পাতাঠুঁটি ধনেশ বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Rhyticeros undulatus সমনাম: Buceros undulatus Shaw, 1811 বাংলা নাম: পাতাঠুঁটি ধনেশ ইংরেজি নাম: Wreathed Hornbill. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Bucerotidae গণ/Genus: Rhyticeros, Reichenbach, 1849; প্রজাতি/Species: Rhyticeros undulatus (Shaw, 1811)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Rhyticeros গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৫টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিটি হচ্ছে আমাদের আলোচ্য পাতাঠুঁটি ধনেশ।

বর্ণনা: পাতাঠুঁটি ধনেশ গলায় হলদে থলে লাগানো বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ৮০ সেমি, ডানা ৪৮ সেমি, ঠোঁট ১৯.৫ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১৪ সেমি)। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কিছু পার্থক্য আছে। ছেলেপাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড় লালচে; মাথার পাশ সাদাটে; ঘাড়ের উপরিভাগ পীতাভ-সাদা ও পালকহীন উজ্জ্বল হলুদ ঠোঁটের নিচের থলেতে আড়াআড়ি কালো ফেটা রয়েছে; সাদা লেজ ছাড়া দেহের বাকি অংশ চকচকে কালো; চোখ রক্তলাল ও চোখের পাশের চামড়া ইটের মত লাল; মোম-হলুদ ঠোঁটের গোড়ার দিকে অনুজ্জ্বল গোলাপি ও কালচে লাল ঢেউখেলানো। মেয়েপাখির কালো মাথা ও ঘাড়; ঠোঁটের নিচের নীল থলে, বাদামি বা ধূসর-বাদামি চোখ ও লালচে হলুদ ঠোঁট। ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই পা ও পায়ের পাতা সবুজে বা কালচে-স্লেট রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ফ্যাকাসে নীল চোখ ও ঢেউহীন ঠোঁট ছাড়া চেহারা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষপাখির মত।

স্বভাব: পাতাঠুঁটি ধনেশ চিরসবুজ বনের কিনারায় বিচরণ করে; জোড়ায় বা ছোটদলে দেখা যায়। এরা ফলদ গাছে খাবার খায়। খাবার তালিকায় প্রধানত রয়েছেরসালো ফল; কখনও কখনও টিকটিকি ও অন্য ছোট প্রাণীও খেয়ে থাকে। গাছ থেকে গাছেওড়ার সময় এরা ডাকে: উক-হর্য়িক..। এপ্রিল-মে মাসে প্রজনন ঋতু; পূর্বরাগেছেলেপাখিরা লেজ ওঠানামা করে, ঠোঁট নাড়ায় ও কর্কশ কণ্ঠে ‘গান’ গায়; এবংবনের উঁচু গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। মেয়েপাখি ২টি সাদা ডিম পাড়ে, ডিমেরমাপ ৬.৩×৪.২ সেমি। ডিম পাড়া শুরু হলে ছেলেপাখি কাদার প্রলেপ দিয়ে বাসারপ্রবেশ-পথসরু করে; ডিমে তা দেওয়া থেকে ছানা বড় হওয়া পর্যন্ত মেয়েপাখি বাসার ভেতরে থাকে; বাসার মুখের সরু ছিদ্র দিয়ে পুরুষপাখি পুরোপরিবারের খাবার সরবরাহ করে।

আরো পড়ুন:  উদয়ী পাকরাধনেশ বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিপন্ন আবাসিক পাখি
পাতাঠুঁটি ধনেশ, ছেলে, আলোকচিত্র: Asim Haldar, Buxa Tiger Reserve, West Bengal. March 2017.

বিস্তৃতি: পাতাঠুঁটি ধনেশ বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; চট্রগাম বিভাগে দেখা গেছে বলে তথ্য আছে; অতীতে আবাসিক পাখি ছিল; প্রধানত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যেত। ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: পাতাঠুঁটি ধনেশ বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্যশ্রেণিতে রয়েছে। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই পাতাঠুঁটি ধনেশকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: পাতাঠুঁটি ধনেশ পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ঢেউ-খেলানো শিঙ (গ্রিক: rutis = রেখা, akeros = শিঙ; ল্যাটিন: undulates = ঢেউ খেলানো)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৫১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Rhyticeros undulatus“, http://www.iucnredlist.org/details/22682528/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!