কাঁটা বাঁশ গ্রীষ্মাঞ্চলের বহুল ব্যবহৃত উপকারি অর্থনৈতিক তৃণ

তৃণ

কাঁটা বাঁশ

বৈজ্ঞানিক নাম: Bambusa bambos (L.) সমনাম: alaltat Arundo bambos L. (1753), Bambos arundinacea Retz. (1789), Bambusa arundinacea (Retz.) Willd. (1797), Bambusa orientalis Nees ex Munro (1868), Bambusa arundinacea (Retz.) Willd. var. orientalis (Nees ex Munro) Camus (1913). Beasts anta: Spiny Bamboo, Thorny Bamboo. স্থানীয় নাম: বন বাঁশ, কান্তা বাঁশ, কেটুয়া বাঁশ। ইংরেজি নাম: giant thorny bamboo, Indian thorny bamboo, spiny bamboo, or thorny bamboo.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Monocots অবিন্যাসিত: Commelinids বর্গ: Poales পরিবার: Poaceae গণ: Bambusa প্রজাতি: Bambusa bambos.

ভূমিকা: কাঁটা বাঁশ বা বন বাঁশ, কান্তা বাঁশ, কেটুয়া বাঁশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Bambusa bambos, ইংরেজি নাম: giant thorny bamboo, Indian thorny bamboo, spiny bamboo, or thorny bamboo)  পোয়াসি পরিবারের Bambusa গণের তৃণ। সকল পরিবেশে জন্মাতে পারে।

বর্ণনা: ঘন গুচ্ছাকার, যুক্তাক্ষ বাঁশ। তরুণ বিটপ গাঢ় বেগুনি লাল, স্বল্প সংখ্যক সাদা রেখা যুক্ত, রোমশ বিহীন, ফলক ছাড়া, শীর্ষ ভোঁতা, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত তরুণ বিটপের প্রান্ত কালচে থেকে হলুদাভ এবং সিলিয়া সহকারে কর্ণসদৃশ অভিক্ষেপ যুক্ত। কান্ড ফ্যাকাশে বা গাঢ় সবুজ, ১০-৩০ মিটার উঁচু, ব্যাস ২.৫-৯.০ সেমি, গোঁড়ার দিকের পঞ্চম থেকে অষ্টম পর্ব মধ্য সর্বপেক্ষা দীর্ঘ, দীর্ঘতম পর্ব মধ্য ১৫ থেকে ৩০ সেমি, খাঁজযুক্ত, তরুণ কান্ডের একপার্শ্ব চ্যাপ্টা, কান্ডের প্রাচীর অতিশয় পুরু, নালিকা গহ্বর ছোট, বা কান্ডের উপরের অংশ বা শাখার দূরের অংশ কঠিন, পর্বের ব্যাস পর্ব মধ্যর ব্যাস অপেক্ষা দীর্ঘতর, পর্বরেখা একটি, সামান্য অভ্যন্তরে প্রবেশকৃত, ফলকের আঁশের অবশিষ্টাংশ পর্বরেখার উপর বিদ্যমান, তরুণ কান্ডের পর্বের ওপরের অংশ সাদা বা বাদামী রোমশ। পর্বের ওপরে পর্বরেখা উপস্থিত।

শাখা মুকুল ডিম্বাকৃতি-ত্রিকোনাকার, মূলীয় অংশ প্রশস্ত, শীর্ষ প্রসারিত, ৩ সেমি লম্বা ও ৩-৪ সেমি প্রশস্ত, প্রান্ত ২ টি পার্শ্বীয় খাঁজ যুক্ত, খাঁজে সিলিয়া বিদ্যমান। কান্ড সর্বত্র শাখায়িত, মধ্যের শাখা প্রকট, কাঁটাযুক্ত, কাঁটা বক্র, প্রায় ৪.৫ সেমি লম্বা, প্রতি শাখার পর্বে ৩ টি কাটা বিদ্যমান। কান্ড আবরণ গাঢ় তাম্রবর্ণের লম্বা দাগযুক্ত, চাপা, রসালো ও চর্মবৎ, আসল আবরণ বেলনাকারে প্রসারিত, প্রায় ২৫ সেমি লম্বা, প্রান্তকুঞ্চিত, অষ্কীয় তল রোমশ বিহীন, পৃষ্ঠতল রোমশবিহীন থেকে রোমশ, মূলীয় অংশ ঘন কালচে রোমযুক্ত, সিলিয়া উপস্থিত, কর্ণসদৃশ। অভিক্ষেপ অস্পষ্ট বা স্পষ্ট। ফলক খাড়া, ৪-১২ সেমি, মূলীয় অংশ ৬ সেমি প্রশস্ত, অঙ্কীয় পৃষ্ঠ কালো বা কালচে  বাদামী ঘন রোমাবৃত, বাহ্যতঃ পশমি সদৃশ। পত্র ৮-১০ টি। ফলকের পরিপূরক, পত্রাবরণ সামান্য খাঁজ ও কর্ণ সদৃশ। রোমশ অভিক্ষেপ যুক্ত, বৃন্ত অতিশয় খাটো, ফলক ভল্লাকার থেকে রৈখিক, ৬-২২ X ১.০-৩.৫ সেমি, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র,। উভয় পৃষ্ঠ রোমশ বিহীন, গৌণ শিরা ৪-৬ জোড়া, প্রগৌণ। শিরা ৫-৭ টি, গৌণ শিরার প্রতিটি জোড়ার মধ্যবর্তী স্থানে প্রসারিত।

