কাসারি বা কেসুর বুনন শিল্পে ব্যবহৃত একধরনের ঘাস

ঘাস

কাসারি বা কেসুর

বৈজ্ঞানিক নাম: Actinoscirpus grossus (L.f.) Goetgh. & [D.A. Simpson, Kew Bull. 46: 171 (1991). সমনাম: Scirpus grossus L. f. (1781), Scirpus aemulans Steud. (1855), Schoenoplectus grossus (L. .) Palla (1941). ইংরেজি নাম: জায়েন্ট বুলরাশ।স্থানীয় নাম: কাসারি, কেসুর, কাসুর।

ভূমিকা: কাসারি বা কেসুর (বৈজ্ঞানিক নাম: Actinoscirpus grossus ) এক ধরণের আগাছা। পাহাড়ি ঢাল, জমিতে প্রচুর জন্মে। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলাতে এটি জন্মে। এটি ভেষজ আগাছা ও বুনন শিল্পের বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

কাসারি বা কেসুর-এর বর্ণনা:

বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, বক্রধাবক লম্বা ক্ষুদ্র স্ফীতকন্দে পরিসমাপ্ত, সরু, ৫ মিমি পুরু। তৃণকান্ড ১০০-২০০ X ১.০-১.২ সেমি, ১ থেকে অল্পসংখক গুচ্ছাকার, ঋজু, দৃঢ়, স্পষ্ট ত্রিকোণাকার, অর্বুদসদৃশ ব্যবচ্ছেদিত, স্পঞ্জী, মসৃণ বা উপরের অংশ সামান্য অমসৃণ।

পত্র মূলীয়, পত্রফলক ৫০-১৭০ X ১.৫-৩.০ সেমি, ১ শিরাল, নিচের অর্ধাংশ। নৌকার তলি সদৃশ, ত্রিকোণাকার, উপরের অংশ কুঞ্চিত, দীর্ঘা, প্রান্ত অমসৃণ, পত্রাবরণ ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, স্পঞ্জী, ফিকে হলুদ, মঞ্জরীপত্রাবরণ ৩-৪ টি, ছড়ানো, চ্যাপটা, নিচের ২ টি পুষ্পবিন্যাস অপেক্ষা দীর্ঘতর, প্রায় ৫০ সেমি লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয়, সরল বা যৌগ করি, ৬-১৫ x ৬-১৫ সেমি, প্রাথমিক শাখা একাধিক, অসম, বিস্তৃত, প্রায় ৭ সেমি লম্বা, উপরের অংশ অমসৃণ, গৌণ শাখা ১.৫-৪.০ সেমি, অমসৃণ। স্পাইকলেট ৫-১০ x ৩.৪-৪.০ , একল, অবৃন্তক, মঞ্জরীদন্ড যুক্ত, অসংখ্য, উপবৃত্তাকার থেকে দীর্ঘায়ত-উপবৃত্তাকার, গোলাকার থেকে গাঢ় বাদামী, ঘন ও অসংখ্য পুষ্প সমৃদ্ধ। গ্লুম ২.৫-৩.০ x ১.৮-২.০ মিমি, উপবৃত্তাকার বা ডিম্বাকৃতি-উপবৃত্তাকার, স্থূলাগ্র, তন্তুময়, নৌকাকৃতি, উপরের প্রান্ত- সলিয়াযুক্ত, পার্শ্ব মরিচা-বাদামী থেকে গাঢ় বাদামী, কিল সবুজ।

পুষ্পপুট খন্ড ৪-৬টি, নাটলেটের চেয়ে সামান্য বড়, অমসৃণ, উপরের অংশ অন্তর্মুখী বক্র। পুংকেশর ৩ টি, পরাগধানী ১.৫ মিমি, রৈখিক, যোজক ব-দ্বীপ সদৃশ, লালাভ-বাদামী, অতিশয় খাটো, গর্ভদন্ড মসৃণ, গর্ভমুণ্ড ৩ টি। নাটলেট ১.০-১.৮ x ০-৯-১.০ মিমি, বি-ডিম্বাকার, ত্রিকোণাকার, তীক্ষাগ্র, মসৃণ লালাভ-বাদামী ।

আরো পড়ুন:  শাচী বা কাঞ্চি শাক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ভেষজ বিরুৎ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৮৮ (Kumar and Subramaniam, 1986)

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

জলাশয়, ডোবা, ধানক্ষেতের মধ্যে জন্মে। এটি মূলত আগাছা। ফুল ও ফল ধারণ আগস্ট-ডিসেম্বর। বীজ ও পুরাতন স্ফীতকন্দ ও উর্ধ্বধাবকের সাহায্যে বংশ বৃদ্ধি হয়।

কাসারি বা কেসুর-এর বিস্তৃতি:

ভারত থেকে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এবং চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও তাইওয়ান থেকে মাইক্রোনেশিয়া এবং বনিন দ্বীপপুঞ্জ ( জাপান)। এই প্রজাতিটি বাংলাদেশের বৃহত্তর বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সমূহে প্রচুর জন্মে। দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোণা জেলায় সামান্য পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

এই গাছটি রৌদ্রে শুকিয়ে এর অন্যতম শিরা (rib) অপসারিত করে চ্যাপটা করে তা মাদুর, থলে, ঝুড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় (Kern, 1947)। কখনও এর স্ফীতকন্দ অনেকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে (Kunkel, 1984)। দেশের কোন কোন অঞ্চলে পশু খাদ্যরূপেও এর ব্যবহার প্রচলিত। ধানক্ষেতের এটি একটি বড় আগাছা, অল্প সময়ের মধ্যে সারা ক্ষেতে বিস্তার লাভ করে।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ১১ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাসুর বা কাসারি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কাসুর বা কাসারি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

তথ্যসূত্র:

১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ১৭২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Gordon Leppig & Andrea J. Pickart

Leave a Comment

error: Content is protected !!