ভূমিকা: হলুদ (বৈজ্ঞানিক নাম: Curcuma longa) প্রজাতিটির গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চলে জন্মে। বাংলাদেশের পাহাড়িঞ্চলে জন্মে। এই প্রজাতি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।
হলুদ প্রজাতির বর্ণনা:
পত্রল, রাইজোম সমৃদ্ধ বীরুৎ, রাইজোম ভিতরে কমলা-হলুদ, তীব্র সুগন্ধী। পত্রগুচ্ছ ১ মিটার বা আরো লম্বা। পাতা ৫-৭টি, প্রায় খাড়া, গোড়ার সীথ সবুজ, বৃন্ত ১৫-২৪ সেমি লম্বা, সবুজ, পত্রফলক আয়ত-ল্যান্সকার বা উপবৃত্ত-ল্যান্সকার, কডেট, ৩০-৮৪ x ১০-২৫ সেমি, মসৃণ, সম্পূর্ণ সবুজ।
স্পাইক ১০-২০ X ৫-৭ সেমি, পত্রগুচ্ছের মাঝখান থেকে নির্গত হয়, মঞ্জরীদন্ড প্রায়ই ৫.০-৭.৫ সেমি বের হয়ে থাকে, উর্বর-মঞ্জরীপত্র সাদা থেকে হাল্কা সবুজ, ১৯-৩১ টি, বিডিম্বাকার বা আয়তাকার, স্থুলাগ্র বা গোলাকার, ৪.৩-৫.১ X ২.৫-৩.৭ সেমি, উপরের অংশ খাটো লোমে আবৃত, ৩-৪ টি ফুলকলি বহন করে, কমা-মঞ্জরীপত্র ৭-১২ টি, সবুজাভ-সাদা, সাদা বা হাল্কা বেগুনী মাথা সহ সাদা, সর্ববৃহৎ টি ল্যান্সাকার, স্থুলাগ্র, ৭.৫ x ২.৭ সেমি পর্যন্ত, উভয়পৃষ্ঠ খাটো লোম দ্বারা আবৃত, উপ-মঞ্জরীপত্র সাদা, বিডিম্বাকার, প্রায় ২.৫ x ২.০ সেমি, মসৃণ, মাথারদিকে অল্প রোমশ।
ফুল মঞ্জরীপত্র থেকে অল্প বহির্গামী। বৃতি সাদা, প্রায় ১ সেমি লম্বা, ৩ খন্ড, মাথা, গোড়া এবং শিরা অল্প রোমশ। দলনল হাল্কা হলুদ, ৩.০-৩.৫ সেমি লম্বা, পাপড়ি ৩টি, সাদা, পৃষ্ঠ-খন্ড ঢাকনাবৎ, এপিকুলেট, প্রায় ১৩ x ১৩ মিমি, অন্য ২-খন্ড ডিম্বাকার, গোলাকার, ১৪-১৫ X ১১-১৩ মিমি।
স্টেমিনোড ২টি, জিহ্বাকার, ১০-১২ x ৭-৯ মিমি, সাদা। লেবেলাম মোটামুটি বর্গাকার, অস্পষ্টভাবে ৩-খন্ড, প্রায় ১৫ x ১৫ মিমি, মধ্য-খন্ড খাতাগ্র, ক্রীম এর ভিতর গাঢ় হলুদ মধ্য ব্যান্ড সম্পন্ন। পুংদন্ড ৩.০-৩.৫ মিমি, সাদা, পরাগধানী ৪ মিমি লম্বা, ৩ মিমি লম্বা কাস্তে আকৃতির স্পর সহ। গর্ভাশয় সাদা, ৩.৫ x ৩.০ মিমি, লোমশ, গর্ভদন্ড দিখন্ড, প্রায় ১.৫ মিমি প্রশস্ত, গর্ভাশয় উপরস্থ গ্রন্থি প্রায় ৪ মিমি লম্বা।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩২ (Kumar and Subramanium, 1986).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
আংশিক ছায়াযুক্ত অথবা রৌদ্ররোজ্জ্বল উচ্চভূমি। ফুল ধারণ সময় আগস্ট-অক্টোবর। ফল সাধারণত ধরে না। রাইজোম দ্বারা গাছটির বংশ বিস্তার করা হয়।
বিস্তৃতি: সমগ্র গ্রীষ্মমন্ডলে চাষ করা হয়। বাংলাদেশে সারাদেশ জুড়ে এর চাষ হয়।
হলুদ-এর ভেষজ গুণ:
রাইজোম উত্তেজক, বায়ু নিরোধক, টনিক, রক্ত পরিষ্কারক, জ্বরনাশক এবং কৃমিনাশক। ফুলা, বাত, জন্ডিস এবং ঠান্ডায় বহুল ব্যবহার হয়। তাজা রস অনেক চর্মরোগে জীবাণু নাশক হিসাবে ব্যবহার হয়। ব্যথাহীন ঘায়ে প্রয়োগ হয়, ক্কাথ চোখ উঠার ব্যথায় ব্যবহার হয়।
ব্যবহার হয় ডায়রিয়া, সবিরাম জ্বর এবং শোথরোগে। ফুলের মন্ড দাদ ও অন্যান্য পরজীবি ঘটিত রোগে ব্যবহার হয়। রাইজোম থেকে নিষ্কাশিত উদ্বায়ী তেল এন্টিসেপটিক, অম্লনাশক এবং বায়ু নিরোধক। রাইজোম বিভিন্ন সুতা রঙ করতে ব্যবহার হয়। মসলা হিসাবে এটি প্রচুর পরিমানে ব্যবহার হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
রাইজোমের মন্ড চর্মরোগ, প্রসাধনী এবং জীবনুনাশক এবং রস আমাশয়ে ব্যবহার হয়। রাইজোমের রস আমাশয়ে ব্যবহার হয় এবং রক্ত পরিষ্কারক মনে করা হয়। চট্টগ্রাম জেলার অধিবাসীরা পুষ্পমঞ্জরী তরকারিতে সুগন্ধী হিসাবে ব্যবহার করে।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) হলুদ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে হলুদ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. মোহাম্মদ ইউসুফ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৬২-৪৬৩ আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।