বাংলাদেশে বর্ষার হরেক রকমের দৃষ্টিনন্দন সুগন্ধি তেরোটি ফুল নিয়ে আমাদের এই লেখা। বর্ষা এলেই বাংলায় বহুবিধ ফুলের ঘ্রাণ মিশে থাকে প্রকৃতিতে। হরেক সুগন্ধী ও দৃষ্টিনন্দন ফুলের সমাহার নিয়ে আসে এই বর্ষা। বর্ষার ফুলের কথা বললে সবার আগে কদমের কথা মনে হয়। এছাড়াও নানা সুগন্ধি ফুল যেমন দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, দোপাটি, কামিনী ইত্যাদি ফুটে। বাসার বারান্দায়, বা বেল্কোনি ও লনে নানা ধরনের বর্ষার ফুল লাগানো সম্ভব। একটু পরিকল্পনা করে গাছ লাগালে এই ঋতুর বর্ষণের সাথে সুঘ্রাণ মিশে থাকবে বাতাসে।
১. দোলন চাঁপা: দোলন চাঁপা (বৈজ্ঞানিক নাম: Hedychium coronarium, ইংরেজী নাম: White Ginge) হচ্ছে আদা পরিবারের হেডিচিয়াম গণের একটি সপুষ্পক বীরুৎ। দোলন চাঁপার ফুল সাদা সুঘ্রাণযুক্ত। এর ফুল বর্ষাকালে বেশি ফুটে। তাছাড়া এই ফুল ফোটার সময় আগস্ট-জানুয়ারী। সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে চাষ করা হয়। এটি ঔষধি গুণসম্পূর্ণ বীরুৎ।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন দোলন চাঁপা
২. গন্ধরাজ: গন্ধরাজ (বৈজ্ঞানিক নাম: Gardenia jasminoides ইংরেজি: gardenia, cape jasmine, cape jessamine, danh-danh, বা jasmin) হচ্ছে রুবিয়াসি পরিবারের গার্ডেনিয়া গণের বৃহৎ গুল্ম। গন্ধরাজ গাছে মার্চ থেকে জুলাই মাসে ফুল ধরে। সন্ধ্যা বেলা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ফুলের সুগন্ধের তিব্রতা থাকে। চীন এবং জাপানে স্বদেশী উদ্ভিদ এটি। সমগ্র উষ্ণমন্ডলে আবাদ বা লাগানো হয়। বাংলাদেশে প্রায় সব জেলায় বাগান বা বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আবাদ করা হয়।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন: গন্ধরাজ
৩. দোপাটি: দোপাটি (বৈজ্ঞানিক নাম: Impatiens balsamina, ইংরেজি নাম : Garden Balsam, Lady Slipper) হচ্ছে বলসামিনাসি পরিবারের ইম্পেসেন্স গণের একটি সপুষ্পক বিরুৎ। মার্চ থেকে অক্টোবর মাসে দোপাটির ফুল ফোটে ও বীজ হয়। উন্মুক্ত পরিবেশে ও ভিজা মাটিতে, সচরাচর আবাদী জমি বা তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এই দোপাটির বীজ বোপন করলে পুষ্ট চারা জন্মে।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন: দোপাটি
৪. কদম: কদম বা বুল কদম (বৈজ্ঞানিক নাম: Neolamarckia cadamba, ইংরেজি নাম: burflower tree, laran, Leichhardt pine) রুবিয়াসি পরিবারের এন্থোসেফালুস গণের একটি মধ্যম বা বৃহৎ-আকৃতির সপুষ্পক বৃক্ষ। পুরাতন বনভূমি এবং সমভূমি, সাধারণত আবাদী। মানুষ নিজের বাড়ি, বাগানে যত্নের সাথে লাগিয়ে থাকে। বীজ দ্বারা নতুন চারা জন্মে। এই গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। কদমের নানা ভেষজ গুণও আছে।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন কদম
৫. বেলী: বেলী, বনমল্লিকা, মালশি, মগরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminium sambac, ইংরেজি নাম: Arabian Jasmine, Sambac Jasmine, Tuscan Jasmine) হচ্ছে জেসমিন গণের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি ছোট, ঝোপাল গাছ হলেও উচ্চতায় প্রায় ১ মিটার হয়। বেলী গ্রীষ্ম ও বর্ষার ফুল। একটি থোকায় কয়েকটি ফুল থাকে। ফুলের আকার ও গড়ন অনুসারে কয়েকটি প্রকারভেদ আছে। কলম ও শিকড় থেকে গজান চারায় চাষ। শীতে ছেঁটে দিতে হয়। টবেও ভালো থাকে।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন বেলী
৬. বন জুঁই: বন জুঁই, যুথি (বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminum auriculatum, ইংরেজি নাম : Jasmine) জেসমিন গণের একধরনের লতা বা আরোহী গুল্ম অথবা ভাইন। এটি একটি মধ্যপ্রসারি উদ্ভিদ। এর ফুল সাদা বর্ণের। গাছে থোকায় থোকায় ফোটে ও সুগন্ধি। এর বীজ এবং কান্ড কেটে বিস্তৃতি হয়। বাংলাদেশসহ নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা এই গাছ জন্মে থাকে।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন বন জুঁই
