ছোট হলদেকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Picus chlorolophus Vieillot, 1818 সমনাম: নেই বাংলা নাম: ছোট হলদেকুড়ালি ইংরেজি নাম: lesser Yellownape. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Picidae গণ/Genus: Picus, Linnaeus, 1758; প্রজাতি/Species: Picus chlorolophus Vieillot, 1818[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Picus গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৫টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ১৫টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি চারটি হচ্ছে, ১. মেটেমাথা কাঠকুড়ালি, ২. ছোট হলদেকুড়ালি, ৩. বড় হলদেকুড়ালি  ৪. দাগিবুক কাঠকুড়ালি ও ৫. দাগিগলা কাঠকুড়ালি। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে ছোট হলদেকুড়ালি।

বর্ণনা: ছোট হলদেকুড়ালি চোখে ও ঘাড়ে লাল রঙের সাজসজ্জা করা হলদেঝুটি কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি, ডানা ১৩.৫ সেমি, ঠোঁট ২.৪ সেমি, পা ২.২ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সবুজাভ-হলুদ; দেহতলে ডোরা আছে; ডানার মধ্য-পালক তামাটে লাল; ডানার কালো প্রান্ত-পালকে সাদা ডোরা; বাদামি-কালো লেজ; পেটে সাদা ও সবুজ ডোরা রয়েছে; ঘাড়ে এক গুচ্ছ হলুদ পালক; থুতনি সাদা এবং বুক ও পিঠ সবুজাভ। এর ঠোঁট শিঙ-বাদামি, চোখ গাঢ় লাল ও চোখের চারিপাশে লোমহীন স্লেট-রঙা ত্বক; পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ ও নখর বাদামি। ছেলেপাখির চোখ ও ঘাড়ের মাঝখানটায় উজ্জ্বল লোহিত রঙের ডোরা, গাঢ় লাল রঙের টান চোখের ওপর দিয়ে চলে গেছে। মেয়েপাখিতে চোখ ও ঘাড়ের মাঝখানটায় উজ্জ্বল লোহিত রঙের ডোরা নেই কিন্তু প্রশস্ত গাঢ় লাল রঙের টান চোখের পিছন থেকে ঘাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে P. c. chlorolophus কেবল বাংলাদেশে পাওয়া গেছে।

স্বভাব: ছোট হলদেকুড়ালি প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, পাহাড়ি বনও প্যারাবনে বিচরণ করে; সাধারণতজোড়ায় ঘুরে বেড়ায়; মাঝে মাঝে ফিঙে, ছাতারে ও অন্যান্য পতঙ্গভুক পাখির সহযোগী হয়ে শিকার করতে দেখা যায়। ঠোকরদিয়ে গাছের বাকল থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে:পিঁপড়া ও উইপোকা, কাঠ ছিদ্রকারী পোকা, পিউপা ও রসালো ফল। খাবার খাওয়ারসময় এরা নাকি সুরে ডাকে: পী-অ্যা..। এপ্রিল-মে মাসে প্রজনন ঋতুতেছেলেপাখি ঘাড়ের হলুদ ঝুটি খাড়া করে মাথা এপাশ ওপাশ ঘুরায় ও ফাঁপা কাঠেআঘাত করে ড্রাম বাজায়; এবং বনের মধ্যে ক্ষয়ে যাওয়া গাছের কাণ্ডে গর্তখুঁড়ে বাসা বানিয়ে মেয়েপাখি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৫টি; মাপ ২.৪×১.৯ সেমি। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই বাসার সব কাজ করে।

আরো পড়ুন:  দাগিগলা কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: ছোট হলদেকুড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে ও প্যারাবনে বিচরণ করে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীন ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: ছোট হলদেকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]

বিবিধ: ছোট হলদেকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হলদেঝুটি কাঠঠোকরা (গ্রীক : pikos = কাঠঠোকরা, khloros = হলুদ, lophos = ঝুটি)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Picus chlorolophus“, http://www.iucnredlist.org/details/22681431/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!