চন্দনা ইলিশ বাংলাদেশের উন্নত খাদ্যমান সমৃদ্ধ মাছ

মাছ

চন্দনা ইলিশ

বৈজ্ঞানিক নাম: Tenualosa toli (Valenciennes, 1847) সমনাম: Alaudsa toli Valenciennes, 1847, Hist, Nat. Poiss, 20:435; Clippea foli Day, 1878, Fishes of India, p. 641; Tenualosa sinensis Munro, 1955, Marine and Freshwater Fishes of Ceylon, p. 24: Hilsha foli Regan, 1917, Ann, Mag. Nat. Hist. ইংরেজি নাম: Toli Shad, Shad স্থানীয় নাম: চন্দনা ইলিশ 
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস 
জগৎ: Animalia পর্ব: Chordata শ্রেণী: Actinopterygii বর্গ: Clupeiformes পরিবার: Clupeidae গণ: Tenualosa প্রজাতি: T. toil

বর্ণনা: দেহ দৃঢ়ভাবে চাপা। পৃষ্ঠদেশ অপেক্ষা অংকীয় দেশ অধিক উত্তল। উর্ধ্বচোয়াল মাঝখানে নির্দিষ্ট খাঁজযুক্ত; মুখ দৃঢ়ভাবে বন্ধ থাকলে নিম্নচোয়াল ভিতরে ঢুকে যায় । ম্যাক্সিলা চোখের পশ্চাতে নিচ পর্যন্ত প্রসারিত, অনাবৃত অংশ মসৃণ ও ত্বকে ঢাকা থাকে। মাথার পৃষ্ঠীয়ভাগ গাঢ়ভাবে ত্বকে আবৃত, কোনো পশ্চাৎ কপাল অস্থির রেখা থাকে না। বহিঃহেমিব্রাঙ্ক (hemibranch) এর ফুলকা সূত্র প্রথম অর্ধখিলান (arch) থেকে অন্তঃহেমিব্রাঞ্চ এর দৈর্ঘ্যের তিন চতুর্থাংশে অবস্থিত। সব খিলানে ফুলকা দন্তিকা সোজা বা কিছুটা বাঁকা, সূক্ষ ও বহু সংখ্যাক এবং প্রথম খিলানের উপরের অংশে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ টি। এদের দাঁত থাকে না। মধ্যবর্তী পার্শ্ব সারিতে ৪০ থেকে ৪১ টি এবং অনুপ্রস্থ সারিতে ১৩ থেকে ১৪ টি আঁইশ থাকে। আঁইশের অনাবৃত অংশে অসংখ্য অনুদৈর্ঘ্য দেখা বিদ্যমান; আঁইশের কিনারা পেক্টিযুক্ত। পুচ্ছপাখনা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁইশযুক্ত। মোট স্কুট সংখ্যা ২৯ থেকে ৩১ টি; প্রাকশ্রোণীতে ১৭ থেকে ১৮ টি, পশ্চাৎ শ্রোণীতে ১২ থেকে ১৩ টি। পৃষ্ঠীয় পাখনা পুচ্ছপাখনার গোড়া অপেক্ষা তুন্ডের অধিক নিকটে উৎপন্ন । বক্ষ এবং শ্রোণীপাখনা কাক্ষিক আইশযুক্ত । শ্রোণীপাখনা পৃষ্ঠীয় পাখনার ৪র্থ থেকে ৭ম পাখনাদন্ডের নিচে উৎপন্ন। পুচ্ছপাখনা মাথা অপেক্ষা লম্বা; নিচের লোব উপরের লোব অপেক্ষা অধিক লম্বা। এদের দেহ মূলত রূপালী বর্ণের এবং দেহ হতে হলুদ বা রক্ত বর্ণের প্রতিফলন দেয়। পৃষ্ঠীয় আঁইশগুলি স্পষ্টভাবেই কালচে বর্ণের (Rahman, 2005)।

আরো পড়ুন:  ঝিল শিংঘি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুলভ মাছ

