ভূমিকা: কচুরিপানা (বৈজ্ঞানিক নাম: Eichhornia crassipes, ইংরেজি নাম: Common Water Hyacinth ) পন্টেডারিয়াসি পরিবারের Eichhornia গণের বিরুৎ। স্রোতহীন স্বাদুপানিতে জন্মাতে পারে। এটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আগ্রাসী প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত।
বর্ণনা: মুক্ত ভাসমান, জলজ বীরুৎ, খুব খাটো পত্রময় প্রধান কান্ড হতে লম্বা তময় মূলের বৃহৎ গুচ্ছ নিচের দিকে থাকে, কখনো কখনো খুব অগভীর পানির মাটিতে মূল উৎপন্ন হয়। পত্র পানির উপরে থাকে, মূলজ, স্পঞ্জি পত্রবৃন্ত যুক্ত, খাটো, অপরিণত নমুনায় অত্যন্ত স্ফীত, পত্রফলক প্রশস্ত ডিম্বাকার বা হীরকাকার, গোড়া অগভীরভাবে হৃৎপিন্ডাকার বা গোলাকার, শীর্ষ প্রশস্ত স্থুলাগ্র, বলিষ্ঠ বীরুৎ সদৃশ, সম্পূর্ণরুপে মসৃণ।
পুষ্পমঞ্জরী মঞ্জরীদন্ডযুক্ত, ২টি কাছাকাছি মঞ্জরীপত্রবিশিষ্ট, নিচেরটি একটি লম্বা নলাকার সীথ এবং একটি ছোট ফলকযুক্ত, উপরেরটি সূক্ষ্ম খর্বাগ্র, বেশীরভাগ নলাকার, প্রায় অখন্ডভাবে নিচেরটি সীথ দ্বারা আবৃত থাকে। পুষ্প ১০-২০টি, প্রায় যুগপভাবে বিস্তৃত হয় এবং শুকিয়ে যায়, খুবই চকচকে, পুষ্পপুট নালি সামান্য বাঁকানো, গোড়া সবুজ, খন্ডক ডিম্বাকার হতে ডিম্বাকার- আয়তাকার বা বিডিম্বাকার, ঈষৎ নীল-রক্তিমাভ, উজ্জ্বল হলুদ, পশ্চাৎ খন্ডক প্রায় ৪ সেমি লম্বা, মধ্য ভাগে নীল কিনারাযুক্ত দাগ বিদ্যমান।
পুংকেশর ৬টি, বাকানো, দলমন্ডলের গ্রীবার নিকট ভিতরের দিকে প্রসারিত, পুংদন্ড। গ্রন্থিল রোমশ, পশ্চাতের ৩টি অসমান, সম্মুখের ৩টিও অসমান। গর্ভদন্ড মসৃণ, গর্ভমুণ্ড সাদা, রোমশ। ফল ক্যাপসিউল, রৈখিক-আয়তাকার । বীজ ডিম্বাকার। ফুল ও ফল ধারণ ও সারা বর্ষব্যাপী।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩২ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: স্থির বা ধীর গতিতে প্রবাহিত স্বাদু পানি এদের বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত। অঙ্গজ উপায়ে এরা বৃদ্ধি পায়। এরা জ্যামেতিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বিস্তৃতি: ব্রাজিলের স্থানীয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সৌন্দর্য বর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে প্রবর্তিত, অনেক গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী উদ্ভিদ হিসেবে পরিগণিত। বাংলাদেশে ইহা দেশের সর্বত্র বিস্তৃত।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: উদ্ভিদটি সার (পটাশ সমৃদ্ধ) এবং গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লম্বা পত্রবৃন্ত বয়ন উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: উদ্ভিদটির পাল্পের রস পুলটিসসহ একত্রে দিনে দু’বার তিন মাসের জন্য দেয়া হয় যা সম্পূর্ণভাবে গলগন্ডের স্ফীতি গলিয়ে দেয়। বংশ
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কচুরিপানা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কচুরিপানা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. মাহবুবা খানম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪১৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।