ভূমিকা: তিতাপাট (বৈজ্ঞানিক নাম: Corchorus aestuans) বাংলাদেশের সব জেলাতেই জন্মে। পতিত জমিতে জন্মানো এই প্রজাতিটি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।
তিতাপাট-এর বর্ণনা:
এই প্রজাতি বর্ষজীবী, অধিক-শাধিত, অর্ধখাড়া বা ছড়ানো বীরুৎ আকৃতির। উচ্চতায় ১০-৬০ সেমি লম্বা। কান্ড দীর্ঘ রোমাবৃত, কিছুটা রও-বেগুনি।
পত্র ২-১০ ২ ১-৫ সেমি, বল্লমাকার থেকে ডিম্বাকার, গোড়া মোটামুটি গোলাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, করাত দর, মূলীয় অংশের অধিকাংশ দন্তক দীর্ঘায়িত হয়ে সূত্রাকার পদ্ধতিতে পরিণত বা পরিণত নয়,
উপরিতল রোমহীন, নিবতল স্পষ্ট উঠানো শিরাযুক্ত দীর্ঘ রোমশ, ৩৫ শিরাবিশিষ্ট, শিরা রোমশ থেকে সম্পূর্ণ রোমহীন, পত্রবৃন্ত ০.৫-৪.০ সেমি লম্বা, দীর্ঘ রোমশ, খাজযুক্ত, রক্ত-বেগুনি, উপপত্র ৫-১০ মিমি লম্বা, হালকা রোমশ, রক্ত-বেগুনি সবুজ।
পুষ্প ২-৩টি পত্র-প্রতিমুখ, খাটো মঞ্জরী দন্ডযুক্ত সাইম, ১ সেমি চওড়া, পুষ্পবৃন্ত ২ মিমি লম্বা, শীর্ষের নিকট যুক্ত, মঞ্জরীপত্র ৪-৬ মিমি লম্বা, সূত্রাকার, রোমহীন।
বৃত্যংশ ৫টি, ৩-৪ মিমি লম্বা, রেখাকার-আয়তাকার, ঢাকনাযুক্ত এবং সূক্ষ্ম, অভ্যন্তরে রক্ত-বেগুনি দাগযুক্ত, বাহিরে সবুজ, রোমহীন। পাপড়ি ৫টি, ৩-৫ মিমি লম্বা, বিডিম্বাকার, গ্রন্থিল দলবৃন্তসহ স্থূলা, গোড়া রোমশ, হলুদ।
পুংকেশর ১২-৩০টি। গর্ভপত্র ৩টি, গর্ভাশয় ২ মিমি লম্বা, ৩-প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড ৩টি, গর্ভমুন্ড ২-খন্ডিত। ফল ক্যাপসিউল, একল, ৩-৭ মিমি লম্বা, দূরাপসারী, রোমহীন, চঞ্চযুক্ত, ৩-প্রকোষ্ঠী, প্রকোষ্ঠ অনুপ্রস্থভাবে পৃথককত। বীজ অসংখ্য।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৪ (Kumar and Subramanium, 1986)
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
পরিত্যক্ত এলাকায় আগাছার মাঝে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ সময় আগষ্ট-ফেব্রুয়ারি। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি:
সমগ্র উপমহাদেশে, কিন্তু সম্ভবত উষ্ণমন্ডলীয় এশিয়ার স্বদেশী। ইহা উষ্ণমন্ডলীয় আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলংকা এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সমগ্র জেলায় বিস্তৃত।
ভেষজ ব্যবহার:
আমাশয়ে শুষ্ক পাতা নাস্তার সময় ভাতের সাথে খাওয়া হয়। ঠান্ডা রস আমাশয়ের সমস্যা, জ্বর এবং অজীর্ণ রোগে টনিকরূপে ব্যবহার করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
ছোট নাগপুরের মুন্ডা উপজাতীয়রা। তিক্ত বীজ নিউমোনিয়া এবং পেটের ব্যথায় ব্যবহার করে। ঘানায় মূলসহ সমস্ত উদ্ভিদ মূত্র নির্গমণে ব্যবহৃত হয়। (Caius, 1998)।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তিতাপাট প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে তিতাপাট সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. বুশরা খান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০(১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৯১-৩৯২ আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।