[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Merops philippinus সমনাম: নেই বাংলা নাম: নীললেজ সুইচোরা, ইংরেজি নাম: Blue-tailed Bee-eater. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Meropidae গণ/Genus: Merops, Linnaeus, 1758; প্রজাতি/Species: Merops philippinus (Linnaeus, 1766)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Merops গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ২২টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. খয়রামাথা সুইচোরা, ২. সবুজ সুইচোরা ও ৩. নীললেজ সুইচোরা। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে নীললেজ সুইচোরা।
বর্ণনা: নীললেজ সুইচোরা নীল লেজ ও বাতাসে ভাসমান দীর্ঘ লেজ ওয়ালা উজ্জ্বলসবুজ পাখি (দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি., ডানা ১২.৮ সেমি., ঠোঁট ৩.৮ সেমি., পা ১.৩সেমি., লেজ ৮.৫ সেমি., পিনপালক ১৩.৫ সেমি.)। নীল পাছা, লেজ ও লেজের নিচেরকোর্ভাট, বুকের নীল আমেজ, হলুদ থুতনি এবং তামাটে গলা ছাড়া দেহের পুরোটাইসবুজ। কপাল সবুজ ও চোখের কালো ডোরা সরু নীল লাইনে ঘেরা। ঠোঁট শিঙ-কালো, চোখলালচে-বাদামি থেকে গাঢ় লাল এবং পা ও পায়ের পাতা মেটে-ফ্যাকাসে থেকেকালচে বাদামি রঙের। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই।উজ্জ্বল সবুজ অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির স্পষ্ট নীল রঙ পাছা, লেজের উপরেরকোর্ভাট ও লেজে বিস্তৃত। গলা লালচে। তরুণ পাখির গলা ও বুক বয়স্ক পাখিরচেয়ে ফ্যাকাসে ও অনুজ্জ্বল রঙের হয়।
স্বভাব: নীললেজ সুইচোরা মুক্ত বালিময় এলাকা, পানির ধারে বৃক্ষপূর্ণ জায়গা ও প্যারাবনে বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট ঝাঁকে থাকে। পানির সামান্য ওপর দিয়ে ওড়ে বা উঁচু জায়গা থেকে উড়ন্ত শিকারকে ছোঁ মেরে ধরে খায়। খাবার তালিকায় প্রধানত ফড়িং, বোলতা ও মৌমাছি রয়েছে। মাঝে মাঝে গুবরে পোকা, মথ, ছারপোকা ও নীল দেহের মাছিও খায়। প্রায়ই পালক পরিস্কার করার জন্য নদীতে হালকা ডুব দিয়ে থাকে। সচরাচর গভীর ও গলা কাপিয়ে অনুরক্তিক স্বরে ডাকে: প্রিরররিও…। মার্চ-জুন কলোনিতে প্রজনন করে। নদীর খাড়া তীর, বালিময় খাড়া উঁচু পাহাড় বা সমতল বালিতীরে ২মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ তৈরি করে বাসা বানায় ও মেয়েপাখি ৫-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, মাপ ২.৩×২.০ সেমি.।
বিস্তৃতি: নীললেজ সুইচোরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের গ্রাম, নদীর পাড় ও মুক্ত বনভূমিতে পাওয়া যায়; প্রজননের জন্য পরিযায়ী দলের আগমনে গ্রীষ্মে এই পাখির সংখ্যা এদেশে অনেক বেড়ে যায়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চল ও নিউগিনি এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; শীতে ভারত, বাংলাদেশের দক্ষিণে ও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়।
অবস্থা: নীললেজ সুইচোরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই নীললেজ সুইচোরাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]
বিবিধ: নীললেজ সুইচোরা বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ফিলিপাইনের সুইচোরা (গ্রীক: merops = সুইচোরা; philippinus = ফিলিপাইনের)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Merops philippinus“, http://www.iucnredlist.org/details/22683750/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।