ভুমিকা: আনারস (বৈজ্ঞানিক নাম: Ananas comosus, ইংরেজি নাম: পাইন এ্যাপল)হচ্ছে সপুষ্পক বিরুৎ। এটি মূলত বিরুৎ বিশিষ্ট্য। এই গণের প্রজাতিটির ফল রসালো।
আনারস-এর বর্ণনা:
আনারস বর্ষজীবী বীরুৎ। কান্ড খাটো, অশাখ, পুরু ও মাংসল। পত্র লম্বা, ৫০-৭৫ x ৩-৬ সেমি, সরু, বল্লমাকার, পত্রকন্টকিত, তন্তুময়, সমান্তরাল শিরা বিন্যাস, সূক্ষাগ্র, গুচ্ছাকারে কান্ডে সন্নিবেশিত।
পুষ্প বিন্যাস শীর্ষীয়, সংক্ষেপিত মঞ্জরী, পুষ্প গুচ্ছাকার, কোণাকৃতি, নীল বর্ণের, মঞ্জরীপত্রের অক্ষে জন্মে। পুষ্প উভলিঙ্গ, সমাঙ্গ। বৃত্যংশ ৩ টি, প্রশস্ত দীর্ঘাগ্র, মুকুল বিন্যাস প্রান্ত আচ্ছাদনের কাছাকাছি, গর্ভশয়ের উপরে মুক্ত।
পাপড়ি ৩ টি, ঋজু, পুংদন্ডের নিচে সামান্য যুক্ত, কখনও ২ টি ক্ষুদ্র মূলীয় শল্ক বিদ্যমান। পুংকেশর ৬টি, ৩ টি পাপড়ির সাথে একান্তর, পুংদন্ড মুক্ত, অপর ৩ টি পাপড়ির প্রতিমুখ এবং পাপড়ির নিম্বাংশে যুক্ত, পরাগধানী রৈখিক।
গর্ভপত্র ৩ টি, যুক্ত, গর্ভাশয় অধোগর্ভ, ৩-কোষী, মাংসল, পুরু পুষ্পক্ষে নিহিত, প্রতিকোষে ডিম্বক একাধিক, গর্ভদন্ড সূত্রাকার । গর্ভমুণ্ড রৈখিক, ফল রসালো, মাংসল পুষ্পধারে নিহিত, সম্পূর্ণ ফল মঞ্জরীপত্র, পুষ্পাক্ষ ও পুষ্পধার কোণাকৃতি রসালো ফল-সরোসিসে রূপান্তরিত।
ফল ২০ x ১৪ সেমি, ওজন ১-২ কেজি। বীজ অল্প, ডিম্বাকৃতি বা দীর্ঘায়ত। ভ্রণ ক্ষুদ্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে এই ফলের প্রকরণ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে হানিকুইন, জায়েন্ট কিউ ও ঘোড়াশাল জনপ্রিয় (Begum, 1987)।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৫০, ৭৫, ১০০ (Fedorov, 1969)।
আনারস-এর বিস্তৃতি:
আদি নিবাস আমেরিকা, উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল। অন্যান্য উষ্ণ মন্ডলীয় দেশে প্রবর্তণকৃত এবং হাওয়াই, মেক্সিকো, কিউবা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফরমোজা, শ্রীলংকা ও ভারত, চীন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, কুইনল্যান্ড (অষ্ট্রেলিয়া) প্রভৃতি দেশে ব্যাপক চাষাবাদ হয় (Macmillan, ১৯৬২)।
বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইলের মধুপুর অরণ্য এবং ময়মনসিংহ জেলায় প্রচুর জন্মে। বংশ বিস্তার: ফলের মূলীয় অংশ সৃষ্ট বিটপ এবং উর্ধ্ব ধাবকের সাহায্যে বংশ বিস্তার হয়। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে ফেব্রুয়ারী থেকে জুলাই মাসে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
আনারসের পাকা ফল টাটকা খাওয়া হয়। এছাড়া জুস, স্কোয়াশ, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আনারস থেকে মদ তৈরি হয়। পাতার আঁশ শক্ত, সরু ও সাদা, জলে নষ্ট হয় না। মিহি কাপড় ও দড়ি তৈরিতে আঁশ ব্যাপক ব্যবহৃত।
আনারস-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
অন্ত্রের কৃমি বিতাড়নের জন্য ভারত ও বাংলাদেশে এর পাতার রসের ব্যবহার প্রচলিত। কাচা ফলের রসে গর্ভপাত ঘটে। একটি প্রচলিত বিশ্বাস আনারস খাওয়ার পর দুধ খাওয়া উচিত নয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের খণ্ডে ১১ম(আগস্ট ২০১০) আনারস প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শীঘ্র এদের সংকটের কারণ দেখা যায় না। বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে আনারস সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এস. কে. দত্ত (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৪২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Shajiarikkad
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।