দেশি মেটেধনেশ বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিলুপ্ত আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Ocyceros birostris সমনাম: Berceros birostris Scopoli, 1786 বাংলা নাম: দেশি মেটেধনেশ, পুটিয়াল ধনেশ (আলী) ইংরেজি নাম: Indian Grey Hornbill. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Bucerotidae গণ/Genus: Ocyceros, Hume, 1873; প্রজাতি/Species: Ocyceros birostris (Scopoli, 1786)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Ocyceros গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৩টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত এবং আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে দেশি মেটেধনেশ।

বর্ণনা: দেশি মেটেধনেশ বা পুটিয়াল ধনেশ হচ্ছে ধূসর রঙের বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ৬১ সেমি, ডানা ২১.২ সেমি, ঠোঁট ৪.৭ সেমি, পা ৪.৪ সেমি, লেজ ২৬.৫ সেমি)। ছেলেপাখির পিঠ ফ্যাকাসে বালুকাময় বাদামি-ধূসর ও দেহতল কালচে ধূসর; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পালকের আগা সাদা; লম্বা সাদা-ও-কালো বর্ণবিন্যাসের লেজটি ক্রমান্বয়ে সজ্জিত; ভ্রু প্রশস্ত সাদা ও কান-ঢাকনি কালচে ধূসর। এর লম্বা বাঁকা ঠোঁটের ওপর সরু ও সুচালো ‘শিঙ’ রয়েছে; ঠোঁটের গোড়া ও শিরস্ত্রাণ স্লেট-কালো; ঠোঁটের আগা ও নিচের ঠোঁটের অধিকাংশ অংশ হালকা পীত বা মোম-হলুদ; মুখের তালু ফ্যাকাসে; পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে থেকে স্লেট-কালো এবং নখর কালো। মেয়েপাখির ‘শিঙ’ ছোট ও ঠোঁটের অস্পষ্ট আগা ছাড়া দেখতে ছেলেপাখির মত। তরুণ পাখির শিঙহীন ঠোঁট হলুদ।

স্বভাব: দেশি মেটেধনেশ শুষ্ক বনভূমি, ফলের বাগান ও কুঞ্জবন এবং বট, পিপুল, আম ও তেঁতুলগাছে বিচরণ করে; জোড়ায় অথবা ৫-৬টির ছোট দলে দেখা যায়; প্রায়ই ময়না, হরিয়াল, বুলবুল ও অন্য ফলাহারী পাখির মিশ্র দলে থাকে। খাদ্য সংগ্রহের সময় এরা লেজ খাড়া করে রাখে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, ফুলের পাপড়ি, গুবরে পোকা, ফড়িং, ম্যানটিস, বোলতা, টিকটিকি, ইদুর ও অন্য ছোট প্রাণী। পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য এরা ডাকে: চী-ওওউউ..; এবং নিজ এলাকা প্রতিরক্ষার জন্য উচ্চ কর্কশ স্বরে ডাকে: কে-কে-কা-ই..। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের কাণ্ডের প্রাকৃতিক ফাটলে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো অনুজ্জ্বল সাদা, ফোঁটার সময় মলিন দেখা যায়, সংখ্যায় ২-৪টি , মাপ ৪.১×৩.০ সেমি।

আরো পড়ুন:  মেটে তিতির বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশের বিলুপ্ত পাখি

বিস্তৃতি: দেশি মেটেধনেশ বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; রাজশাহী বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ কুঞ্জ বনে দেখা যেত, এখন নেই। এখন ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ আছে।

অবস্থা: দেশি মেটেধনেশ বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই দেশি মেটেধনেশকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।[৩]

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৫১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Ocyceros birostris“, http://www.iucnredlist.org/details/22682429/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!