ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Sasia ochracea Hodgson,১৮৩৬ সমনাম: নেই বাংলা নাম: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি ইংরেজি নাম: White-browed Piculet জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Picidae গণ/Genus: Sasia, Hodgson, 1837; প্রজাতি/Species: Sasia ochracea Hodgson, ১৮৩৬[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Sasia গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৩টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ও আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি।

বর্ণনা: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি কালো লেজ ও সাদা ভ্রু-রেখা আঁকা খুদে কাঠঠোকরা (দৈর্ঘ্য ৯ সেমি, ওজন ১০ গ্রাম, ডানা ৫.৩ সেমি, ঠোঁট ১.৩ সেমি, পা ১.৫ সেমি, লেজ ২.৩ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতলের পুরোটাই লাল; পিঠ সবুজাভ-জলপাই রঙ; মোটা সাদা ভ্রু-রেখা চোখের পিছন থেকে শুরু হয়েছে; খাটো ও মোটা লেজটি কালো। এর দুইরঙা ঠোঁট: উপরের ঠোঁট কালো ও নিচের ঠোঁট ফ্যাকাশে-ধূসর; চোখ লাল এবং পা ও পায়ের পাতা হলদে-বাদামি। ছেলে ও মেয়েপাখিতে দুটি অতি ক্ষুদ্র অংশে পার্থক্য রয়েছে: ছেলেপাখির কপাল সোনালী-হলূদ কিন্তু মেয়েতে লাল এবং ছেলেপাখির চোখের পাশের ত্বক গাঢ় লাল তবে মেয়েতে তা ফ্যাকাশে-ম্যাজেন্টা। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতলে পরিবর্তনশীল ধূসর বা সবুজ আভা রয়েছে। ৩টি উপ-প্রজাতির মধ্যে S. o. ochracea বাংলাদেশে আছে।

স্বভাব: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি প্রশস্ত পাতার অর্ধ-চিরসবুজ বন, পাহাড়ি বন ওবাঁশবনে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় থাকতে দেখা যায়; কদাচিৎ ছোট পতঙ্গভুকপাখির দলে যোগ দিয়ে পোকা শিকার করে। গাছের ডালে, বাঁশে অথবা কঞ্চিতে ঠোকরদিয়ে এরা খাবার সংগ্রহ করে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, পিঁপড়ার ডিম, পিউপা ও অন্যান্য পোকামাকড়। মাঝে মাঝে এরা তীক্ষè সুরে ডাকে: চিপ… এবংচি.রররররররররা..। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে পূর্বরাগের অংশ হিসেবেমেয়েপাখি ঝুঁকে বসে ঘাড় মোচড়ায় এবং ছেলেপাখি ডানা ঝাপ্টায়, দৌড়ায়ও কিচমিচ শব্দ করে। মিশ্র ঝোপেবা বাঁশ বনে ক্ষয়প্রাপ্ত বাঁশ বা ছোট গাছেগর্ত কেটে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ৩-৪টি; মাপ১.৫×১.২ সেমি।

আরো পড়ুন:  মেটেমাথা কাঠকুড়ালি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ এবং বাঁশ বনে পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচিনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]।

বিবিধ: ধলাভ্রু কুটিকুড়ালির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ খয়রা কাঠঠোকরা (নেপালি :sasya = কাঠঠোকরা, ল্যাটিন: ochracea = মেটে খয়েরি রঙ)।

ব্যবহৃত আলোকচিত্র: লেখায় ব্যবহৃত আলোকচিত্রটি Garbhanga Reserve Forest, Guwahati, Assam থেকে আগস্ট ২০১৬-তে তুলেছিলেন গৌরব তালুকদার।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Sasia ochracea“, http://www.iucnredlist.org/details/22680792/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!