দেশি বনরুই (বৈজ্ঞানিক নাম: Manis crassicaudata) বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মধ্যে দীর্ঘ ও সরু দেহের একটি প্রাণি। বনরুই ওজনে ২ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পৃথিবীতে ৭ প্রজাতির বনরুই রয়েছে, তন্মধ্যে এশিয়ায় আছে তিন প্রজাতির আর এই তিনটিই বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এশীয় বনরুইদের এই তিনটি প্রজাতি হলো ক. দেশি বনরুই, Indian Pangolin, Manis crassicaudata, খ. মালয়ী বনরুই, Malayan Pangolin, Manis javanica, ও গ. চায়না বনরুই, Chinese Pangolin, Manis pentadactyla.
স্বভাব: উই-পিঁপাড়াভুক এই প্রাণীটি রাতে খুব সক্রিয়। খাবারের সন্ধানে মাঝেমধ্যে দিনেও দেখা যায়। জনন কাল ছাড়া বাকি জীবনটা একাই কাটিয়ে দেয় বনরুই। ঝোপঝাড়ের নিচে গাছের ফাঁকফোকরে এদের বসবাস। শিকারি প্রাণীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবার জন্য বনরুই নিজ শরীর গুটিয়ে বর্ম দারা আবৃত চাকতি বানিয়ে ফেলে। নিশাচর ও আড়ালপ্রিয় এই প্রাণী ক্ষিপ্ততার সাথে মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে ৯ ফুট দীর্ঘ গর্ত খুঁড়তে পারে। গর্তের ভেতরে এরা অবস্থান করে। গাছেও খুব দ্রুততার সাথে বিচরণ করতে পারে। এরা প্রতিদিন শত শত পোকামাকড় খায়। পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে। মানুষের কোন ক্ষতি করে না। এদের প্রিয় খাদ্য পিঁপড়া।
বিস্তৃতি: দেশি বনরুই বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক প্রাণি। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তৃত। তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় এ প্রজাতি পাওয়া যায়।
অবস্থা: দেশি বনরুই বাংলাদেশে মহাবিপন্ন ও বিশ্বে কম শঙ্কাগ্রস্ত বলে বিবেচিত। ১৯৭৪ এবং ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: শান্ত-নিরিহ এই বনরুই আমাদের ক্ষতি না করলেও আমরা মানুষেরা বাসস্থান ধ্বংস করে তাদের করেছি আশ্রয়হীন। লোকজ ঔষধ বানাবার ওজুহাতে তাদের করেছি বিপন্ন। অনেকেই হয়ত দেখে থাকবেন হাট-বাজারে কবিরাজ তার ঔষধের পশরা সাজিয়ে বসেছে। মাছের মত বড় বড় আঁশযুক্ত দু-এক খণ্ড চামড়া আছে হয়ত সেখানে। সেটিই বর্ম ধারী বনরুই এর করুণ পরিণতি! কুসংস্কারের কারণে মানুষ এদের হত্যা করে। আবার গণকরাও মানুষকে প্রতারণার জন্য এই প্রাণীটিকে ব্যবহার করে। আসলে বনরুই মানব জাতির জন্য অত্যন্ত উপকারী প্রাণী।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।