জীববিচিত্রা ১৫ অক্টোবর, ২০০৯ তারিখে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন। এটির কর্ম এলাকা প্রধানত ময়মনসিংহ এবং সাময়িকভাবে সারা দেশে বিস্তৃত। এটির সদস্যসংখ্যা ২৬ জন। শুরু থেকেই সংগঠনটি নানা কাজকর্ম সযত্নে করে আসছে। গত প্রায় পাঁচ বছরে সংগঠনটি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পেরেছে। তাদের এসব কাজ করার উদ্দেশ্য ছিলও জনগণের সেবা করা। এসব কাজের দ্বারা জনগণের কতটুকু সহায়তা হয়েছে তার মূল্যায়ন সময়ের উপর ছেড়ে দেয়া যায়। এছাড়াও জীববিচিত্রা প্রকৃতি সংরক্ষণে নানান সহায়তামূলক কাজ করেছে, যেসবের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে দেয়া হচ্ছে।
মানবের লম্বা পথ পরিক্রমায় রয়ে গেছে সেই আদিমতা, প্রাণী পাখি আর গাছ হত্যার আদিমতা। ফলে প্রাণী কিংবা পাখি দেখলেই, এমন কি নিরীহতম প্রাণীটি দেখেও সে ছুঁড়ে দেয় ঢিল; অবচেতনেই ভেঙে দেয় হাতের কাছের ছোটো গাছের মাথা কিংবা ডগা। অবচেতনেই, অচেতনেই।
তাই চাই সচেতনতা! সচেতনতা এবং সচেতনতা। সেই লক্ষ্যেই জীববিচিত্রা প্রধানত ফোকাস করে পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতা গঠনে, বৃদ্ধিতে। জীববিচিত্রা তার ছোটো সাংগঠনিক পরিসর থেকে সভা সেমিনার প্রদর্শনী ইত্যাদি বারংবার করার মাধ্যমে জন সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে জন্মলগ্ন থেকেই। বোঝাবার চেষ্টা করেছে একটি শিয়ালও কী করে তার জীবনকালে করছে লাখ টাকার উপকার। কিংবা সামান্য ফিঙে পাখিটি কি করে তার জীবনকালে দিচ্ছে গ্যালন গ্যালন কীটনাশকের কাজ কোনো ক্ষতি না করেই।
জীববিচিত্রা কৃষককে পৌঁছে দিচ্ছে দেশি বৃক্ষের তালিকাটি। কৃষক তা নিয়ে বসে থাকছে না, খুঁজে লাগাচ্ছে সঠিক গাছটি। ইউক্যালিপটাস, রেইন ট্রি কিংবা অপরাপর অপকারি গাছের অপকারিতার কথা প্রচার করেছে সাধ্য মতো। জীববিচিত্রা যাদের কাছে পৌঁছুতে পেরেছে অন্তত ঐখানে কিছুটা হলেও কমেছে ইউক্যালিপটাসের বা আকাশমণির মতো গাছ লাগানোর হিড়িক।
জনবহুল স্থান সমূহে প্রদর্শনীর মাধ্যমে সব শ্রেণি পেশার মানুষকে লক্ষ্যদলের আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন শ্রেণি ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে সামান্য প্রভাব হলেও পড়েছে বলে জীববিচিত্রা মনে করে।
জীববিচিত্রা বিভিন্ন সময় পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে অপরাপর সংগঠনের সাথে মিলে কাজ করেছে। যেমন, গ্রাম সাহিত্য কেন্দ্র, মাটি ও মানুষ, বিভিন্ন সরকারি কলেজে। এতে করে অপরাপর সংগঠনের সাথে সৌহার্দের সম্পর্কের পাশাপাশি অন্য সংগঠনের মধ্যেও পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে প্রভাবকের ভূমিকা নিয়েছে। যা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
জীববিচিত্রা বিকল্প গণমাধ্যমে তার কর্মপরিধি বিস্তৃত করেছে। এই সব বিকল্প মাধ্যমে তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তো বটেই দেশের সীমা স্বল্প পরিসরে হলেও অতিক্রান্ত করতে পারছে বলে জীববিচিত্রা মনে করে। ফলে এর কিছু প্রভাব পড়ছে, এখানে সেখানে সর্বত্র, সামান্য হলেও।
জীববিচিত্রা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের কেন্দ্রিয় মনোযোগে রাখে। ফলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শনী, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করে থাকে। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে জীববিচিত্রা বরাবরই খুব উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পেয়ে থাকে। যা বরাবরই সংগঠনের জন্য প্রেরণাদায়ক। তারা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের শপথ নেয়। জীববিচিত্রার মন্তব্যখাতা এসব সাক্ষ্য দেয়।
প্রকৃতি সংরক্ষণে জীববিচিত্রা শুধু মাত্র প্রদর্শনী সর্বস্ব হয়ে থাকতে চায় না। ফলে তারা প্রদর্শনী ও সচেতনতামুলক কাজ করেই ক্ষান্ত নয়। বিভিন্ন সময় শিকারি ও পাখি বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাখি অবমুক্ত করে। শিকারিবিক্রেতা যেন আর কখনো পাখি শিকার বা বিক্রয় না করে তদুদেশ্যে মুচলেকাও আদায় করে। উপরন্তু একাধিকবার আইন রক্ষা বাহিনির কাছে সোপর্দ করে। জনবহুল স্থান থেকে এসব পাখি অবমুক্ত করায় এইসব কাজে ব্যাপক সাধারণ মানুষের সম্পৃক্তি ঘটে।
প্রকৃতি সংরক্ষণে জীববিচিত্রা বরাবরই বিরল প্রজাতির পাখি ও প্রাণী সংরাক্ষণে তৎপর। বিভিন্ন সময়ে বিরল প্রজাতির পাখি ও প্রাণী অবলোকন ও অনুসন্ধান করে আসছে জীববিচিত্রা। এর ধারাবাহিকতায় ২১ মার্চ, ২০১১ তারিখে গফরগাঁও-এর বীরখারুয়া গ্রামে শুমারি পূর্বক ৯৪টি এশীয় শামখোল পাখি দেখে এবং পরিচিত করায়, জনগণকে এদের দেখে রাখার জন্য অনুপ্রাণিত করে। যা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে জীববিচিত্রা মনে করে। এছাড়া ও, ২০ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে ব্রহ্মপুত্র নদে একটি বিরল ডলফিন দেখে।
এ ছাড়াও জীববিচিত্রা চার বছরের পথ পরিক্রমায় গাছে পাখির বাসা স্থাপন, প্রায় দশ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির দেশি গাছের চারা বিতরণ করে যা সরাসরি পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেই জীববিচিত্রা মনে করে।
রচনাকাল ২৮ মার্চ ২০১৫