কলাই বা মাষকলাই ডাল খাওয়ার উপকারিতা ও রান্নার পদ্ধতি

কলাইয়ের ডাল পক্ষাঘাতের পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কলাই (বিউলির ডাল) শীতল, গুরুপাক, শুক্র, পিত্ত বায়ু ও মলবর্ধক এবং পুষ্টিকর। ভাজা কলাই উষ্ণবীর্য, স্নিগ্ধ, রুচিকর বল ও শুক্রবক, বায়ুনাশক।

কলাইয়ের ডাল পুষ্টিকর। গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের কৃষক যাঁরা খুবই বেশি পরিশ্রম করে বাজরার আটার (এক রকমের শস্য) মোটা মোটা লেটি আগুনে সেঁকা আর কলাইয়ের ডাল তাঁদের প্রিয় আহার।

সুস্থ থাকতে কলাইয়ের ডাল উপকারি: কলাইকে ভারী, পাকে মধুর, স্নিগ্ধ, রুচিকারক, বায়ুনাশক, বীর্যবর্ধক বলা হয়।

বিভিন্ন রোগ বা সুস্থ থাকতে কলাই ডালের প্রয়োগ

১. কলাই জমে থাকা মল ঢিলে করে নীচে নামায়।

২. অত্যপ্ত পুষ্টিকর, মলমূত্র মুক্ত করে।

৩. জননীর স্তন্য দুগ্ধ বৃদ্ধি করে এবং মেদ বৃদ্ধি করে।

৪. কলাই কফ ও পিত্ত বৃদ্ধি করলেও অর্শ ও শ্বাস রোগে উপকারী।।

৫. কলাইয়ের ডালের বড়ি ও কলাইয়ের ডালের বড়া বলপ্রদ, পুষ্টিকর, বীর্যবর্ধক, বায়ুরোগনাশক, রুচি উৎপাদক।

৬. কলাইয়ের ডালের পাঁপড় রুচিবৃদ্ধি করে, খিদে বাড়িয়ে দেয়, হজম হয় তাড়াতাড়ি, রুক্ষ এবং একটু ভারী।

৭. কলাইয়ের ডাল যাতে বায়ুকায়ক না হয় সেইজন্যে এতে যথেষ্ট পরিমাণে রসুন ও হিং ফোড়ল দেওয়া উচিত।

৮. কলাইয়ের ডাল বাতকারক নয় কিন্তু গরিষ্ঠ হওয়ার জন্যে হজম হয় দেরিতে অতএব দুষ্প্রাচ্য। কাজেই যাঁদের হজম শক্তি কম তাঁদের পক্ষে বেশি না খাওয়াই ভাল।

৯. কলাইয়ের ডাল বেশি খেলে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এই দোষ কমাবার জন্যে এতে আদা, গোলমরিচ, আর হিং মেশাতে হবে।

১০. কলাইয়ের ডালের একটি বিশেষ গুণ আছে তা হলো এটি প্যারালিসিস বা পক্ষাঘাতের পথ্য। এই ডাল পুষ্টিকর ও শীতল। এই ডাল নিয়মিত খেলে মুখের প্যারালিসিস বা মুখ বেঁকে যাওয়া এবং শরীরের পক্ষাঘাত দুটোতেই উপকার পাওয়া যাবে।

কলাইয়ের ডাল প্রতিদিন খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা

কলাই বা মাষকলাই ডাল তো বাঙালিদের বিশেষ প্রিয়। হিং ফোড়ন, মৌরি বাটা ও আদা বাটা দিয়ে কলাইয়ের ডাল, আলু পোস্ত ও তেতুল বা কাঁচা আম বা টোপা কুলের টক- গরমকালে এই খাবার খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে এবং মুখের রুচিও ফেরে।

