ধনিয়া বা ধনে পাতার দশটি কার্যকরী ঔষধি ব্যবহার

ধনিয়া বা ধনে হচ্ছে এক ধরনের মসলা জাতীয় সবজি। এদের ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। নিম্নে সেগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। এটির প্রধান কাজ রসবহ ও রক্তবহ স্রোতে, পিত্তবিকারজনিত রোগগুলির উপর প্রধানভাবে কাজ করে।

ধনে বা ধনিয়া একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ

১. দেহে জ্বালা: দিনে বা রাতে শরীরের ভিতরে বা বাইরে জ্বালা অনুভব হয়, চোরা অম্বল হয়, সেক্ষেত্রে ধনিয়া ৫ থেকে ৬ গ্রাম এক কাপ গরম জলে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে খালিপেটে খেতে হবে। এর দ্বারা দাহ কমে যাবে। এটা কিন্তু মাঝে মাঝে খেতেই হবে; তবে চোরা অম্বলটা কি করে বন্ধ হয়, তার ব্যবস্থা করা সব প্রথম দরকার।

২. অতিসার: যে অতিসার পিত্তবিকারজনিত কারণে হয়, এর লক্ষণ হলও অল্প প্রস্রাব ও মলটা খুবই তরল হবে, মলত্যাগ করার সময় মলদ্বার জ্বালা করবে, আর এই মলের রং প্রতিবারেই যেন বদলে যায় কখনও ঘাসের রং, কখনও হলুদ, কখনও বা পচা পাতার রং ; এক্ষেত্রে ২৫ গ্রাম ধনিয়া বেটে নিয়ে ২৫ গ্রাম গাওয়া ঘি, জল ১১৪ মিলিলিটার অর্থাৎ প্রায় আধ পোয়া একসঙ্গে একটি পাত্রে পাক করে, জলটা মরে গেলে কিন্তু ভাঁজা যাবে না। ওটা নামিয়ে, ছেঁকে, সকালে ও বিকালে দুবারে অর্ধেকটা আর বাকী অর্ধেকটা পরের দিন দুবারে খেতে হবে, এর দ্বারা ঐ পিত্তবিকারের অতিসার সেরে যাবে।

৩. শূল ব্যথা: এই প্রয়োগটি আমাজীর্ণর জন্য শূল ব্যথা। এ শূল কিন্তু সে শূল নয়, ডেকে শূলে যেসব ক্ষেত্রে আমরা নিয়ে আসি, এর প্রয়োগ সেখানেই। যেমন এক বাটি আমজারানো নিয়ে বসে লেগে যাওয়া, আধখানা কাঁঠালের শ্রাদ্ধ করা, বিষবোড়া টোকো পাকা আম ২ থেকে ৪ গন্ডা গোঁয়ারতমি করে খাওয়া এইসব অত্যাচারের পরিণতিতে আসে আমাজীর্ণ, সেই অপক্ক জিনিসগুলি পেটে ত্রিশুলের মতো খোঁচা মারতে থাকে। এই ক্ষেত্র, ধনিয়া ১o গ্রাম ও শুঠ অর্থাৎ আদা শকনো ৫ গ্রাম একটু থেঁতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, সেটা ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, এক ঘণ্টা অন্তর ৩ থেকে ৪ বারে খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  তেজপাতা রান্নাসহ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়

৪. শিশুদের কাসি ও দুধে শ্বাস: দেখা যায় কাসতে কাসতে শিশুর চোখমুখ লাল হয়ে যায়, মনে হয় যেন দম বন্ধ হয়ে গেল, এইরকম অবস্থায় ২ চা চামচ, আতপ চাল ১০ থেকে ১২ চা চামচ জলে ভিজিয়ে সেই জল ৭ থেকে ৮ চা চামচ নিয়ে, ঐ জলে আধা চা চামচ ধনে বেটে, ওটাকে ছেঁকে নিয়ে সেই জলটি আধ চা চামচ করে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর সমস্তদিন ধরে খাওয়ালে ঐ কাসিটা বন্ধ হয়ে যাবে।

৫. পিপাসা: বার বার পিপাসা লাগছে, এই পিপাসা লাগার কারণ অনেক রকম থাকতে পারে, যেমন, হাই ব্লাডপ্রেসার, খাদ্য ভোক্তা বেশি অথচ হজমের তত হয় না, হয়তো জ্বর আসছে অথবা নতুন জ্বর হয়েছে যতই জল খাচ্ছেন পিপাসা আর মিটছে না, কিংবা টায়ফয়েড পিছনে আসছে; এ সবের ক্ষেত্রে কিন্তু রসবহ স্রোতের যে পিত্ত বা অগ্নি, যাকে বর্তমানে বলা হয় ‘মেটাবলিজম’, সেটা স্বাভাবিক কাজে অপারগ হয়েছে; তাই এই পিপাসা হচ্ছে। এক্ষেত্রে শুধু ধনে দিলে চলবে না, এর সঙ্গে পলতার পাতা তিনটি এবং ঐ পলতার ডাঁটা (stem) ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি, ধনে এক চা চামচ, এগুলোকে একটু থেঁতো করে এক কাপ গরম জলে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ২ থেকে ৩ চা চামচ খেতে দিলে পিপাসার শান্তি হয়।