আরো পড়ুন:  নয়নতারা এপোসিনাসি পরিবারের একটি আলংকারিক ফুল

পুষ্পবাহী শাখা প্রতিটি পর্বে অনেক, ২৫ সেমি  পর্যন্ত লম্বা (কখনও ৬০ সেমি) প্রথমত পুষ্পবাহী শাখা পত্র। বহুল, পরবর্তীতে পত্রবিহীন এবং ছদ্ম স্পাইকলেট যুক্ত, স্পাইকলেট একান্তর, গুচ্ছাকার। ছদ্ম স্পাইকলেট অবৃন্তক, সোপপত্রিক, মঞ্জরীপত্র আশুপাতি, প্রায় ২.৫ সেমি লম্বা, চ্যাপ্টা, রোমশবিহীন শুধু পেলিয়ার কিনারা সিলিয়া যুক্ত। পুষ্পিকা ৫-৭ টি, ওপরের পুষ্পিকা দীর্ঘতর, নিচের । পুষ্পিকা উর্বর, ওপরের পুষ্পিকা লুপ্ত, প্রান্তীয় পুষ্পিকা। অসম্পূর্ণ, মঞ্জরী অক্ষ বিকোণাকার, কখনও সিলিয়া যুক্ত। লেমা ৮ মিমি, ডিম্বাকৃতি-ভল্লাকার, তীক্ষ্ণাগ্র, কখনও কিনারা  সিলিয়া যুক্ত। পেলিয়া ৯ মিমি লম্বা, অর্ধসূক্ষ্মাগ্র দুই খাজের মধ্যবর্তী অংশ ২-৪ শিরাল। লডিকিউল ১.৫ মিমি, সূক্ষ্ম খন্ডিত। পুংকেশর বহির্মুখী, পরাগধানী ৫ মিমি, সুলাগ্র, কখনও তীক্ষ্ণ কুর্চ যুক্ত। গর্ভাশয় ১ মিমি লম্বা, উপবৃত্তাকার দীর্ঘায়ত গর্ভদন্ড খাটো, গর্ভমুন্ড ৩ টি, পক্ষল। ফল ক্যারিঅপসিস, ৪ মিমি লম্বা, দীর্ঘায়ত, প্রান্তে ক্ষুদ্র ঠোট যুক্ত।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n =৭০, ৭২ (Varmah and Bahadur, 1980)।

আবাসস্থল:  সমতল ও পাহাড়ের পাললিক মাটি। গ্রন্থিক, কান্ডকলম ও বীজ দ্বারা বংশ বৃদ্ধি। ফুল ও ফল ধারণ এপ্রিল থেকে মার্চ মাস।

বিস্তৃতি: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আদি নিবাস। বর্তমানে পৃথিবীর উষ্ণমন্ডলীয় দেশ সমূহে চাষাবাদ করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় জন্মে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: কান্ড সুদৃঢ় ও টেকসই। বাড়িঘর নির্মান কাজে ব্যবহার য্যোগ্য।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাঁটা বাঁশ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংকটের কোনো কারণ নেই এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত (lc) হিসেবে বিবেচিত। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রজাতিটি গ্রামাঞ্চলে এই বাঁশের চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা প্রযোজন।[৩]

প্রজাতিটির সংরক্ষণে গৃহীত পদক্ষেপ: চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ফরেষ্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এবং মিরপুর, ঢাকা এর ন্যাশনাল বোটানিক গার্ডেনে জার্মপ্লাজম রোপন করার মাধ্যমে বংশ বিস্তারের চেষ্টা চলছে।

আরো পড়ুন:  আখ বা ইক্ষু নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের জনপ্রিয় ও অর্থকরী ফসল

তথ্যসূত্র:

১. এম কে আলম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৬০-১৬১।আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!