[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Pelargopsis capensis সমনাম: Alcedo capensis Linnaeus, 1766; Halcyon capensis (Linnaeus, 1766) বাংলা নাম: মেঘহও মাছরাঙা, ইংরেজি নাম: Stork-billed Kingfisher. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Dalcelonidae গণ/Genus: Pelargopsis, Gloger, 1842; প্রজাতি/Species: Pelargopsis capensis (Linnaeus, 1766)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Pelargopsis গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৩টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি দুটি হচ্ছে ১. খয়রাপাখ মাছরাঙা ও ২. মেঘহও মাছরাঙা। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে মেঘহও মাছরাঙা।
বর্ণনা: মেঘহও মাছরাঙা লাল ঠোঁট ও নীল ডানার মাছ শিকারি (দৈর্ঘ্য ৩৮ সেমি, ডানা ১৫.৭ সেমি, ঠোঁট ৯ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ১০ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার টুপি উজ্জ্বল বাদামি; গলবন্ধ কমলা-পীতাভ; কাঁধ-ঢাকনি বাদামি-নীল; ডানা নীল-সবুজ; পিঠ ও কোমর নীল; গলা ফ্যাকাসে পীতাভ; বুক, পেট ও অবসারণী কমলা পীতাভে মেশানো; ডানার প্রান্ত-পালকের গাঢ় নীল রঙ লেজের উজ্জ্বল নীলের মধ্যে পার্থক্য আছে। এর ছোরার মত ঠোঁটটি রক্তলাল, গোড়া কালচে ও আগা কালো; চোখ বেশ বাদামি; পায়ের পাতা প্রবাল-লাল ও নখর কালো। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ বেশি কমলা ও বুকে ডোরা থাকে। ১৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে P. c. cepensis বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: মেঘহও মাছরাঙা বনের জলাধারা, ধীরে বহমান নদী, সেচের নালা, নদীরপাশের আবদ্ধ জল, জোয়ার-ভাঁটায় সিক্ত খাঁড়ি ও পুকুরে বিচরণ করে; সাধারণতএকা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। পানির পাশে গাছের উঁচু ডালে বসে থাকে এবংস্বশব্দে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, টিকটিকি, পাখির ছানা, ইঁদুর, ইত্যাদি। ডাল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়সাধারণত চীৎকার করে ডাকে: কে-কে-কে-কে-কে..; প্রজননকালে অবিরাম ‘গান’ করে:পীউ-পিউ.. পীউ-পিউ..পীউ..পিউ..। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাসে প্রজনন ঋতুতেজলাশয়ের খাড়া পাড়ে ১০০ সেমি. দীর্ঘ ও ১০ সেমি. চওড়া সুড়ঙ্গ কেটে অথবাগাছের গর্তে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৫টি; মাপ ৩.৬ × ৩.১ সেমি।
বিস্তৃতি: মেঘহও মাছরাঙা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের পুকুর ও জলাভূমিতে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: মেঘহও মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই মেঘহও মাছরাঙাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]
বিবিধ: মেঘহও মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ অন্তরীপের সিন্ধুসারস (গ্রীক: pelargos = সারস, oposis =চেহারা; capensis = অন্তরীপ, উত্তমাশা অন্তরীপ)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Pelargopsis capensis“, http://www.iucnredlist.org/details/22683227/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।