[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Merops orientalis সমনাম: নেই বাংলা নাম: সবুজ সুইচোরা, বাঁশপতি (আলী), ইংরেজি নাম: Green Bee-eater. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Meropidae গণ/Genus: Merops, Linnaeus, 1758; প্রজাতি/Species: Merops orientalis (Latham, 1802)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Merops গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ২২টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. খয়রামাথা সুইচোরা, ২. সবুজ সুইচোরা ও ৩. নীললেজ সুইচোরা। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে সবুজ সুইচোরা।
বর্ণনা: সবুজ সুইচোরা ছোট ঘাস-সবুজ পাখি, লেজের কেন্দ্রীয় অভিক্ষেপটি অন্য পালককে ছাড়াইয়া গেছে (দৈর্ঘ্য ২১ সেমি., ওজন ১৫ গ্রাম, ডানা ৯.৫ সেমি., ঠোঁট ৩ সেমি., পা ১ সেমি., লেজ ১২.৫ সেমি.)। সোনালী বা লালচে ঘাড়ের নিচের অংশ ছাড়া পুরো দেহই সবুজ। কালো মাস্ক চোখ বরাবর চলে গেছে। ফ্যাকাসে নীল গলায় কালো বেড় থাকে। লেজের কেন্দ্রীয় পালক জোড়ার অভিক্ষেপ ভোঁতা আলপিনের মত। বাঁকা ঠোঁটটি বাদামি-কালো ও মুখ পাটল বর্ণের। চোখ গাঢ় লাল, পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ-বাদামি এবং নখর শিঙ-বাদামি। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিতে ফ্যাকাসে কিনারার পালকসহ ফ্যাকাসে ও কালো গলার বেড় নেই। ৮টি উপ-প্রজাতির মধ্যে M. o. orientalis ও M. o. ferrugeiceps বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: সবুজ সুইচোরা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা গাছ-পালা, আবাদি জমি, বেলাভূমি ও চারনভূমিতে বিচরণ করে। সচরাচর ছোট দলে থাকে। কোন জায়গা থেকে দ্রুত ছোঁ মেরে শিকার ধরে খায়। খাবার তালিকায় ডানাওয়ালা বড় পোকা যেমন-মৌমাছি, পিঁপড়া ও বোলতা, প্রজাপতি, মথ, গুবরে পোকা, ফড়িং এবং উই রয়েছে। রাস্তার পাশের তার, খুটি ও মরা ডালে অবস্থান নেয় এবং সচরাচর শিকার করার পর সেই অবস্থানেই ফিরে আসে। দ্রুত ডানা ঝাপটে ও অনমনীয় মুক্ত ডানায় সুন্দর ভাবে ধীরে ওড়ে চলে। সচরাচর মধুর গলায় কাপিয়ে অনুক্রমিক ভাবে ডাকে: ট্রি-ট্রি-ট্রি…। ফেব্রয়ারি-জুন প্রজনন ঋতু। বালিময় ভূমি বিশেষ করে রাস্তার পাশের কাটা পাড়ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায় ও মেয়েপাখি ৪-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, মাপ, ১.৯×১.৭ সেমি.।
বিস্তৃতি: সবুজ সুইচোরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের গ্রামীণ কুঞ্জবন খামার ও খোলা মাঠে চোখে পড়ে। পৃথিবীতে উপ-সাহারীয় আফ্রিকা, ইসরাইল থেকে শুরু করে আরব থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, চীন, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।
অবস্থা: সবুজ সুইচোরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই সবুজ সুইচোরাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]
বিবিধ: সবুজ সুইচোরা বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ উদয়ী সুইচোরা (গ্রীক: merops = সুইচোরা; ল্যাটিন: orientalis = প্রাচ্যের)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Merops orientalis“, http://www.iucnredlist.org/details/22725876/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৫০৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।