মেটেমাথা কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Picus canus Gmelin, 1788 সমনাম: নেই বাংলা নাম: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি ইংরেজি নাম: Grey-headed Woodpecker. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Picidae গণ/Genus: Picus, Linnaeus, 1758; প্রজাতি/Species: Picus canus Gmelin, 1788[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Picus গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৫টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ১৫টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি চারটি হচ্ছে, ১. মেটেমাথা কাঠকুড়ালি, ২. ছোট হলদেকুড়ালি, ৩. বড় হলদেকুড়ালি  ৪. দাগিবুক কাঠকুড়ালি ও ৫. দাগিগলা কাঠকুড়ালি। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে মেটেমাথা কাঠকুড়ালি।

বর্ণনা: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি ছোট আকারের সবুজ কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ৩২ সেমি, ওজন ১৪০ গ্রাম, ডানা ১৪.৩ সেমি, ঠোঁট ৯ সেমি, পা ২.৯ সেমি, লেজ ১০.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সবুজাভ; দেহতল একই রকম ধূসরাভ-সবুজ; কালচে-বাদামি ডানার পালকের শলাকায় সাদা ডোরা; লেজ কালো; মাথার পাশ ধূসর; গলা থেকে ঠোঁটের নিচের ভাগে কালো ডোরা; ধূসরাভ-ছাই বর্ণের থুতনি ও গলা; ধূসর অবসারণীসহ দেহতল ধূসর-সবুজ; ঠোঁটের ফ্যাকাসে সঙ্গমস্থলসহ ঠোঁট শিং-কালো বা নীলচে-স্লেট রঙা; চোখ গাঢ় লাল-বাদামি ও নখর শিং-বাদামি। ছেলেপাখির কপাল ও চাঁদির সামনের ভাগ উজ্জ্বল লাল এবং চাঁদির পিছনের অংশ ও ঘাড় কালো। মেয়েপাখির কপাল, চাঁদি ও ঘাড় কালো, মধ্যে ধূসর ছিটা-দাগ আছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বেশ ধূসর ও দেহতল ডোরাসহ সাদা। ১২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে P. c. hessei বাংলাদেশে রয়েছে।

স্বভাব: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি অর্ধ-চিরসবুজ ও নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি, পাতাঝরা বা মিশ্র কনিফার বন, প্যারাবন ও গাছগাছালি সমৃদ্ধ বাগানে বিচরণ করে; একাকী অথবা জোড়ায় দেখা যায়। মাটির ঢিবিতে অথবা গাছের বাকলে ঠোঁট ঢুকিয়ে এরা খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, উইপোকা, লার্ভা, কাঠ ছিদ্রকারী পোকার পিউপা, ফল ও ফুলের মধু। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে; মাঝে মাঝে উচ্চকণ্ঠে ডাকে: পীক, পীক, পীক, পীক..। মে-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে গাছের ফাঁপা ডালে আঘাত করে এরা ড্রাম বাজায়; এবং বনপ্রান্তে গাছের কাণ্ডে গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪-৫টি, মাপ ২.৯×২.২ সেমি। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই বাসার সব কাজ করে।

আরো পড়ুন:  বড় মেটেকুড়ালি বিশ্বে বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বনে দেখা যায়। চিন ও হিমালয়সহ ইউরোপ থেকে শুরু করে সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল হয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: মেটেমাথা কাঠকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]

বিবিধ: মেটেমাথা কাঠকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ধূসর কাঠঠোকরা (গ্রিক : pikos = কাঠঠোকরা, ল্যাটিন: canus = ধূসর )।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Picus canus“, http://www.iucnredlist.org/details/22726503/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!