৭. সূর্যমুখী: সূর্যমুখী বা পাতি সূর্যমুখী (বৈজ্ঞানিক নাম: Helianthus annuus ইংরেজি: Common Sunflower) এস্টারেসি পরিবারের হেলিয়ান্থুস গণের বিরুৎ। উত্তর আমেরিকায় স্থানীয় ভাবে জন্মে, কিন্তু বর্তমানে ফ্রান্স, রাশিয়া, মিশর, তুরষ্ক, জার্মানি এবং ইতালীতে আবাদ করা হয়। পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশে উদ্ভিদটি প্রধানত সৌন্দর্য বর্ধক উদ্ভিদ রূপে বাগানে আবাদ করা হয়, কিন্তু ইদানিং উদ্ভিদটি (ভোজ্য) তেল উৎপাদনক্ষম হিসেবে জমিতে আবাদ করা হচ্ছে।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন সূর্যমুখী
৮. জবা: মালভাভিস্কাস হচ্ছে মালভেসি পরিবারে সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি গণের নাম। এই গণে অন্তর্ভুক্ত প্রজাতিগুলো বৃক্ষ ও গুল্ম উভয়ই হয়। বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির জবা জন্মায় কিন্তু রক্তজবা বেশি জনপ্রিয়।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন তুর্কি লংকাজবা, দোলক লংকা জবা, রক্তজবা
৯. কৃষ্ণচূড়া: কৃষ্ণচূড়া মধ্যম বৃক্ষ। আমাদের দেশে সর্বত্রই ফুল সুশোভিত সুদৃশ বৃক্ষ কৃষ্ণচূড়া দেখা যায়। গাছটি আমাদের দেশে সহজপ্রাপ্য হলেও আদিনিবাস মাদাগাস্কার। ১৮২৪ সালে সেখান থেকে প্রথমে মুরিটাস, পরে ইংল্যান্ড এবং শেষ অবধি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার ঘটে। ২০০৩ সালের আইইউসিএন লাল তালিকায় এটি বিশ্বব্যাপি সংকটাপন্নরূপে বিবেচিত।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন কৃষ্ণচূড়া
১০. ঘাসফুল বা ভুঁইচাঁপা: জেফিরান্থিস (গণের বৈজ্ঞানিক নাম: Zephyranthes) হচ্ছে এমারিলিডাসি পরিবারে সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি গণের নাম। এই গণে অন্তর্ভুক্ত প্রজাতিগুলো বিরুৎ হয়। বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়ে থাকে। এই গণের ৩টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন হলুদ ভুঁইচাঁপা , গোলাপী ভুঁই চাঁপা, সাদা ভুঁইচাপা
১১. রঙ্গন: রুবিয়াসিস পরিবারের আইক্সোরা গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। এই গুল্মটি বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করে। রঙ্গন টবে লাগানো যায় বলে এটি টবের ফুল হিসাবে জনপ্রিয়। এর ৩টি প্রজাতি আছে বাংলাদেশে।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন সাদা রঙ্গন , শিখা রঙ্গন, কেসুয়া রঙ্গন
১২. কামিনী: কামিনী (বৈজ্ঞানিক নাম: Murraya paniculata, ইংরেজি নাম: Cosmetic Bark, Orange Jasmine) হচ্ছে রুটেসি পরিবারের মুরায়া গণের সপুষ্পক উদ্ভিদ। কামিনী চিরহরিৎ, নিম্নভূমি এবং পাহাড়ী বর্ষা-অরণ্যের বৃক্ষ। এটি সর্বোচ্চ ৬০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত হয়। নতুন চারা উৎপাদনের জন্য কান্ডের দাবাকলম দ্বারা এবং বীজ দ্বারা করা হয়। কামিনী গাছের বিভিন্ন অংশ ভেষজ ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন: কামিনী
১৩. কাঠগোলাপ: কাঠগোলাপ, গুরু-চম্পা, চম্পা, গুলাচীন হচ্ছে এ্যাসপারাগাসি পরিবারের প্লুমেরিয়া গণের সপুষ্পক উদ্ভিদ। শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে চাষ করা হয়। এটি শক্ত মাটিতে জন্মে। গাছের কাণ্ড অঙ্গজ প্রজনন ও বীজ দ্বারাও বংশ বিস্তার ঘটে। সুগন্ধিযুক্ত এই ফুল বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির পাওয়া যায়।
মূল প্রবন্ধ পড়ুন: ছোট কাঠগোলাপ, পাতি কাঠগোলাপ, সিঙ্গাপুরি কাঠগোলাপ।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।