বথুয়া, বেতো বা বাসতুগ শাকের ঔষধি গুণাগুণ

বথুয়া, বেতো বা বাসতুগ শাক মূলত আগাছ হিসাবে জন্মে থাকে গম, ধানের জমিতে। এটি শীত ঋতুতে জনপ্রিয় শাক। এর বৈজ্ঞানিক নাম Chenopodium album ও পরিবার maranthaceae.

ভেষজ গুণাগুণ

১. বেতোশাকের রস ১ চা-চামচ এবং টাটকা ঘোল আধ পোয়া মিশিয়ে খেলে হিক্কা বন্ধ হয়।

২.  বেতোশাকের রস আধ পোয়া, তিল তৈল তিন পোয়া ও জল চার সের, তৈল পাকের রীতিতে পাক করে সেই তৈল ব্যবহার করলে মাথার খুসকী, উকুন, চুলের গোড়ার চাপড়া ঘা কয়েক দিনেই সেরে যায়।

বথুয়া রোগ-প্রতিকারের উৎস

১. বথুয়া শাকে যেমন ক্ষারধমিত্ব আছে (যার জন্য এর আর একটি নাম ‘ক্ষারদলা’), তেমনি এর মধ্যে আছে উদ্বায়ি (volatile) তৈল। এর ফলে মলবাহক অন্ত্র ও স্রোতপথকে সহজেই পরিষ্কার করে, মূত্রগ্রন্থির ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে এবং লিভারের ক্রিয়াগুলিকে শক্তিশালী করে।

২. রক্ত আমাশয়ে:  বেতোশাকের রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ অল্প গরম করে দুধ (মহিষের দুধ হলে ভাল হয়) মিশিয়ে খেলে অর্শের রক্তপড়া বন্ধ হয়।

৩. আমাশা রোগে:  বেতোশাক শুকিয়ে গুড়ো করে অল্প দই মিশিয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তবে তার সঙ্গে ডালিমের রস দিতে বলা হয়েছে চরকে।

৪. যাদের শুকনো কাসি থাকে (চলতি কথায় বলে বাতিকের কাসি,) সেক্ষেত্রে কিছুদিন শাক হিসেবে খেলে উপকার হয়।

৫. শোথে:  হাতে-পায়ে শোথ হলে প্রস্রাব পরিষ্কার করানোর জন্য বেতোশাক সিদ্ধ জল খেতে দিয়ে থাকেন এবং তার সঙ্গে ঐ শাক বেটে গরম করে প্রলেপ দিয়ে থাকেন প্রাচীন বৈদ্যেরা।

৬. যাঁদের আহারে রুচি নেই, তারা শাক হিসাবে এটা খেলে মুখে রুচি ফিরে আসবে।

৭. লিভারের যথাযোগ্য ক্রিয়া মৃদু হলে গৌণভাবে (Indirectly) অনেক রোগ উপস্থিত হয়ে থাকে, যেমন–অঙ্গরোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, গাত্রদাহ, আমবাত (Rheumatism) প্রভৃতি; সেক্ষেত্রে ঐটিকে শাকের মতো রান্না করে খাওয়া খুবই ভাল।

আরো পড়ুন:  ত্রিধারা গোটা দুনিয়ার ভেষজ আগাছা

৮। যাঁরা ছোট কিমির উপদ্রবে কষ্ট পান, সেক্ষেত্রে সকালে ২ থেকে ৩ চা চামচ রস অল্প গরম করে খেলে উপকার হয় অথবা শাক হিসাবে দুপুর বেলা খেতে হয়; মোট কথা যকৃন্দোষজনিত সর্বপ্রকার রোগের উপদ্রবে এটি বিশেষ কার্যকরী।

৯. অতিসারের (পাতলা দাস্ত) বেগ খুব অথচ অল্প অল্প মল নির্গত হয় এবং তাতে কুন্থও হয় প্রবল, তখন বেতেশাকের রস দই ও ডালিমের রসের সঙ্গে তিল তৈল যোগে পাক করে সেবন করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।

১০.  বেতোশাক তিল তৈল যোগে পাক করে লবণ যোগে খেলে উরু স্তম্ব আরাম হয়।

১১.  বেতোশাক ধারক, এটি প্লিহা ও পিত্তজনিত রোগে হিতকর।

১২. গাছ বিরেচক ও ক্রিমিনাশক।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Saponin. (b) Vitamin viz, carotene, vitamin-C. (c) Sterol viz., ascaridol (40-45%. (d) Inorganic salt viz., magnesium phosphate. (e) essential oil 0.03-0.04%

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,১৩-১৪।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: AnRo0002

Leave a Comment

error: Content is protected !!