মরিশাস ঘাস সমভূমি ও অরণ্যে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

মরিশাস ঘাস

বৈজ্ঞানিক নাম: Apluda mutica L., Sp. Pl. ed. 1: 82 (1753). সমনাম: Apluda aristata L. (1756), Apluda geniculata Roxb. (1820), Apluda communis Nees (1843). ইংরেজী নাম:  Mauritian Grass স্থানীয় নাম: মরিশাস ঘাস।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Monocots. বর্গ: Poales. পরিবার: Poaceae. গণ: Apluda, প্রজাতি: Apluda mutica.

ভূমিকা: মরিশাস ঘাস (বৈজ্ঞানিক নাম: Apluda mutica) হচ্ছে এশিয়ার ভেষজ উদ্ভিদ। এর পাতা, মূলে নানা ভেষজ গুণ আছে। এছাড়াও গবাদি পশু তৃণ হিসাবে খায়।

মরিশাস ঘাস-এর বর্ণনা:

কণ্টকরোহিনী, বর্ষজীবী বা বহুবর্ষজীবী তৃণ, কান্ড ৫০-২০০ সেমি, শায়িত বা খাড়া, নিচের পর্বমধ্য থেকে মূল জন্মে, পর্বমধ্য রোমশবিহীন।

পত্র ফলক উপবৃত্তাকার-ভল্লাকার বা রৈখিক-ভল্লাকার, চ্যাপ্টা, ৫-২৫ x ০.২-১.০ সেমি, সরু হয়ে মূলীয় অংশ বৃন্তরূপে পরিণত, রোমশ বিহীন বা অতিরোমশ, অনুফলক ঝিল্লিযুক্ত, ১-৩ মিমি লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস একল রেসিম বা ছদ্ম পেনিকেল, চমসা দ্বারা শক্তভাবে আটকানো, ৫-৫০ সেমি, মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন, চমসা প্রশস্ত উপবৃত্তাকার বা ডিম্বাকার, ৩-৮ x ১-৪ মিমি, দীর্ঘাগ্র বা লেজবিশিষ্ট, একাধিক শিরাল, প্রান্ত স্বচ্ছ;

ফুলের রং বেগুনি লাল বা সবুজ, ১টি অবৃন্তক ও ২টি সবৃন্তক (একটি বন্ধ্যা এবং অপরটি উর্বর) স্পাইকলেট নিয়ে রেসিম গঠিত;

বৃন্ত চ্যাপ্টা, প্রশস্ত, বৃন্ত নিচের গ্লুমসহ অবৃন্তক স্পাইকলেটের চতুর্দিকে একটি ত্রিকোণাকার বাক্স গঠন করে।

অবৃন্তক স্পাইকলেট ২-পুষ্পবিশিষ্ট, ২-৬ মিমি লম্বা, পার্শ্বীয়ভাবে চাপা, স্থূলা, সবৃন্তক স্পাইকলেট প্রশস্ত ভল্লাকার, ৩-৬ × ১.০-১.৫ মিমি লম্বা;

বৃন্ত সরু দীর্ঘায়ত, ২-৪ মিমি লম্বা, নিচের গ্লুম উপবৃত্তাকার-ভল্লাকার, ৩-৮ x ১-২ মিমি, চর্মবৎ, ৯-১৫ শিরাল, পৃষ্ঠ আড়াআড়ি উত্তল, ২টি খাঁজযুক্ত, শীর্ষাংশ সরু পক্ষল, ২ দন্ডযুক্ত, ওপরের গ্লুম নৌকাকৃতি, ৩-৬ x ১৩ মিমি, ঠোটযুক্ত;

পেপারতুল্য, অস্পষ্ট ৫-১১ শিরাল, শূকবিহীন, খাঁজ সিলিয়াযুক্ত বা মসৃণ। নিচের পুষ্পিকা পুরুষ, ওপরের পুষ্পিকা উভলিঙ্গ।

আরো পড়ুন:  মচকুন্দ গাছের ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা

নিচের লেমা দীর্ঘায়ত-ভল্লাকার, ৩-৫ x ০.৫-১.০ মিমি, স্বচ্ছ, ৩-৫ শিরাল, ওপরের লেমা খাঁজযুক্ত, স্বচ্ছ, ৩-শিরাল, শূক ৩-১৫ মিমি লম্বা, রোমশবিহীন, স্তম্ভ ৩-৬ মিমি, বাদামী।

পেলিয়া ডিম্বাকার, সূক্ষ্মাঘ, ১.৫-২.৫ x ০.৫-১.০ মিমি, ২টি খাঁজযুক্ত, ২-শিরাল, লডিকিউল বিডিম্বাকার, ০.৩-০.৫ মিমি, কর্তিতা।

পুংকেশর ৩টি, পরাগধানী ১-৪ মিমি লম্বা, গৌর বর্ণযুক্ত, প্রান্ত লালাভ। গর্ভাশয় দীর্ঘায়ত, ০.৫-১.০ মিমি, গর্ভদন্ড ১-২ মিমি, গর্ভমুন্ড ১.৫-৩.০ মিমি, লাল, পক্ষল।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২০, ৪০ (Fedorov, 1969) ।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

এই ঘাস পাহাড়ের উন্মুক্ত ঢাল, জলাশয়ের তীরবর্তী অঞ্চল, সমভূমির গুল্ম অরণ্য, সাধারণত ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দকারী। ফুল ও ফল ধারণ হয় জুলাই-নভেম্বর। বীজে দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।

মরিশাস ঘাস-এর বিস্তৃতি:

ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া। এই প্রজাতিটি বাংলাদেশের সর্বত্রই অল্পবিস্তর জন্মিতে দেখা যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: তরুণ অবস্থায় এই তৃণ মহিষের খাদ্যরূপে উপকারী।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু আদিবাসী এই উদ্ভিদটিকে নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করে থাকে।

ভারতের মুন্ধা আদিবাসী সম্প্রদায় ছত্রাকজনিত মুখের ঘা নিরাময়ের জন্য এই উদ্ভিদ ব্যবহার করে।

মরিশাস ঘাস-এর অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মরিশাস ঘাস প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে মরিশাস ঘাস সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এস নাসিরউদ্দিন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১২, পৃষ্ঠা ১৯৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!