স্বভাব ও আবাসস্থল: চন্দনা ইলিশ মাছ অধিক লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, নদীগামী, পানির উপরিভাগে চলাচল করে এবং উপকূলীয় জলাভূমিতে ঝাকে ঝাকে এদের দেখা যায়। এরা পাঙ্কটনভূক, প্রধানত ছাঁকন পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করে। এছাড়া তলদেশে পড়ে থাকা ডায়াটম, প্রোটোজোয়া, ক্রাস্টেশিয়া, মোলাস্ক এবং টিউনিকেট ও এদের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভূক্ত। সমুদ্র এবং উপকূলীয় জলাশয়ে বাস করে। জোয়ার ভাটার নদী দিয়ে উপরের দিকে সাঁতরাতে থাকে। প্রধানত সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে নদীর মুখে এদের প্রজনন ঘটে। প্রজনন মূলত দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের সময় ঘটে খুব অল্প সময়ের জন্য যেমন জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারী বা মার্চ। এদের জীববৈশিষ্ট্য (biology) মোটামুটি T. ilisha এর মতোই কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক ফুলকা দন্তিকা থাকায় এরা বড় জীব খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বলে মনে করা হয় (Munrose et al., 1999).

বিস্তৃতি: ইন্দো-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসগর; পূর্ব এবং পশ্চিম ও ইন্দোনেশিয়া থেকে জাভাসাগর, থাইল্যান্ড উপসাগর এবং দক্ষিণ চীন। বাংলাদেশে পদ্মা ও মেঘনা নদীর নিচ অংশে, রূপসা, শিবসা, বিশখালী, তেতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, গলাচিপা ও পায়রা নদী এবং উপকূল অঞ্চলে কিছু কিছু নদীতে পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: এটি খুব উন্নত খাদ্যমান সমৃদ্ধ মাছ। বাজারে টাটকা মাছ বিক্রি হয় বা এই মাছ রৌদ্রে শুকানো হয়। লবন দিয়ে ও শুকানো যায়, সিদ্ধ করা যায়, এমনকি ‘ফিসবল ও তৈরি করা যায়। যখন তারা ডিম পাড়ার উদ্দেশ্যে নদীর উজানে অভিপ্রায়ন করে তখন এদেরকে প্রধানত ফাদ, ফিসিং ওয়ার (fishing weirs), ড্রিফট নেট বা স্থির ফাঁস জাল (fixed gillnet) এর মাধ্যমে মোহনা এবং নদীতে ধরা হয়। জেলেরা মাঝে মাঝে সেই নেট’ (seine net) ব্যাগ নেট’ (bagnets), ‘ক্লাস্প নেট, (claspnets) কাস্ট নেট (cast net) এমনকি কারেন্ট জাল দিয়েও এই মাছ ধরে থাকে (Munrose et al., 1999)। এটি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছ । বাংলাদেশে এই প্রজাতির মাছের পৃথক আহোরণ পরিসংখ্যান নেই। সাম্প্রতিককালে পশ্চিম ভারত মহাসাগর, এশিয়ার অভ্যন্তরীণ জলাশয় এবং পূর্ব মধ্য প্রশান্ত মহাসগার থেকে গড়ে প্রতি বছর ১,৪০,০০০ থেকে ২,৩০,০০০ মেট্রিক টন ইলিশের আহোরণের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন:  সুবর্ণা কাচকি দক্ষিণ এশিয়ার সুস্বাদু স্বাদুপানির মাছ

বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: এই মাছ বিস্তৃত অঞ্চলে চলাচল করে। এদেরকে সমুদ্র, মোহনা এবং নদী বা মিঠাপানির পরিবেশে বসবাস করতে দেখা যায়। এরা ময়লা বা তলানী খেয়ে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে।

বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: সহজেই পাওয়া যায়। IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকায় আশংকাজনক মাছ হিসেবে এখনও চিহ্নিত হয়নি, তবে এটি T. ilisha এর তুলনায় কম পাওয়া যায়।

মন্তব্য: প্রায়ই T. ilisha মাছের সঙ্গে এই মাছের পার্থক্য নির্ণয়ে কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে অপরিণত দশায় এবং ধরার পর সব সময়ই পৃথক করা সম্ভব হয় না। এই প্রজাতির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি উলেখ আছে তবে | এর দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ সেমি এর মধ্যেই বিরাজ করে।

তথ্যসূত্র:

. এ কে আতাউর রহমান, গাউছিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৫–২৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: BEDO (Thailand)

Leave a Comment

error: Content is protected !!