বড় নল বা গাবা নল ভেষজ গুণ সম্পন্ন এশিয়ার তৃণ

তৃণ

বড় নল বা গাবা নল

বৈজ্ঞানিক নাম: Arundo donax L., Sp. Pl. ed. 1: 81 (1753). সমনাম: Arundo sativa Lark. (1778), Arundo bifaria Retz. (1786), Arundo bengalensis Retz. (1799), Arundo longifolia Salisb. ex Hook. f. (1896), Arundo glaaca Bubani (1901). ইংরেজী নাম: Giant Reed. স্থানীয় নাম: অর্জুন বচুরি, বড় নল, গাবা নল, নল।

ভূমিকা: বড় নল বা গাবা নল (বৈজ্ঞানিক নাম: Arundo donax, ইংরেজী নাম: Giant Reed.) হচ্ছে আরুনডো গণের তৃণ প্রজাতি। এটি একধরনের ভেষজ ঘাস। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এটি প্রচুর জন্মে।

বড় নল বা গাবা নল-এর বর্ণনা:

গ্রন্থিক যুক্ত বহুবর্ষজীবী তৃণ, কান্ড ২ থেকে ৬ মিটার লম্বা, গ্রন্তিক কাষ্ঠল, মোটা, গ্রন্থিযুক্ত। পত্র ফলক রোমশবিহীন, রৈখিক-ভল্লাকার, ৩০-৭০ x ২.৫-৫.০ সেমি, প্রশস্ত, চ্যাপ্টা, মোটা, গোড়া তাম্বুলাকার বা গোলাকার, অনুকলক ১ মিমি লম্বা, ঝিল্লিযুক্ত, কুঞ্চিত, আবরণ গোলাকার, রোমশবিহীন। পেনিকেল বৃহৎ, ঘন, প্রভুত শাখান্বিত, ৩০-৬০ x ৫-৮(-১০) সেমি, শাখা তির্যক আরোহী, রোমশবিহীন বা রেশমি রোমশ।

স্পাইকলেট ২ থেকে ৪টি পুষ্প বিশিষ্ট, সব উর্বর বা উপরের পুষ্প হ্রাসপ্রাপ্ত, উপবৃত্তাকার-ভল্লাকার বা ভল্লাকার, ১০-১৫ মিমি লম্বা। গ্লুম প্রায় সমান, ভল্লাকার, ৮-১৩ মিমি লম্বা, দীর্ঘা, কাগজবৎ, ৩-৫ শিরাল, নিচের গ্লুম উপরের ঘুম অপেক্ষা খাটো। লেমা ভল্লাকার, (৬) ৮-১৬ x ১-২ মিমি, ৫-৯ শিরাল, দ্বিখন্ডিত, ৫-১০ মিমি লম্বা, ঘন কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত, ৬-৯ মিমি লম্বা।

আরো পড়ুন: বড় নল বা মহানল ঘাসের ভেষজ গুণ ও প্রয়োগবিধি

পেলিয়া উপবৃত্তাকার বা আয়তাকার-ভল্লাকার, সামান্য খাঁজযুক্ত, ৩-৫ x ১.০-১.৫ মিমি, ২টি কিল ও ২টি শিরাযুক্ত। পুংকেশর ৩টি, পরাগধানী ১-২ মিমি লম্বা। গর্ভাশয় আয়তাকার, ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, গর্ভদণ্ড ১-২ মিমি লম্বা, গর্ভমুন্ড ১-২ মিমি লম্বা। ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২০ = ৬০, ১০০, ১১০ (Fedorov, 1969)।

চাষাবাদ: গভীর গিরিখাত, পার্বত্যাঞ্চলের স্যাতসেঁতে ভূখন্ড, শুষ্কাঞ্চলে ভাল জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ জুন থেকে ডিসেম্বর মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ ও গ্রন্থিকন্দে থেকে।

আরো পড়ুন:  বিদ্যাপাতা বা কালীঝাঁট অপুষ্পক ভেষজ ফার্ন

বিস্তৃতি: উত্তর আফ্রিকা, ট্রপিক্যাল এশিয়া এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, নিউওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন দেশে প্রবর্তিত। বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে ।

বড় নল বা গাবা নল-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

কচি পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হয়। ইহার সাহায্যে মাদুর, ট্রে, ঝুড়ি, ডালা, সাজি ইত্যাদি তৈরি করা হয়। রোমানরা এর দ্বারা কলম তৈরী করে। এর দ্বারা কাগজও তৈরী হয়। বাহারি উদ্ভিদরূপেও এটি লাগানো হয়। বায়ু দ্বারা ভূমি ক্ষয়রোধে টেক্সাসে এই গাছ রোপন করা হয় (Bor, 1960)।

বড় নল বা গাবা নল-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

যক্ষ্মা রোগ নিরাময়ে চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায় এই গাছ ভেষজরূপে ব্যবহার করে থাকে (Uddin, 2006)। রজস্রাব নিয়মিতকরণের জন্য। ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায় মূলের ক্বাথ ও মরিচ একত্রে গ্রহণ করে থাকে (Pal and Jain, 1998)।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বড় নল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বড় নল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।  

তথ্যসূত্র:

১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৫২-৩৫৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Bouba at French Wikipedia

Leave a Comment

error: Content is protected !!