের নিকটবর্তি সব এলাকায় ধান চাষ করা হয়েছে। ফলে পাখিদের বিচরণভূমি কমে গেছে এবং প্রাকৃতিক খাদ্যসংকট আছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। খাবারের অভাবেই পাখিরা এবার এখানে বাসা তৈরি করেনি বলেই তিনি মনে করছেন। এছাড়া এবার নাগর নদীতে পানির পরিমাণ কম রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পাখিরা মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিনা জিজ্ঞ্যেস করলে তিনি বলেন আমাদের সেরকম কিছু জানা নেই। অন্যত্র কোথাও বাসা তৈরি করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এ-ব্যাপারে পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান সাধারণত সহজে এই পাখিরা স্থান ত্যাগ করে না। তবে প্রধানত তিনটি কারণে পাখিরা কলোনি ত্যাগ করতে পারে। প্রথমত, আতংকিত হলে; যথা মানুষের দ্বারা বা প্রাকৃতিকভাবে বা অন্য কোনো প্রাণী যেমন বনবিড়াল-ভোঁদড়ের দ্বারা আতংকিত হলে। দ্বিতীয়ত, খাবারের সংকট বা বিচরণভুমির সংকট হলে। তৃতীয়ত, অন্য কোনো স্থানে কলোনি স্থাপনের সুযোগ পেলে। যাযাবর পাখিদের আচরণই হলো কয়েক বছর পরপর স্থানান্তরিত হওয়া তবে এই গ্রামের ক্ষেত্রে তৃতীয় কারণটি প্রযোজ্য নয় কারণ সেখানে পাখিরা মাত্র ৪-৫ বছর ধরে থাকছে।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: সিংহারি গ্রামে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি তোলা শিমুলের ডালে বসে আছে ৬টি ছানা। আলোকচিত্র সৌরভ মাহমুদ
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।