ভূমিকা: তিন রঙা চন্দ্রমল্লিকা (বৈজ্ঞানিক নাম: Chrysanthemum carinatum, ইংরেজি নাম: Tricolor Chrysanthemum) হচ্ছে এ্যাসটারাসি পরিবারের ক্রিসেনথিমাম গণের একটি সপুষ্পক বিরুৎ। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করতে এই বিরুৎ লাগানো হয়।
বর্ণনা: এই উদ্ভিদের বহু শাখা বিন্যাসিত ও মসৃণ একবর্ষজীবী বীরুৎ, হিসাবে পরিচিত। এটি ১.৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের পাতা অতি মাত্রায় পাখার মতো ভাগ করা ও বোটাহীন।
এদের ফুল থোকা থোকা হয়ে ডালের আগাতে ফুটে থাকে। একেকটি ফুল পৃথক পৃথক থাকে ব্যাস ৪-৫ সেমি, অসম জননকোষী, পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, পত্রাবরণ স্পষ্টত অর্ধগোলাকার। মঞ্জরীপত্র বহু-স্তরে সজ্জিত। মধ্য পুষ্পিকা বহু-স্তরে সজ্জিত, উভলিঙ্গ। প্রান্ত পুষ্পিকার দলমণ্ডল পরিব্যাপ্ত, সূক্ষ্মভাবে ২-৩ খন্ডিত দলফলক বিশিষ্ট, জিহ্বাকার, নিম্নাংশ হলুদ বলয় বিশিষ্ট সাদা, মধ্য পুষ্পিকার দলফলক ৫-খন্ডিত দলফলক বিশিষ্ট, নলাকার, হলুদ। পরাগধানী উপাঙ্গবিশিষ্ট, নিম্নাংশ বাণাকার। গর্ভদন্ডীয় বাহু কর্তিতা, শীর্ষ রোমশ। ফল সিপসেলা, পৃষ্ঠীয়ভাবে চাপা, দৈর্ঘ্যের তুলনায় প্রশস্ততর, মসৃণ, বৃতিরোম অনুপস্থিত।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ১৮ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষবাস: আলোযুক্ত বাগান হতে হবে, পানি দ্বারা মাটি ভিজে থাকবে তেমন ব্যবস্থা থাকতে হবে। বীজ, রাইজোম অথবা কাণ্ড কাটিং এর মাধ্যমে নতুন চারা জন্মে। এই টবে চাষ করার জন্য উপযোগী। অনেকে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখে, মালা গাঁখা, বিভিন্ন উৎসবে ব্যবহার করে থাকে। ফুল ও ফল ধারণ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই ফুল ফোটে। গাছে ফুল তাজা থাকে ২০ থেকে ২৫ দিন৷
বিস্তৃতি: মরক্কোতে স্থানীয়। বাংলাদেশে উদ্ভিদটি সর্বত্র আবাদ করা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: তিন রঙা চন্দ্রমল্লিকা উদ্ভিদের পুষ্প সৌন্দর্য বর্ধক রূপে বাগানে আবাদ করা হয় । এই ফুল আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। বাহারি রঙের এই ফুলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমূল্য রয়েছে প্রথম সারিতে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তিন রঙা চন্দ্রমল্লিকা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে তিন রঙা চন্দ্রমল্লিকা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Ramesh NG
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।