কলাইয়ের ডাল বাটা দিয়ে বড়া ভেজে তৈরি করে হয় রসবড়া। অমৃতি জিলিপিও তৈরি হয় কলাইয়ের ডাল বাটা দিয়ে। বড়ি পাঁপড়, দহি বড়া ইত্যাদি তো আছেই। রাধাবল্লভী এবং কচুরিতেও কলাইয়ের ডালের পুর দেওয়া হয়। গরম কলাইয়ের ডালের বড়া (আদা মৌরি বাটা, পোস্ত ও হিং দিয়ে) ডাল ভাতের সঙ্গে খুবই রুচিকর। ভাজা কলাইয়ের ডালে ফুলকপি, মুলো ইত্যাদি দিয়ে শীতকালে খিচুড়িও শরীর সুস্থ রাখতে খাওয়া-দাওয়ায় কলাইয়ের ডালের উপযোগ।

কলাই ডাল খাওয়ার বিভিন্ন রেসিপি:  

১. কলাই বা মাষকলাই ডাল দিয়ে তৈরি লাডডু : কলাইয়ের ডালের আটা বা বেসন, গমের আটা, সমপরিমাণে নিয়ে একটু বেশি ঘি দিয়ে আঁচে বসিয়ে নাড়তে থাকুন। একটু পিপুল গুঁড়া দিন। এবারে আন্দাজ মতো চিনি এবং চিনির দ্বিগুণ পরিমাণ জল দিন। জল শুকিয়ে গেলে নামিয়ে লাড্ডু তৈরি করে নিন।

রাতে শোওয়ার আগে একটা করে লাড্ডু ও দুধ খাবেন। এতে শরীরের পুষ্টি হবে। কখনও রোগা হবে না, শরীরের বল বাড়বে।

২. কলাইয়ের ডালের বড়া : কলাইয়ের ডাল জলে ভিজিয়ে রাখুন। পিষে নিয়ে নুন, গোলমরিচ, হিং, জিরে, রসুন ও আদা মিশিয়ে ঘিয়ে বা তেলে ভেজে বড়া তৈরি করুন। এই বড়া খেলে বায়ু, প্যারালিসিসে মুখ বেঁকে যাওয়া, অরুচি, দুর্বলতা, ক্ষয় আর শূল সারবে ।

৩. কলাইয়ের ডালের সঙ্গে দই মেশানো বড়া: এ কলাইয়ের ডাল পিষে নিয়ে একটু টক দই দিয়ে ফেটিয়ে বড়া তেলে বা ঘিয়ে ভাজলে সেই বড়া খেলে শরীরের বল ও ধাতু বৃদ্ধি হয়।

৪. কলাইয়ের ডালের পানীয় : ( কলাইয়ের ডালের আটা শুকনো পেষা কলাইয়ের ডাল) গরুর দুধে ফুটিয়ে নিন। একটু ভাল ঘি মেশাবেন। অল্প গরম থাকতে থাকতে পর পর সাত দিন পান করলে মূত্রপথ দিয়ে যদি ধাতুস্রাব হয় তাতে উপকার হবে।

৫. শ্বেতীরোগে কলাইয়ের ডাল : টাটকা কলাইয়ের ডাল পিষে সাদা দাগের ওপর লালালে উপকার পাওয়া যায়।

৬. মাষাদি সপ্তক ক্বাথ: যা কলাইয়ের ডালসহ সাতটি উপকরণ পিষে তৈরি করা হয় ও কবিরাজি দোকানে পাওয়া যায় (কলাই, বলা খপাট, কৌছে, কৃতণ নামক ঘাস, রানী, অশ্বগন্ধা এবং এর মূল থেতো করে বা আধ-কুটো করে ক্বাথ তৈরি করা হয়। একটু গরম করে হিং ও নুন মিশিয়ে খেলে পক্ষাঘাত, মন্যাস্তম্ভ (গলার নাড়ি আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া), কানে বিশেষ ধরনের আওয়াজ হওয়া (কর্ণনাদ), কানের ব্যথা (কর্ণশূল) এবং দুর্জয় অর্দিত নামক মুখ বেঁকে যাওয়া রোগ সারে।

তথ্যসূত্রঃ

১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা ৬৪-৬৬।

আরো পড়ুন:  মুগ ডাল-এর ১০টি ভেষজ গুণ ও রন্ধনশৈলীর বিবরণ

Leave a Comment

error: Content is protected !!