পরিচিতি: মসুর শীতকালে তোলার ফসল। কাতিক ও অগ্রহায়ণ মাসে ক্ষেতে বীজ ছড়ানো হয়। ক্ষদ্র ক্ষুপ বা গুল্ম জাতীয় গাছ। মসুর এক থেকে দেড় ফুটের বেশি উচু হয় না। গাছগুলি দেখতে অনেকটা ছোলা গাছের মতো হলেও এর কান্ড নরম, ছোট ছোট শাখায় পাখনার মতো জোড়া পাতা থাকে, পাতার আগা বা অগ্রভাগ সরু হয় সুতার মতো। একই বোঁটায় জোড়া ফুল হয় এবং তাদের রং সাদা বর্ণের; আরও ২ রকম রঙের ফুলও দেখা যায়। একটি বেগুনি এবং অন্য একটি গোলাপী ; তারপর হয় ছোট ছোট চ্যাপ্টা শুঁটি, তার মধ্যে ধূসর রঙের দুটি করে চ্যাপ্টা দানা থাকে। এই মসুর কলাইয়ের খোসার গায়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সরু দাগ থাকে।
মসুর ডালের কুড়িটি ঔষধি গুণাগুণ
ছোট ও বড় দুই রকমের মসুর এদেশে হতে দেখা যায়। এদের বৈশিষ্ট্য হলো এর কোনটাই ওজনে বা আকারে ছোট বড় হয় না, অর্থাৎ সবেরই একই ওজন আর একই আকারের হবে। চৈত্র মাসে মসুর ক্ষেত থেকে খামারে নিয়ে এসে তাকে ঝাড়াই করা হয়। চাষ হয় ভারতের সর্বত্রেই, তবে বিশেষ করে মাদ্রাজে, বিহারে, উত্তর ও মধ্যপ্রদেশে। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব অঞ্চলেই অল্প বিস্তর চাষ হয়। সব দেশেই এর কচি গাছগুলি শাক হিসেবে রান্না করে খেয়ে থাকেন।
এ সম্পর্কে আরও একটা বক্তব্য আছে পাশচাত্য ঐতিহাসিক De Candolle লিখেছেন যে, এটি প্রাক ঐতিহাসিক যুগে পশ্চিম এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে, গ্রীসে, ইটালীতে প্রথমে এর চাষ ছিল; পরে সেখান থেকে মিশরে এটির চাষের প্রচলন হয়; তার বহুদিন পরে ইউরোপ ও ভারতবর্ষে এই মসুরে ডালের চাষের প্রচলন হয়। তাঁর মতে প্রাক আর্য সভ্যতার যুগে ভারতে এটির প্রচলন ছিল না, অবশ্য বৈদিক তথ্যে এটির উল্লেখ দেখা যাচ্ছে না; তবে অথর্ববেদোত্তর উপবর্হণ সংহিতায় এটির উল্লেখ আছে। এই সংহিতায় প্রাক আর্য গোষ্ঠীর বহু ভেষজ সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে, সুতরাং এটিও যে সে সভ্যতার যাকে বলা যায় নগর সভ্যতার জনকল্যাণ সভ্যতার যুগে প্রচলন ছিল না।[১]
বিস্তৃতি: মসুরের আদি নিবাস গ্রিক ও মিশর। এছাড়া ভারতের প্রায় সব প্রদেশেই জন্মে থাকে। বাংলাদেশে এটি একটি জনপ্রিয় খাবার। তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই এই ডাল উৎপন্ন করা হয়।
চাষ পদ্ধতি: মসুর রবি শস্য। শীতকালীন ফসল হওয়ায় এই ডাল অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ক্ষেতে বীজ ছড়ান হয়। গাছ আধা মিটারের বেশি লম্বা হয় না। এই গণে প্রজাতির সংখ্যা ১০।[২]
ব্যবহার্য অংশ: ঔষধ হিসাবে বীজ বা ডাল খাওয়া হয়। এছাড়াও মসুরের রয়েছে অনেকগুলো ভেষজ গুণ।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা,২৫৫।
২. শেখ সাদী; উদ্ভিদকোষ, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা, ৩১৪।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Mytinytank
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।