ডায়ান্থাস নামে এই সুন্দর ফুলটি বহুবর্ষজীবী হলেও শীতের মৌসুমী ফুল হিসেবেই আমাদের দেশে এর চাষ হয়ে থাকে। ডায়ান্থাস বা পিক ফুল দেখতে অনেকটা কারনেশনের মতো। চাষ পদ্ধতি সহজ, আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সচ্ছিদ্র উর্বর দো-আঁশ মাটি এর চাষে বেশ উপযোগী।
ডায়ান্থাসের জাত:
ডায়ান্থাস বা পিক ফুল নানা বর্ণের নানা জাতীয় সিঙ্গল ও ডবল হয়ে থাকে। ডায়ান্থাসের জাপানীজ পিঙ্ক ও চায়না পিঙ্ক নামক দুটি উন্নত জাত আছে। জাপান থেকে আমদানীকৃত জাপানীজ পিঙ্ক ফুলের পাপড়ির প্রান্তভাগ কোঁকড়ানো এবং দেখতে ঝালরের মতো। ডায়ান্থাস গাছের উচ্চতা ১২-১৫ ইঞ্চি বা ৩০-৩৫ সেঃ মিঃ, কেয়ারী ও টবে চুনযুক্ত হালকা মাটিতে সহজেই চাষ হয়।
ডায়ান্থাসের জমি প্রস্তুত:
জমিতে চারা উৎপাদনের বীজতলা এবং উৎপাদিত চারা লাগানোর স্থায়ী বাগানের জমি দুই স্তরেই প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। আবার টবে এবং গামলায়ও বীজতলা ও চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত হতে পারে। এখানে মাটিতে চাষ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
চারা উৎপাদনের বীজতলা প্রস্তুত:
চারা উৎপাদনের বীজতলা চন্দ্রমল্লিকার মতো একই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা যেতে পারে। তবে বাড়তি হিসেবে সামান্য চুন প্রয়োগ করার দরকার হবে।
উৎপাদিত চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত:
চন্দ্রমল্লিকার চারা লাগানোর জমি প্রস্তুতের মতো একই পদ্ধতিতে ডায়ান্থাস বা পিঙ্কের উৎপাদিত চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত করা যেতে পারে। তবে মাটিতে সামান্য চুন প্রয়োগ করা হলে ভালো ফল হবে।
চারা উৎপাদন ও লাগানো:
ক. যথা সময়ে ভালোভাবে প্রস্তুতকৃত বীজতলা সমতল অঞ্চলে অক্টোবর মাসে এবং পার্বত্য অঞ্চলে মার্চ মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে যেখানে গ্রীষ্মকালেই ঠাণ্ডা থাকে সেখানে জুন-জুলাই মাসেও বীজ বপন করা যায়।
খ. বীজ বপনের কিছুদিন পরই মাটিতে সামান্য পানি ছিটিয়ে হালকা ভাবে মাটি চাপিয়ে দিতে হবে এবং পশু পাখী যাতে মাটি নাড়িয়ে ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
গ. চারা ২ বা ৩ ইঞ্চি বা ৫-৮ সেঃ মিঃ লম্বা হলেই পূর্বে প্রস্তুতকৃত জমিতে বা টবে লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা লাগানোর জমিতে ১২-১৮ ইঞ্চি বা ৩০-৪৫ সেঃ মিঃ দূরে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৪৫-৬০ সেঃ মিঃ । বাগান ভালো করে হালকা ভাবে চাপিয়ে দিতে হবে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়।
পরিচর্যা ও যত্ন:
গাছ লাগানোর সময় থেকে পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা ভালো ফুল পাওয়া যাবেনা।
ক. চারা লাগানোর সময়ই সামান্য ফসফেট সার দিতে হবে এবং সামান্য জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
খ. পানি জমে যাওয়া বা পানি শূন্য হয়ে যাওয়া কোনোটাই চন্দ্রমল্লিকা সহ্য করতে পারেনা বিধায় ফুল আহরণ পর্যন্ত প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে।
গ. গাছ সামান্য বড় হলেই ছোট ছোট চিকন খুটির সাথে গাছগুলিকে বেঁধে দিলে ভালো হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ডাল ছেটে দিতে হবে।
ঘ. গাছের চাহিদার অতিরিক্ত সার দেয়া হলে গাছ চেয়ে পাতা বড় হবে ও ডগা দুটি বেঁধে যাবে এবং ফুল ছোট হবে। এ অবস্থায় গাছের ডগা ছেটে দিতে হবে।
ঙ. চারা লাগানোর ১৫ দিন পর থেকে প্রতি ১৫ দিনে একবার পরিমাণ মতো তরল সার এবং মাসে একবার মাছের গুড়া চাপান সার হিসেবে দিতে হবে।
চ. গাছে কুড়ি আসার সময় একবার বা দুইবার অ্যামোনিয়াম সালফেট বা ইউরিয়া বা অন্য কোনো নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে ।
ছ. নাইট্রোজেন সার বেশি মাত্রায় দেয়া যাবেনা। কেননা তাতে ফুলের আকার ছোট ও বড় ফ্যাকাসে হবে।
জ. অতিরিক্ত পর্যাপ্ত পটাশ সার দিলে ফুলের রঙ ভালো হয় এবং অতিরিক্ত ফসফরাস সার দিতে ফলের রঙ খারাপ হয়। তাই ফসফরাস সার বেশি মাত্রায় দেয়া যাবেনা।
ঝ. গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তবে মাটি সাবধানে খুড়তে হবে যাতে গাছের শেকড় না কাটে।
ঞ. গাছ বড় হলে প্রতিটি গাছে ৩/৪টি বড় শাখা রেখে বাকীগুলি ছেটে দিলে ফুল বড় হবে।
ট. প্রদর্শনীর জন্যে বড় ফুল পেতে পাশের কুড়ি ছেটে দিয়ে নিয়মিত সার প্রয়োগ, জলসেচ ও রোগ বালাই দমন করতে হবে।
ঠ. গোবর সার ও সরিষার খইল ভিজিয়ে তরল সার তৈরী করে চারা রোপণের পরের মাস থেকেই দিতে হবে এবং কুড়ি আসার সময় তরল সারে সামান্য ইউরিয়া মিশিয়ে দিতে হবে।
ড. গাছ ২৫/৩০ সেঃ মিঃ লম্বা হলে প্রধান শাখাটি কোন বাউনীতে বাড়িলে দিলেও তাতে ছোট ছোট শাখা বের হবে এবং ফুলের উৎপাদন হবে।
ডায়ান্থাসের ফুল সংগ্রহ:
ডায়ান্থাস গাছ একবার মার্চ-জুলাই এবং পুনরায় সেপ্টেম্বর-জানুয়ারী মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি হয় ও ফুল দেয়।
ক. ডায়ান্থাস ফুল গাছ হতে তোলার পরও বেশ ক’দিন টাটকা থাকে এবং দূরে পাঠানো যায়।
খ. যখন বাইরের পাপড়ি পূর্ণভাবে ফুটে এবং মাঝের পাপড়ি ফুটতে শুরু করে তখনই ফুল তোলার সময়।
গ. লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কুড়ি অবস্থায় তোলা না হয়, কেননা এ অবস্থায় তুললে ফুল ফোটে না ঘ. ফুল বোটাসহ তুলে এর বোটাগুলি বালতির জলে ডুবিয়ে রেখে তারপর প্যাক করে বাজারে পাঠাতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১০৩-১০৬। আইএসবিএন 984-461-128-7
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।