মেটেটুপি বাটকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Dendrocopos canicapillus সমনাম: Picus canicapillus Blyth, ১৮৪৫, Picoides canicapillus, Yungipicus canicapillus, বাংলা নাম: মেটেটুপি বাটকুড়ালি ইংরেজি নাম: Grey-capped Pygmy Woodpecker জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Picidae গণ/Genus: Dendrocopos, Koch, 1816; প্রজাতি/Species: Dendrocopos canicapillus (Blyth, ১৮৪৫)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Dendrocopos গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ২২টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি তিনটি হচ্ছে; ১. মেটেটুপি বাটকুড়ালি, ২. বাতাবি কাঠকুড়ালি ও ৩. হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে মেটেটুপি বাটকুড়ালি।

বর্ণনা: মেটেটুপি বাটকুড়ালি বড় সাদা ভ্রু-রেখা আঁকা খুদে কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ১৪ সেমি, ডানা ৮.৭ সেমি, ঠোঁট ১.৭ সেমি, পা ১.৪ সেমি, লেজ ৪ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সাদা ডোরাসহ কালচে; দেহতল বাদামি ডোরাসমেত হালকা খয়েরি; চাঁদি ও কপাল মলিন ধূসর; প্রশস্ত সাদাটে ভ্রু-রেখা ছিটা-দাগের মত ঘাড়ের পাশে নেমে গেছে; ডানায় প্রশস্ত কালো ও সাদা ডোরা; লেজ-ওপর-ঢাকনি ও কোমর কালো; কালো ডোরাসহ থুতনি ও গলা সাদাটে। এর ঠোঁটের কিছুটা শিঙরঙা-বাদামি ও কিছুটা ফ্যাকাসে; চোখ লালচে-বাদামি, পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে ও নখর বাদামি। ছেলে ও মেয়েপাখির মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে: ছেলেপাখির মাথার দু পাশে লাল দাগ ও মেয়েপাখির দাগ কালো। ১১টি উপ-প্রজাতির মধ্যে D. c. canicapillus কেবল বাংলাদেশে আছে।

স্বভাব: মেটেটুপি বাটকুড়ালি প্যরাবন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অর্ধ-চিরসবুজ বন, পহাড়ি বন ও বাগানে বিচরণ করে; একা অথবা জোড়ায় চড়ে বেড়াতে দেখা যায়।গাছের বাকল জড়িয়ে ধরে ও চিকন ডালে ঠোঁকর দিয়ে এরা আহার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, পোকামাকড়, ফলের ত্বক ও ফুলের মধু। কয়েকটিওপরমুখি ডালার মিলনস্থলে এরা রাতে থাকে ও খোলা গাছের ডালে জড়িয়ে ধরেসকালে রোদ পোহায়। একটি মাত্র ম্রিয়মাণ সুরে ডাকে: কিক..; এবং তা ছাড়াগাছের ফাঁপা মগডালে আঘাত করে হালকা আওয়াজে ড্রাম বাজায়:টিট-টিট-এরররররর…। এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে খাড়া চিকন ডালে গর্তখুঁড়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ৪-৫টি; মাপ ১.৮×১.৪ সেমি।১২-১৩ দিনে ডিম ফোটে।

আরো পড়ুন:  বাংলা কাঠঠোকরা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: মেটেটুপি বাটকুড়ালি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট বিভাগের পাতাঝরা ও চিরসবুজ বনে এবং প্যারাবনে বিচরণ করে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, চিন ও কোরিয়াসহ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: মেটেটুপি বাটকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]

বিবিধ: মেটেটুপি বাটকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মেটেটুপি কাঠুরে (গ্রিক : dendron = গাছ, kopos = চূর্ণ; ল্যাটিন: canus = মেটে, capillus = টুপি)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Picoides canicapillus“, http://www.iucnredlist.org/details/22681068/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!