মিচুতা গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

বিরুৎ

মিচুতা

বৈজ্ঞানিক নাম: Centipeda minima (L.) A. Br. & Aschers., Ind. Sem. Hort. Berol. App. 6 (1867). সমনাম: Artemisia minima L. (1753), Cotula minima (L.) Willd. (1803). ইংরেজি নাম: Spreading Sneeze Weed. স্থানীয় নাম: মাচিটি, হাচুটি, মিচুতা, নাকচিকনি।
জীববৈজ্ঞানিকশ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. অবিন্যাসিত: Rosids. বর্গ: Asterales. পরিবার: Asteraceae. গণ: Centipeda. প্রজাতি: Centipeda minima.

ভূমিকা: মিচুতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Centipeda minima) গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মানো বিরুৎ। পতিত জমিতে জন্মানো এই প্রজাতিতে আছে নানা ভেষজ গুণাগুণ।

মিচুতা-এর বর্ণনা:

বহু ছটাকার শাখা বিশিষ্ট ভূশায়ী একবর্ষজীবী। বীরুৎ, কাণ্ড অনূর্ধ্ব ২৫ সেমি লম্বা, মসৃণ বা উপরের অংশ। হালকা অণুরোমশ বা রোমশ, প্রস্থচ্ছেদ গোলাকার।

পত্র অনূর্ধ্ব ১.৬ X ০.৬ সেমি, অবন্তক বা অর্ধ-সবৃন্তক ও নিম্নাংশ ক্রমান্বয়ে সরু, বিডিম্বাকার-বিবল্লমাকার বা চমসাকার, ২-৬ দস্তুর বা খন্ডিত, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, সচরাচর মসৃণ বা মাঝে মধ্যে অঙ্কীয় পৃষ্ঠ সূক্ষ্মভাবে অণুরোমশ।

পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, অসম জননকোষী, অর্ধ-গোলীয়, ব্যাস ২-৬ মিমি, একল, অবৃন্তক, সচরাচর কাক্ষিক, মঞ্জরী পত্রাবরণ ২-স্তরে সজ্জিত, ১.৭-২.২ মিমি লম্বা, শুষ্ক ঝিল্লিসদৃশ প্রান্ত বিশিষ্ট, মসৃণ, বহির্দেশীয় গুলি বিডিম্বাকার-বিবল্লমাকার, চমসাকার, অধিকতর অন্তবর্তী গুলি ডিম্বাকার।

পুষ্প হরিদ্রাভ। স্ত্রী পুষ্পিকার দলমণ্ডল অতি খর্ব, ০.৮-০.৯ মিমি লম্বা, নলাকার, উভলিঙ্গ পুষ্পিকার দলমণ্ডল ৪ মসৃণ খন্ড বিশিষ্ট, ০.৯-১.০ মিমি লম্বা। ফল সিপসেলা, ০.৭-০.৮ মিমি লম্বা, শীর্ষ কিরীট বিশিষ্ট, রৈখিক হতে বি-বল্লমাকার।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৩৬ (Fedorov, 1969)।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

অনাবাদী জমি, আবাদী জমি, লবণাক্ত বিল সমূহ, বালিয়াড়ি, খোলা ভূমি এবং নদীর তীরবর্তী স্থান। ফুল ও ফল ধারণ ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস। বীজ থেকে নতুন চারার জন্ম হয়।

বিস্তৃত:

আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় পশ্চিম এশিয়া। বাংলাদেশে উদ্ভিদটি চট্টগাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং যশোর জেলাসমূহে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় জন্যে বলে নার্থিভূক্ত রয়েছে।

আরো পড়ুন:  খেসারি এশিয়ায় জন্মানো সহজলভ্য ভেষজ উদ্ভিদ

ব্যবহার ও গুণাগুণ:

বীরুৎ হতে তৈরী পেষ্ট দাঁতের যন্ত্রনায় প্রয়োগ করা হয়। বাত রোগে, সন্ধি বেদনার এবং মিজনিত ব্যথায় উদ্ভিদটি ব্যবহার উপযোগী। উদ্ভিদটি থেকে নিঃসৃত তরল অপথেমিয়া রোগে উপযোগী।

পাতা সমূহ ঝাল, কৃমিনাশক, শ্বেতী রোগে, রক্ত ও চর্মজনিত রোগে ও মৃগী রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বীজ ও মূল চূর্ণ উত্তেজক হিসেবে হাঁচি নিরসনে ব্যবহৃত হয়। একে মস্তিষ্কের ঠান্ডা দূরীকরণে নাক দিয়ে গ্রহণযোগ্য করে তৈরী করা হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মিচুতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে মিচুতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।  

তথ্যসূত্র:

১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১১-৩১২ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dalgial

Leave a Comment

error: Content is protected !!