ক্রোয়েশিয়ায় এক জোড়া ধলা মানিকজোড়ের অবিশ্বাস্য প্রেমকাহিনী

একটি ছেলে ধলা মানিকজোড় পাখি প্রতি বছর হাজার হাজার মাইল পথ উড়ে অতিক্রম করে দেখা করতে যায় তার সঙ্গিনী সংগে, যে সঙ্গিনী মেয়েপাখিটি কিনা প্রতিবন্ধকতার কারণে উড়তে অক্ষম। এমন বিরল প্রেমের নিদর্শন দেখা গেছে ক্রোয়েশিয়ার এক ধলা মানিকজোড় দম্পতির মাঝে। ক্লেপেতান ও মালিনা নামের এই দুটি পাখির প্রেম কাহিনী যেন চলচ্চিত্রকেও হার মানিয়েছেয়। এএফপির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে পাখির এই বিস্ময়কর প্রেমকাহিনীর।

ক্লেপেতান ও মালিনা

২০১৮ সালের গত মার্চ মাসে ক্লেপেতান পূর্ব ক্রোয়েশিয়ার ব্রদস্কি ভারোস নামের ছোট্ট গ্রামটিতে ফিরে এসেছিলো। গত ১৬ বছর ধরেই একটানা এই নিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে এই ছেলে ধলা মানিকজোড় পাখিটি। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শীতকালে সে উড়ে ক্রোয়েশিয়া আসে, এবং সেখানে সঙ্গিনি মালিনার সাথে দেখা ও সংসার হয় তাদের। ইতিমধ্যেই এই সারস দম্পতির রয়েছে ৬২ টি বাচ্চা। প্রতি বছর মিলনে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

ধলা মানিকজোড়ের এই যুগলের দূরপাল্লার প্রেমের কারণে তারা এখন ক্রোয়েশিয়ায় বেশ বিখ্যাত সেলিব্রেটি।

জিপান ভকিচের স্ত্রী মারা যাবার কারণে নিঃসঙ্গ ছিলেন। স্থানীয় এক স্কুলের কেয়ারটেকার ৭১ বছর বয়সী জিপান ভকিচ ১৯৯৩ সালে মালিনাকে নিজের কাছে নিয়ে শুশ্রূষা করেছিলেন যখন শিকারিদের গুলির আঘাতে আহত হয়ে একটি পুকুরের পাড়ে পড়ে ছিলো মালিনা।

মালিনা তার শীতকাল কাটায় একটি স্টোরেজ ভবনে, যাকে ভকিচ “ইমপ্রোভাইজড আফ্রিকা” নামে ডাকেন। এখানে ধলা মানিকজোড়ের বসবাস উপযোগী একটি বাসা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এবং একুরিয়াম আছে। মালিনার জন্য বসন্তকালে ভকিচ বাড়ির ছাদে এক বিশাল বাসা বানিয়ে দেন।

ক্লেপেতান এসে সংসার শুরু করে, মালিনা ডিম দেয়, ছানা তোলে, ক্লেপেতান আফ্রিকায় পরিযায়নের আগে আগস্টের শুরুতে বাচ্চাদেরকে উড়তে শেখায়। আর মালিনা রয়ে যায় ভকিচ এর সাথে। ভকিচ মালিনাকে গোসল করায়, সঠিক জলাভূমিতে যেতে না পারার কারণে তার পায়ে ক্রিম লাগিয়ে দেয়। ভকিচ এএফপিকে আরো জানান, “আমি মাছ ধরার সময় তাকে সাথে নিয়ে যাই কারণ সে আফ্রিকায় ফিরে যেতে পারছে না। আমরা একসাথে টিভি দেখি। আমি যদি তাকে উদ্ধার না করে পুকুরটির পাড়েই রেখে আসতাম তাহলে হয়তো তাকে কোনো শিয়াল খেয়ে ফেলতো। কিন্তু আমি তার ভাগ্যের পরিবর্তন করেছি। আর এখন মালিনার জীবনের দায়িত্বও আমার”।

আরো পড়ুন:  মানিকজোড় হচ্ছে পাখির একটি পরিবারের নাম
জিপান ভকিচ ও মালিনা

ক্লেপিতান এর পায়ে একটি ট্র্যাকিং রিং পরিয়ে দেওয়া আছে, যার ফলে তার গতিবিধি জানা সম্ভব হয়। এর ভিত্তিতে জানা যায় তার বসবাস কেপ টাউনের খুব কাছাকাছি। মালিনার কাছ থেকে সে ১৪,৫০০ কিলোমিটার বা ৯০০০ মাইল দূরে বাস করে। তাদেরকে একসাথে হতে হলে ক্লেপিতানকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উড়ে আসতে হয়।

ক্রোয়েশিয়া প্রায় ১৫০০ জোড়া ধলা মানিকজোড়ের আবাসস্থল। মধ্য ক্রোয়েশিয়ার সিজোক এলাকাকে ১৯৯৪ সালে প্রথম ইউরোপীয় মানিকজোড়ের গ্রাম ঘোষণা করা হয়। ২১০টির বেশি পাখি বাড়ির ছাদ এবং ল্যাম্পপোস্টের বাসায় বাস করে। গ্রামের মানুষের সংখ্যার চেয়ে সেই গ্রামে মানিকজোড় পাখির সংখ্যা দ্বিগুণ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!