৬. বাতরক্তে: এই বাতরক্তের ক্ষেত্রে ধনে ও সাদা জীরা(Cuminum cyminum) যেটা আমরা তরকারিতে সর্বদা খাই; এই দুটা সমান পরিমাণে নিয়ে, পানি দিয়ে বেঁটে, ঐ দুটার দ্বিগুণ পরিমাণ গুড়ের সঙ্গে নারিকেল সন্দেশ যে রকমে করে সেই রকম পাক করে রাখতে হবে। সেটার পাক ঠিক হলো কিনা জানার উপায় সেই পাক করা জিনিসটি জলে ফেলে দিলে আর এলিয়ে যাবে না। সেই জিনিসটি প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্রাম করে জলসহ খেতে হবে। এর দ্বারা আপাতত উপশম তো হবেই; তবে দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা করতে হবে।

আরো পড়ুন:  কালোজিরা প্রয়োগের ১০টি রোগের ভেষজ চিকিৎসা

৭. নতুন জ্বরের পিপাসায়: ১০ থেকে ১২ গ্রাম ধনে পাতা একটু কুটে নিয়ে, ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে সমস্তদিন ৩ থেকে ৪ বারে ঐ জলটা খেতে দিতে হবে, এর দ্বারা জ্বরের তাপটা কমে যাবে এবং পিপাসারও নিবৃত্তি হবে।

৮. পেটে বায়ু: যাঁদের খাওয়ার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বাদে পেটে বায়ু জমিতে থাকে বিশেষ করে এই সমস্যা বর্ষাকালেই বেশি হতে দেখা যায়, আবার যেদিন আকাশে মেঘ হয়, সেদিন আর কথাই নেই অর্থাৎ ভুক্ত দ্রব্যটি যখন অন্ত্রে গিয়ে উপস্থিত হয়, তখনই সমুদ্রের নিম্নচাপের মতো বায়ুর সঞ্চার হতে থাকে; সেক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ গ্রাম ধনে থেঁতো করে এক গলাস গরম জলে রাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে, পরের দিন সকালের দিকে অর্ধেক ও দুপুরবেলা খাওয়ার ২ ঘণ্টা বাদে বাকী জলটা খেয়ে নিতে হবে; এর দ্বারা পেটে আর বায়ু হবে না। তবে কিছুদিন খেলে এটাতে স্থায়ী ফল পাওয়া যাবে। তরকারির স্থুলাংশ খাওয়া কমানো দরকার, তবে তরকারির ঝোলটা খেলে ক্ষতি নেই। এই খাওয়ার ব্যাপারেও সাবধান হতে হবে।

৯. পেট কামড়ানিতে: সে যে কোনো কারণেই হোক, ধনে আর যব সমান পরিমাণে নিয়ে জলে বেটে, পেটে প্রলেপ দিতে হবে। এর দ্বারা পেট কামড়ানির উপশম হবে।

১০. কেশপতন ও খুশকি দূরে: ২০০ গ্রাম খাঁটি তিলের তেল নিয়ে তার সঙ্গে ৭ থেকে ৮ চা চামচ ধনে যদি নতুন ধনে হলে ভাল হয়; একটু কুটে নিয়ে ঐ তেলে ভিজিয়ে ৭ থেকে ৮ দিন রেখে সেই তেল মাথায় মাখলে চুল ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে। এই তেলের পাত্রটি অনেকে সমস্তদিন রোদে রেখে দিলে তা থেকে তেলের একটা মিষ্টি গন্ধও হয়।

তবে খুব কঠিন অসুখে ভোগার পর অথবা সন্তান হওয়ার ৭ থেকে ৮ মাস বাদে চুল উঠতে শুরু করেছে, এইসব ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি চুল ওঠা বন্ধ করা যায় না; আর মানুষের বয়সের পরিণতিতে অর্থাৎ প্রৌঢ়কালে আস্তে আস্তে চুল ফাঁকা হওয়াটা শরীরের স্বভাবধর্ম, তবে যে হারে চুল উঠে যাচ্ছিল সেটা যাবে না।

আরো পড়ুন:  ঢেকিয়া শাক বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো জনপ্রিয় শাক

রাসায়নিক গঠন

(a) Essential oil, coriandrol, oxalic acid, calcium content, vitamin-C, carotene, fatty oil.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৮৫-১৮৭।

Leave a Comment

error: Content is protected !!