তিনডোরা কাঠবিড়ালি বাংলাদেশে সুলভ আবাসিক এবং বিশ্বে শঙ্কামুক্ত স্তন্যপায়ী

কাঠবিড়ালির প্রজাতি

তিনডোরা কাঠবিড়ালি

বাংলা নাম: তিনডোরা কাঠবিড়ালি ইংরেজি নাম: Indian Palm Squirrel, Three-striped Palm Squirrel. বৈজ্ঞানিক নাম: Funambulus palmarum সমনাম:  
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/ Phylum: Chordata শ্রেণী/ Class: Mammalia বর্গ/ Order: Rodenta পরিবার/Family: Sciuridae, গণ/ Genus: Funambulus, Lesson, 1835; প্রজাতি/ Species: Funambulus palmarum (Linnaeus, 1766)

ভূমিকা: বাংলাদেশের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে Funambulus গণে আছে দুই প্রজাতির কাঠবিড়ালি। এরা হচ্ছে পাঁচডোরা এবং আমাদের আলোচ্য তিনডোরা কাঠবিড়ালি।

বর্ণনা: তিনডোরা কাঠবিড়ালি বা দেশি কাঠবিড়ালি (ইংরেজি নাম: Indian Palm Squirrel) দীর্ঘ ও ঝোপযুক্ত লেজ, ধারালো নখর এবং বড় কানবিশিষ্ট কাঠবিড়ালি। উন্নত নখরসহ পিছনের পায়ে পাঁচটি ও সামনের পায়ে ৪টি আঙ্গুল রয়েছে। করোটি খাটো, নাক খাটো ও করোটিতে ধনুকের মতো বাঁকানো খিলান রয়েছে।[১] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২] এদের পিঠের ওপর তিনটি সাদা ডোরা  দাগ আছে।

স্বভাব: তিনডোরা কাঠবিড়ালি দিবাচর, বৃক্ষবাসী ও ভূচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। দ্রুতবেগে ছুটে ও দ্রুততার সাথে গাছে উঠতে পারে।

আবাসস্থল: তিনডোরা কাঠবিড়ালি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিপ্রধান বন থেকে আর্কটিক তুন্দ্রা অঞ্চলে বিচরণ করে। এটি গাছের চূড়া থেকে ভূনিম্নস্থ সুড়ঙ্গেও থাকতে পারে।[১]  

বিস্তৃতি: তিনডোরা কাঠবিড়ালি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক প্রাণি। এদেরকে প্রধানত পাহাড়ি বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। এছাড়া যমুনা নদীর পূর্ব পাড়েও এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া এরা ভারত, মিয়ানমার ও শ্রীলংকায় পাওয়া যায়। অতি সম্প্রতি এই কাঠবিড়ালির পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় আকস্মিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কিছুটা ক্ষতিকারক প্রাণী হিসেবে বিবেচিত এবং এর বংশবৃদ্ধি রোধ করা হচ্ছে।[১]

বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: এরা পাকা ফল খেয়ে বীজ বিস্তারন ও ফুলের রস পান করে পরাগায়ন ঘটিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বর্তমান অবস্থা: তিনডোরা কাঠবিড়ালিকে বাংলাদেশে সুলভ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি বিশ্বে শঙ্কাহীন বলে বিবেচিত (IUCN Bangladesh 2003)।

আরো পড়ুন:  বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকা

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: তিনডোরা কাঠবিড়ালি প্রায় গাছের বাকল খায় ও বাকল উঠায়। আবাদি বনের গাছকে দুর্বল করে ও অসামান্য ক্ষতি সাধন করে। কয়েক প্রজাতির কাঠবিড়ালিকে এদের কোমল ও ঘন লোমের জন্য লোভী ইতর লোকেরা শিকার করে এবং বড় আকারের গুলোকে খাদ্য হিসেবে বর্বরেরা খায়। এদের লেজ মাঝে মাঝে চিত্রকরের তুলি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি নারকেল গাছের উপর আক্রমণ করে, ফলন কমিয়ে দেয় বলে ডাব ও নারকেল গাছের লোভী মালিকেরা এটিকে মারার চেষ্টা করে।

মন্তব্য: ভারতের হিন্দু পৌরাণিকদের মতে ডোরা কাঠবিড়ালিকে রাম রাজার সাথে তুলনা করে অনেক সময় পূজা করা হয়।

তথ্যসূত্র

১. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), ”বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: স্তন্যপায়ী”, খণ্ড: ২৭ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৪২-৪৪। ২. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৯১

Leave a Comment

error: Content is protected !!