বৈজ্ঞানিক নাম: Tridax procumbens L.
সাধারণ নাম: coatbuttons বা tridax daisy.
বাংলা নাম: ত্রিধারা
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Angiosperms
অবিন্যাসিত: Edicots
অবিন্যাসিত: Asterids
বর্গ: Asterales
পরিবার: Asteraceae
গণ: Tridax
প্রজাতি: Tridax procumbens L.
বিবরণ: ত্রিধারা ডেইজী পরিবারভূক্ত ট্রিডাক্স গণের এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি ক্ষতিকারক এবং বিষাক্ত উদ্ভিদ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। যুক্তরাস্ট্রের নয়টি প্রদেশে এটি ক্ষতিকারক উদ্ভিদ হিসেবে তালিকাভূক্ত। এই প্রজাতির টেক্সোনমিক অবস্থা সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যা সর্বজনীনভাবে সারা বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত। procumbens বলতে prostrate (শায়িত) বোঝায় ও ডালপালার অভ্যাস লতানো (trailing) এবং Tridax বলতে এই ফুলের পাপড়ীতে তিনটি খাঁজ বা লোব কে বোঝায় (Holm et al)। বাংলায় বলতে গেলে “শায়িত লতানো তিন লোব বিশিস্ট বা খাঁজ কাটা ফুল”। বাংলায় “ত্রিধারা” নামকরণ করার কারন হলো এই উদ্ভিদের পাপড়ীতে তিনটি লোব বিশিস্ট খাঁজ কাটা আর এর উপর ভিত্তি করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানি প্রফেসর ড: কাজী আব্দুল ফাত্তাহ ১৯৭০ সালে এর বাংলা নামকরন করেন “ত্রিধারা” সেই থেকে বাংলা ভাষায় এটি পরিচিতি লাভ করে ত্রিধারা হিসেবে। ইংরেজিতে একে কোট বাটন নামকরন করা হয়েছে কারন এর প্রস্ফুটিত ফুল দেখতে কোটের বোতামের মত। আমার মতে এর ইংরেজি নামের চেয়ে বাংলা নামটি অধিকতর শ্রুতিমধুর ও বিজ্ঞান সম্মত হয়েছে।
এটি মজবুত প্রধান মূল বিশিস্ট পেরিনিয়াল তৃণ যার শাখা প্রশাখা লতানো বেস থেকে অধিরোহী। এদের কান্ড নলাকার , প্রায়ই বেগুনী হয় ও সুস্পষ্ট দীর্ঘ এবং সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত কান্ডগুলি সাদা হয়। এই লতানে কান্ড প্রায় ৭৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। সরল পত্র বিশিস্ট যার পাতা ০.৫-৫ সেমি লম্বা হয় ও ডিম্বাকার- উপবৃত্তাকার স্থূলভাবে করাতের মতো খাঁজ কাঁটা বা দন্তবত বা lobed. ফুল প্রায় ২ সেমি লম্বা হয় ও ১০-৩০ সেমি লম্বা বৃন্ত থাকে পাপড়ী সাদা মাঝখানে হলুদ। ফল খুব ছোট প্রতিটি দীর্ঘ পালকবৎ pappus লোমগুলোর একটি মাথা থাকে।
ত্রিধারা গাছে ডেইজী ফুলের মত মধ্যস্থলে হলুদ বর্ণ যুক্ত ফুল ফোটে। এদের প্রতিটি পাপড়িতে বিদ্যমান তিনটি করে খাঁজ থাকে। পথের পাশে, সড়ক দ্বীপে, ঘরের পাশে,পতিত ভুমিতে,পুরানো দেয়াল গাত্রে এদের বসবাস। যদিও কেউ এদের রোপন করে না কিন্তু প্রায় সারা বছর ক্লান্তিহীন আমাদের জন্য পুস্পায়ন ঘটাচ্ছে ফল উৎপাদন করছে আবার নতুন বংশধরের জন্ম দিচ্ছে। এই উদ্ভিদকে প্রজাপতি ও মৌমাছিরা পুস্পায়নের সময় ঘিরে রাখে।
বিস্তৃতি: আদিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি বিশ্বব্যাপী ক্রান্তীয়, উপক্রান্তীয় এবং মৃদু তাপমাত্রাযুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়।
এই উদ্ভিদের এরিয়েল অংশ থেকে নতুন ফ্লাভোনয়েড (flavonoid) procumbenetin আলাদা করা হয়েছে যা হলো dimethoxy-5, 4-pentahydroxyflavone, gluco-pyranoside এজন্য ত্রিধারাকে Flavonoids Plant বলা হয়। ট্রেডিশনাল মেডিসিন হিসেবে এন্টিকুয়াগুলেন্ট (anticoagulant), চুলের ভিটামিন(hair tonic), ছত্রাকনাশক (antifungal), ডায়রিয়া (diarrhoea), ডিসেন্ট্রি (dysentery) ও ক্ষত সারাতে (wound healing) ব্যবহার করা হয়।
সম্প্রতি একটি গবেষনায় এটা প্রমানিত যে Tridax procumbens ও Allium sativum এর নির্যাস একত্রে cutaneous leishmaniasis ও Leishmania mexicana infection এর টিটমেন্টে চমৎকার ফলাফল পাওয়া যায় (Gamboa-Leon2014)। এছাড়াও Tridax procumbens নির্যাস ও পেট্রোলিয়াম ইথার একত্রে ব্যবহার করলে পুরুষের চুলের বৃদ্ধি তরান্মিত করে। এই দুইএর মিশ্রণ alopecia areata তে ব্যবহারে চমকপ্রদ ফলাফল পাওয়া যায়। (Phatak et al 1991)
সতর্কীকরণ: প্রবন্ধে উল্লেখিত ঔষধি গুনাগুন কারো জন্য ব্যবস্থাপত্র নহে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।