কালা মথুরা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে বিপন্ন আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]বৈজ্ঞানিক নাম: Lophura leucomelanos সমনাম: Phasianus leucomelanos Latham, 1790 বাংলা নাম : কালা মথুরা, ময়ূর (আই), কালো ময়ূর (অ্যাক্ট) জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Phasianidae গণ/Genus: Lophura, Fleming, 1822; প্রজাতি/Species: Lophura leucomelanos (Latham, 1790)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Lophura গণে ১টি প্রজাতি রয়েছে এবং পৃথিবীতে রয়েছে ৯টি প্রজাতি। আমাদের আলোচ্য পাখি কালা মথুরা।

বর্ণনা: কালা মথুরা কালচে ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৬২ সেমি, ওজন ১.৩ কেজি, ডানা ২২ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ৭.৫ সেমি, লেজ ২৩ সেমি)। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ও আকারে অনেক পার্থক্য। পুরুষপাখির পিঠ উজ্জ্বল নীল ও কালোয় মেশানো, কোমর ও পাছার পালকের প্রান্ত সাদা; মাথার চূড়ার পালক খাড়া; মুখের চামড়া ও গলায় ঝুলন্ত লতিকা উজ্জ্বল লাল; দেহতলে পুরো কালো রঙের ওপর ইস্পাত-নীল ও বেগুনি চাকচিক্য। স্ত্রীপাখির দেহে অন্জ্জ্বুল বাদামি পালকের ধূসর প্রান্ত আঁইশের মত দেখায়; মাথার চূড়া ও লেজের পালক প্রায় বাদামি; পীতাভ বাদামি গলা এবং কোমর ও পায়ের পালকের প্রান্ত দেশ ফ্যাকাসে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখি উভয়ের চোখ পিঙ্গল থেকে কমলা-বাদামি; চোখের পাশে পালকহীন চামড়া উজ্জ্বল লাল; ঠোঁট সবুজাভ ও শিঙ-বর্ণের, ঠোঁটের গোড়া কালো ও আগা ফ্যাকাসে; পা ও পায়ের পাতা বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের কালচে-বাদামি ও পীতাভ ডোরা ছাড়া দেখতে স্ত্রীপাখির মত। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে L. l. latham বাংলাদেশে রয়েছে।[১]

কালা মথুরা, মেয়ে, আলোকচিত্র: Sanjeev burman

স্বভাব: কালা মথুরা বনের প্রান্তে ও জঙ্গলসংলগ্ন মাঠে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় বা পারিবারিক ছোট দলে থাকে। মাটিতে হেঁটে ও মাটি থেকে কুড়িয়ে এরা খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় আছে বাঁশবীজ, ডুমুর, পিঁপড়া, উইপোকা, ছোট সাপ ও টিকটিকি। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি সক্রিয় থাকে; দিনে গাছের নিচু ডালে বিশ্রাম নেয়। সকাল ও সন্ধ্যায় নিচু স্বরে মুরগির মত ডাকে: কুড়্ড়-কুড়ড়-কুড়চি-কুড়ড়..। মার্চ-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে পুরুষপাখি গাছের ডালে বসে ডাকে; স্ত্রীপাখি ঘন ঝোপের নিচে নখর দিয়ে মাটি আঁচড়ে পাথর, লতাপাতা বা ঘাসের গোছা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে-পীতাভ বা পীতাভ-সাদা থেকে লালচে পীত বর্ণের, সংখ্যায় ৬-৯টি, মাপ ৪.৯-৩.৭ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে।

আরো পড়ুন:  সবুজ ময়ূর বিশ্বে সংকটাপন্ন ও বাংলাদেশের বিলুপ্ত পাখি

বিস্তৃতি: কালা মথুরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি; চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, তিব্বত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: কালা মথুরা বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২]

বিবিধ: কালা মথুরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চূড়াধারী পাকরা ময়ূর (গ্রিক: lopos = চূড়া, oura = লেজ, lenkos = সাদা, melanos = কালো)।

তথ্যসূত্র:

১. সাজেদা বেগম, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা -০০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৪৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!