তিত পুঁটি দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্রাকৃতির বর্ণময় স্বাদুপানির মাছ

মাছ

তিত পুঁটি

বৈজ্ঞানিক নাম: Puntius ticto (Hamilton, 1822) সমনাম: Cyprinus ticto Hamilton, 1822, Fishes of the Ganges, p. 314; Systomus ticto McClelland, 1839, Asiat. Res. 19: 382; Puntius punctatus Day, 1865, Proc.Zool. Soc. Lond., p. 302; Barbus ticto Day, 1878, Fishes of India, p. 576; Barbus punctatus Day, 1878, Fishes of India, p. 577; Puntius ticto Menon, 1964, Fishes of IndoGangetic Plains, p. 42. ইংরেজি নাম: Ticto Barb, Firefin Barb, Two-spot Barb. স্থানীয় নাম: তিত পুঁটি, তিতা পুঁটি 
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস 
জগৎ: Animalia পর্ব: Chordata শ্রেণী: Actinopterygii বর্গ: Osteoglossiformes পরিবার: Cyprinidae গণ: Pethia প্রজাতি: P. ticto.

বর্ণনা:  তিত পুঁটি দেহ আয়তকার, মুখ ছোট ও প্রান্তীয় অবস্থানে থাকে। দেহের গভীরতা নিদিষ্ট দৈর্ঘ্যের এক তৃতীয়াংশের সমান। স্পর্শী অনুপস্থিত। পৃষ্ঠপাখনা শ্রোণীপাখনার গোড়া অপেক্ষা সামান্য পিছন থেকে শুরু হয় এবং এর শেষোক্ত পাখনাদন্ড অশাখান্বিত, অন্থিগঠিত, অনেকটা শক্ত, পশ্চাৎ কিনারা ধারালো থাকে। পার্শ্বরেখা অসম্পূর্ণ যা ৬ থেকে ৮ টি আঁইশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। দেহের লম্বালম্বি সারিতে ২৩ থেকে ২৫ টি আঁইশ কিন্তু আড়াআড়িভাবে ১০ সারি আঁইশ বিদ্যমান। আবার প্রাক পৃষ্ঠীয় অঞ্চলে ৯ থেকে ১১ টি আঁইশ থাকে। দেহের পৃষ্ঠভাগ ধূসর থেকে ঘাসের ন্যায় সবুজ, পার্শ্বভাগ উজ্জ্বল রুপালি কিন্তু পেট প্রায় সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।

দুইটি কালো দাগ থাকে, তন্মেধ্যে ক্ষুদ্রতর দাগটি বক্ষপাখনার উপরে পার্শ্বরেখার শুরুতে ঠিক ৩য় আঁইশের উপর অবস্থিত কিন্তু অপেক্ষাকৃত বড় দাগটি পায়ুপাখনার পিছনে ১৮ থেকে ২১ তম আঁইশে অবস্থিত। পরিণত পুরুষ মাছের দেহাকৃতি ও পৃষ্ঠপাখনার বর্ণ প্রকৃতির দ্বারা সহজেই স্ত্রী মাছ থেকে পৃথক করা যায়। কেননা প্রজনন ঋতুতে বিশেষ করে মে থেকে অক্টোবর মাসে দেহের পার্শ্বভাগ লাল বর্ণ ধারণ করে। এরা ডিম পাড়ে এবং একই সময়ে ২০ টি গুচ্ছে প্রায় ১৫০ টি ডিম দেয়; প্রায় এক দিনের মধ্যে ডিমগুলি ফুটে বাচ্চা বের হয় এবং পরবর্তী দিন থেকে পোনাগুলো মুক্তভাবে সাঁতরাতে থাকে।

আরো পড়ুন:  গিলি পুঁটি শান্তিপ্রিয় ও জনপ্রিয় অ্যাকুরিয়াম মাছ

স্বভাব ও আবাসস্থল: তিত পুঁটি স্থির ও অগভীর জলাশয় এবং পুকুর ও নদীর কিনারায় কর্দমাক্ত তলদেশে বাস করে। সাধারণত জলজ উদ্ভিদ, কাদায় বসবাসরত ছোট ছোট অমেরুদন্ডী প্রাণী এবং পোকামাকড় খায়। এরা গভীর জলাশয়ের তলায় জমে থাকা বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকে।

 বিস্তৃতি: পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ড।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: তিত পুঁটি প্রজাতি বাণিজ্যিকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ। এই মাছ কিছুটা তিতা স্বাদযুক্ত হওয়ায় কিছু কিছু লোক খেতে চায় না। এই ক্ষুদ্রাকৃতির বর্ণময় মাছটি অ্যাকুরিয়ামে পালন করা যায় ।

বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: তিত পুঁটি মাছ পানির উপরিভাগ ও তলদেশ উভয় স্ত রেই বাস করে। স্বাদুপানি এবং ঈষৎ লোনাপানির মধ্যে এদের অভিপ্রায়ন ঘটে। আবার এই মাছ জলজ উদ্ভিদ এবং গলিত ও পচা আবর্জনা খেয়ে পানি বিশোধনেও ভূমিকা রাখে।

বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: IUCN Bangladesh (2000) এর তালিকায় আশংকাজনক প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।

তথ্যসূত্র:

১. আমিনুল ইসলাম, এম (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। in আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ এবং অন্যান্য। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃ: ১০২–১০৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!