[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Spatula clypeata Linnaeus 1758 সমনাম: Anas clypeata বাংলা নাম: উত্তুরে খুন্তেহাঁস, খুন্তেহাঁস (আলী), পান্তামুখি (আই) ইংরেজি নাম: Northern Shovelar জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Anatidae গণ/Genus: Anas, Linnaeus, 1758; প্রজাতি/Species: Spatula clypeata Linnaeus 1758[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Anas গণে বাংলাদেশে রয়েছে ১০টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৪২টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশর নিম্নোক্ত ১০টি প্রজাতি হচ্ছে ১. উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস, ২. উত্তুরে খুন্তেহাঁস, ৩. পাতি তিলিহাঁস, ৪. ফুলুরি হাঁস, ৫. বৈকাল তিলিহাঁস, ৬. ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস, ৭. নীলমাথা হাঁস, ৮. দেশি মেটেহাঁস, ৯. গিরিয়া হাঁস ও ১০. পিয়াং হাঁস। আমাদের আলোচ্য হাঁসটি হচ্ছে উত্তুরে খুন্তেহাঁস।
বর্ণনা: উত্তুরে খুন্তেহাঁস লম্বা ও প্রশস্ত ঠোঁটের পাখি (দৈর্ঘ্য ৪৮ সেমি, ওজন ৬৪০ গ্রাম, ডানা ২৩.৯ সেমি, ঠোঁট ৬.৩ সেমি, পা ৩.৫ সেমি, লেজ ৭.৯ সেমি)। ছেলে ও মেয়েহাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে। ছেলেহাঁসের মাথা গাঢ় সবুজ; বুক সাদা; বগল তামাটে; কাঁধ নীল; ধাতব সবুজ পতাকা; চোখ গোলাপি ও ঠোঁট কালো। মেয়েহাঁসের ঘন বাদামি দেহ; ডানায় তামাটে নীল পট্টি; হালকা সবুজ পতাকা; বাদামি চোখ; হালকা বাদামি ঠোঁটে কমলার আমেজ। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের পা কমলা; চ্যাপ্টা পাতলা ঠোঁটের প্রান্ত বেশ প্রশস্ত; ঠোঁটের চার ধার চিরুনির মত। প্রজনন ঋতু ছাড়া ছেলেহাঁস দেখতে অনেকটা মেয়েহাঁসের মত। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের ডোরাহীন কোমর ও দাগি পেট ছাড়া মেয়েহাঁসের মত দেখায়।
স্বভাব: উত্তুরে খুন্তেহাঁস অগভীর মিঠাপানির হ্রদ, জলাধার, নদ-নদী এবং উপকূলের লেগুন ও দ্বীপে বিচরণ করে; সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। অগভীর পানিতে অথবা নরম কাদায় ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে এরা খাবার ছেকে নেয়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী, লার্ভা, মাছের রেণু ও জলজ আগাছা। ডানায় শন-শন শব্দ করে এরা প্লত ওড়ে চলে এবং প্রজনন ঋতু ছাড়া কদাচিৎ ডাকে; পুরুষহাঁসের নিচু স্বরে ডাক: ভেক-ভেক… এবং স্ত্রীহাঁসের ভাঙা গলায় ডাক: কয়েহ… কয়েহ..। মে-সেপ্টেম্বর মাসের প্রজনন ঋতুতে সাইবেরিয়ায় খোলা ঘাসের মাঠে বা ঝোপের নিচে ঘাস ও পালক বিছিয়ে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজাভ ও পীতাভের মিশ্রণ; সংখ্যায় ৭-১৬টি; মাপ ৫.২ × ৩.৭ সেমি। ২৩-২৫ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: উত্তুরে খুন্তেহাঁস বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে সব বিভাগের সব ধরনের জলাভূমিতে দেখা যায়। উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার ভারত উপমহাদেশের সব দেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: উত্তুরে খুন্তেহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
বিবিধ: উত্তুরে খুন্তেহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বর্মধারী হাঁস (ল্যাটিন: Anas = হাঁস ; Clypeatus = বর্মধারী ) ।
তথ্যসূত্র:
১. মনিরুল এইচ খান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা -১৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Spatula clypeata“, http://www.iucnredlist.org/details/22680247/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২৪ আগস্ট ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫০।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।