ধলাঘাড় মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Todiramphus chloris সমনাম: Alcedo chloris Boddaert, 1783; Halcyon chloris. বাংলা নাম: ধলাঘাড় মাছরাঙা, ইংরেজি নাম: Collared Kingfisher, white-collared kingfisher বা mangrove kingfisher. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Dalcelonidae গণ/Genus: Todiramphus, Lesson, 1827; প্রজাতি/Species: Todiramphus chloris (Boddaert, 1783)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Todiramphus গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ২১টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত এবং আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে ধলাঘাড় মাছরাঙা।

বর্ণনা: ধলাঘাড় মাছরাঙা সাদা গলাবন্ধওয়ালা সুন্দর নীল জলার পাখি (দৈর্ঘ্য ২৪ সেমি., ডানা ১০ সেমি.,ঠোঁট ৪.৩ সেমি., পা ১.৫ সেমি., লেজ ৬.৫ সেমি.)। পিঠ সবুজাভ-নীল ও দেহতল সাদা। মাথার চাঁদি, কানের কোর্ভাট ও ম্যান্টল নীল-সবুজ এবং সরু ভ্রু সাদা। গলাবন্ধ স্পষ্ট সাদা। ডানা ও লেজ নীল। থুতনি, গলা, বুক, পেট ও অবসারণী সাদা রঙের। চোখ গাঢ় বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা স্লেট-কালো। ঠোঁট দু’রঙের: উপরের পুরো পাটি ও নিচের পাটির প্রান্তদেশের তৃতীয় ভাগ সবুজাভ-কালো এবং নিচের পাটির অবশেষ হলদে-সাদা। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি পীতাভ ভ্রুসহ অনুজ্জ্বল দেখায়। তরুণ পাখির বুকের পালকের প্রান্তদেশ কৃষ্ণ বর্ণের এবং সাদা গলাবন্ধ, বগল ও অবসারণীতে ফ্যাকাসের আমেজ থাকে। ৪৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে T. c. humii বাংলাদেশে আছে।

স্বভাব: ধলাঘাড় মাছরাঙা জোয়ার-ভাঁটায় সিক্ত খাঁড়ি, প্যারাবনের জলা, বনের প্রান্তদেশ ও বাগানে বিচরণ করে। নিভৃতচারী পাখি এবং একা ও জোড়ায় থাকে। কোন জায়গা থেকে কাদায় শিকার পর্যবেক্ষন করে ও ছোঁ মেরে শিকার ধরে ফেলে। খাবার তালিকায় কাঁকড়া ও পোকামাকড় রয়েছে যেমন-ফড়িং ও ঝিঁঝিঁ পোকা ইত্যাদি। টিকটিকি, বিছা ও উইও খায়। সাধারণত দীর্ঘ কোলাহলপূর্ণ শব্দে ডাকে: ক্রেরক-ক্রেরক-ক্রেরক…। এপ্রিল-মে প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় যুগল একে অপরকে গাছে অনুসরণ করে। গাছের পচাকাণ্ড, বৃক্ষচারী উইয়ের বাসা ও মাটির গর্তে বাসা বাঁধে ও স্ত্রীপাখি ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, মাপ ২.৯×২.৪ সেমি.।

আরো পড়ুন:  ধলাগলা মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: ধলাঘাড় মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে পাওয়া যায়। আফ্রিকার লোহিত সাগর থেকে শুরু করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়ার অধিকাংশ উপকূলীয় অঞ্চলসহ ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: ধলাঘাড় মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই ধলাঘাড় মাছরাঙাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: ধলাঘাড় মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ঠোঁটওয়ালা সবুজ-পাখি (গ্রীক: todu = টডি, rhamphos = ঠোঁট, khloris = সবুজ)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Todiramphus chloris“, http://www.iucnredlist.org/details/22683399/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৫০৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!