ভূমিকা: মুক্তাঝুরি (বৈজ্ঞানিক নাম: Acalypha indica ইংরেজী নাম: Indian Nettle) হচ্ছে ইউফরবিয়াসি পরিবারের একালিফা গণের একটি সপুষ্পক ছোট বীরুৎ।
অন্যান্য নাম:
এ উপমহাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া এর আদি নিবাস। এর বেশ কয়েকটি। তাৎপর্যপূর্ণ নাম আছে, যেমন- বিড়ালকানি; বিড়াল এ গাছ দেখলে পাতা খাবেই এবং তার পরই চিল্লাতে থাকে, সেজন্য এ নামকরণ। তেমনি, বিহার অঞ্চলে এর নাম বিল্লি লোটন সেখানে মুক্তাঝুরির ঝোপ দেখলেই বিড়াল দৌড়ে ঐ ঝোপে ঝাপিয়ে পড়বে, পাতা খাবে এবং কাদতেও থাকবে। এর হলদে-সবুজ রঙের পুষ্পমঞ্জরির জন্যই সম্ভবত এর নাম হরিৎমঞ্জরি।[১]
মুক্তাঝুরি-এর বর্ননা:
ছোট বীরুৎ, কদাচিৎ অর্ধগুল্ম । কান্ড স্বল্প বা ঘন রোমশ, সরল বা শাখায়িত, আরোহী কোণাকৃতি। পত্র লম্বা বৃন্ত যুক্ত, ২.৫-৫.০ সেমি লম্বা, ডিম্বাকার থেকে হীরকাকার। ডিম্বাকার, দম্ভর, পাদদেশ গোলাকার থেকে কীলকাকার, ৫-শিরাল। পুষ্প বিন্যাস স্পাইকেট, উভলিঙ্গ, অক্ষীয়, প্রায়। ১০ সেমি লম্বা, সাধারণত ৫ সেমি লম্বা। বৃত্যংশ ত্রিকোণাকৃতি ডিম্বাকার, ১ মিমি লম্বা, সিলিয়া যুক্ত। পুং পুষ্প অর্ধবৃন্তক, মুকুল গুটিকাকার।
স্ত্রী পুষ্প পুষ্প মঞ্জরীদন্ডের অক্ষে শিথিল ভাবে বিন্যস্ত, মঞ্জরীপত্র বৃহৎ, এক পুষ্প যুক্ত, প্রায় ৩ X ১৪ মিমি, দম্ভর, রোমশ বিহীন, দন্ত স্থূলা, গর্ভাশয় অর্ধ-ত্রিখন্ডিত, ০.৫ মিমি আড়াআড়ি, গুটিকাযুক্ত, রোমশ, গর্ভদন্ড ২ মিমি লম্বা, ঝালর সদৃশ, সাদা।
ফলের বোঁটা ফল অপেক্ষা ছোট ও সবুজ; ফুল ক্ষুদ্র তিন অংশে বিভক্ত, অতি সূক্ষ্মভাবে খাঁজকাটা; বীজকোষ ছোট একবীজী, বীজ গোলাকৃতি, হালকা খয়েরী, তীক্ষ্ণ ও মসৃণ। ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ১৪, ২০ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ:
এই উদ্ভিদ পতিত, স্যাঁতসেঁতে, ছায়াযুক্ত জমি এবং নদীর তীরবর্তী অঞ্চল জন্মে থাকে। কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। এর বীজে বংশ বিস্তার। ফুল ও ফল ধারণ: ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে এর ফুল ধরে ও ফল হয়।
বিস্তৃতি: ভারতের গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চল, শ্রীলংকা, আফ্রিকা ও ফিলিপাইন। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: উদ্ভিটি কাশি নিরাময়কারী, মূত্র বর্ধক, রেচক ও বমনোদ্রেককারী। পাতা ও কান্ডের টাটকা রস গ্রন্থিবাত ও খোস পাঁচড়া রোগে উপকারী। শুকনো পাতার চূর্ণ শয্যা ক্ষত রোগে ব্যবহার করা হয় (Ghani, 2003)।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মুক্তাঝুরি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে মুক্তাঝুরি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[২]
তথ্যসূত্র:
১. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার), দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা, ৪২-৪৩।
২. বুশরা খান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৯০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Yercaud-elango
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।