[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Phaenicophaeus tristis সমনাম: Mesia tristis Lesson, 1830 বাংলা নাম: সবুজঠোঁট মালকোআ ইংরেজি নাম: Green-billed Malkoha. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Phaenocophaeus, Stephens, 1815; প্রজাতি/Species: Phaenocophaeus tristis (Lesson, 1830)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Phaenocophaeus গণে বাংলাদেশে রয়েছে ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে এর ৬টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি দুটি হচ্ছে ১. মেটে মালকোআ এবং ২. সবুজঠোঁট মালকোআ। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে সবুজঠোঁট মালকোআ।
বর্ণনা: সবুজঠোঁট মালকোআ দীর্ঘ লেজ ওয়ালা সবুজ পাখি (দৈর্ঘ্য ৫১ সেমি., ওজন ১১৫ গ্রাম, ডানা ১৭ সেমি., ঠোঁট ৩.৭ সেমি., পা ৪.২ সেমি., লেজ ৩৮ সেমি.)। পিঠ ধূসরাভ-সবুজ ও দেহতল পীতাভ-ধূসর। মাথার চাঁদি, ঘাড়ের পিছন ও পিঠ ধূসরাভ-সবুজ এবং ডানা কালচে তৈল-সবুজ। পর্যায়ক্রমিক সবুজাভ-কালো লেজের আগায় প্রশস্ত সাদা অংশ রয়েছে। পেট ও অবসারণী কালচে ধূসরাভ-সাদা। ধূসর গলা, ঘাড়ের পাশ ও বুকে সরু কালো ডোরা এবং পেট বেশ কালচে। ঠোঁট ও চোখের মাঝখানে কালো, ধূসর কপালে কালো এবং ভ্রুতে সাদা ডোরা থাকে। লাল অর্বিটাল চামড়াসহ চোখ বাদামি ও কালচে সবুজ ঠোঁটের গোড়া লাল। নাকের ছিদ্র, পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-স্লেট রঙের। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অর্বিটাল চামড়া কালচে বাদামি। ঠোঁট দুরঙা: উপরের ভাগ স্লেট-শিঙ রঙের ও নিচের ভাগ সবুজাভ। ৬টি উপ-প্রজাতির মধ্যে P. t. tristis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: সবুজঠোঁট মালকোআ চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বন, বনভূমি, গ্রামাঞ্চল ও বাগানে বিচরণ করে। সাধারণত একা থাকে। গাছের পত্রবহুল শাখায় ও ঝোপে হেঁটে খাবার খায়। খাবার তালিকায় শুঁয়োপোকা, ফড়িং, ঝিঁঝিঁ পোকা, টিকটিকি ও ছোট পাখির ডিম রয়েছে। পল্লবগুচ্ছে ধীরে ঘুরে বেড়ায় এবং এক গাছ থেকে আরেক গাছে ওড়ে যাওয়া ছাড়া তেমন চোখে পড়ে না। প্রায়ই ডানা ও লেজ প্রসারিত করে গাছ থেকে গাছে আস্তে উড়ে যায়। কখনও উচ্চ অনুরক্তিক সুরে ডাকে: কী-কী-কী -কী। এপ্রিল-আগস্ট প্রজনন ঋতু। ঘন বনে ভূমি থেকে ৩-৭ মিটার উঁচুতে লতানো গাছের গাঁট ও বাঁশঝাড়ে শাখা পলব, ক্ষুদ্র মূল ও পাতা দিয়ে অগোছালো পেয়ালার মত বাসা বানায় এবং মেয়েপাখি ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম চকের মত সাদা, মাপ ৩.৩ × ২.৫ সেমি.।
বিস্তৃতি: সবুজঠোঁট মালকোআ বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের সব বন ও অনেক বাগানে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: সবুজঠোঁট মালকোআ বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই সবুজঠোঁট মালকোআকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]
বিবিধ: সবুজঠোঁট মালকোআ বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ অনুজ্জ্বল লাল পাখি (গ্রীক:Phoinikophaes = গাঢ় লাল; ল্যাটিন: tristis =অনুজ্জ্বল রঙ)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Phaenicophaeus tristis“, http://www.iucnredlist.org/details/22684098/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।