[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Psilopogon asiaticus সমনাম: Trongon asiatica Latham, 1790; Megalaima asiatica; Cyanops davisoni বাংলা নাম: নীলগলা বসন্ত ইংরেজি নাম: Blue-throated Barbet. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Captonidae গণ/Genus: Psilopogon, Gray, 1842; প্রজাতি/Species: Psilopogon asiaticus (Latham, 1790)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Megalaima গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৫টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ২৪টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. নীলগলা বসন্ত, ২. নীলকান বসন্ত, ৩. সেকরা বসন্ত, ৪. দাগি বসন্ত ও ৫. বড় বসন্ত। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে নীলগলা বসন্ত।
বর্ণনা: নীলগলা বসন্ত বা নীলগলা বসন্তবৌরী বা বড় বসন্ত বাউরি, বড় বসন্ত বাওড়ী বা ধনিয়া পাখি হচ্ছে পুরোপুরি সবুজ রঙের বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ২৩ সেমি, ওজন ৮০ গ্রাম, ডানা ১০.৫ সেমি, ঠোঁট ২.৮ সেমি, পা ২.৮ সেমি, লেজ ৬.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির সামান্য কিছু পালক ছাড়া দেহের পুরোটাই ঘাসসবুজ বর্ণের; মুখ, গলা ও বুকের উপরিভাগ নীল; বুকের পাশে লাল পট্টি রয়েছে; কপাল লাল, চাঁদি কালো ও গাঢ় লাল। এর কালো কালমেনসহ ঠোঁট ফ্যাকাসে-ধূসর শিঙ-রঙা; কমলা-হলুদ সরু চোখের কিনারাসহ চোখ লালচে-বাদামি; পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ-শ্লেট এবং নখর শিঙ-বাদামির মিশ্রণ। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির অনুজ্জ্বল মাথায় সবুজ ও কালো মেশানো রঙসহ লাল চাঁদি রয়েছে। ৪টি উপ প্রজাতির মধ্যে M. a. asiatica ও M. a. rubescens বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: নীলগলা বসন্ত সকল বন, কুঞ্জবন ও বাগানে বিচরণ করে; সাধারণত একা বা জোড়ায় দেখা যায়; মাঝেমধ্যে অন্যান্য ফলাহারী পাখির মিশ্র দলে যোগ দেয়। এরা ফলদ গাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, ম্যানটিস্ ও অন্যান্য পোকা। সাধারণত এরা জোর গলায় দীর্ঘক্ষণ ধরে ডাকে: কুটুররুক…; প্রজনন ঋতুতে প্রায় বিরতিহীনভাবে সারাদিন ডাকতে থাকে এবং পাশের ছেলেপাখিরা ডাকের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। মার্চ-জুলাই মাসে প্রজনন ঋতুতে ভূমি থেকে ২-৮ মিটার উপরে গাছের কাণ্ডে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ ২.৭×২.০ সেমি।
বিস্তৃতি: নীলগলা বসন্ত বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের বন ও গ্রামীণ কুঞ্জবনে বিচরণ করে। পাকিস্তানের হিমালয়ের পাদদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে চিনের দক্ষিণাঞ্চল, লাওসের দক্ষিণাঞ্চল ও ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: নীলগলা বসন্ত বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
বিবিধ: নীলগলা বসন্ত পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ এশিয়ার গলাবাজ (গ্রিক: megalos = বড়, laimos =গলা; ল্যাটিন: asiaticus =এশিয়ার)।
তথ্যসূত্র:
১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৫১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Psilopogon asiaticus“, http://www.iucnredlist.org/details/61469878/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫২।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।