দুধিয়া-র নানা প্রজাতি ও উপকারিতার বিবরণ

ক্ষীরিণীর কয়েকটি প্রজাতি পাওয়া যায়। ভাবপ্রকাশে উল্লিখিত ক্ষীরিণী বড় দুগ্ধিকা, বড় কেরুই, বড় খেরুই, দুধিয়া, দূধী প্রভৃতি নামে প্রচলিত। এটির বোটানিক্যাল নাম Euphorbia hirta Linn., এছাড়া আরও ২/৩ টি ক্ষীরিণী আমরা দেখতে পাই, সেগুলি তাই লঘু দুগ্ধিকার মধ্যেই পড়ে। এগুলির বোটানিক্যাল নাম হচ্ছে Euphorbia thymifolia Linn., Euphorbia microphylla Heyne., Euphorbia Vericifolia Linn. এবং সবগুলির ফ্যামিলী Euphorbiaceae. প্রত্যেকটির পরিচিতি আলাদা আলাদাভাবে দেওয়া হলো। এই গাছগুলির যেকোন অংশ ভাঙ্গলেই ক্ষীর বা দুধ বেরোয়।

Euphorbia hirta

১ মূল সমেত সমগ্র গাছের কাথ স্তন্যবর্ধক, কামোদ্দীপক, কৃমিঘ্ন; হৃদরোগ, বক্ষপ্রদাহ, উদরশূল, অতিসার প্রভৃতি রোগে ব্যবহার্য। এছাড়া তমক শ্বাস, কাস ও পুরাতন কফবিকারে এটির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে অন্য কফনিঃসারক ঔষধও ব্যবহার করতে হবে। শ্বাসনালীর কষ্ট এবং মূত্রনালীগত রোগ নিবারক। ক্বাথ কবল হিসেবে এবং গাছ বাটা প্রলেপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্বাথ অথবা চূর্ণ ব্যবহারে হৃদয় ও শ্বসনক্রিয়ায় এর অবসাদক প্রভাব পড়ে। খালি পেটে অধিক মাত্রায় খেলে আমাশয়ে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, সেজন্য খাওয়ার পর অল্প মাত্রায় বেশি পরিমাণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া উচিত।

২ গাছের রস রক্তযুক্ত প্রবাহিকা, অতিসার ও উদরশূলে উপযোগী।

৩ শিকড় বমন বন্ধ করে। পানের মধ্যে শিকড় রেখে চুষে চুষে খেলে তোতলামি দূর হয়।

৪ গাছের আঠা আঁচিল, জড়ুল ও দাদে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

Euphorbia thymifolia

১ শুকনো পাতা ও বীজ—– সামান্য মধুর গন্ধবিশিষ্ট, উত্তেজক, সঙ্কোচক, কামোদ্দীপক, ক্রিমিনাশক ও বিরেচক; শিশুদের পায়খানার গোলমালে, রক্ত প্রবাহিকা ও উদর শূলে ব্যবহার্য।

২ গাছের রস— কেঁচো ক্রিমি ও ফিতা ক্রিমি নষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। দাদ ও অন্য চর্মরোগে লাগানো হয়ে থাকে। কফ ও পিত্তকে শরীর থেকে বের করার জন্য দুধের সঙ্গে ব্যবহারের/ সেবনের নির্দেশ।

৩ শিকড়- অনার্তব ও বাধক দোষে প্রযোজ্য।

আরো পড়ুন:  কাঁকরোল লতা-র বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ

৪ গাছের তৈল— এ থেকে প্রস্তুত সাবান বিসর্প রোগে ব্যবহৃত হয়। মশা মাছির হাত থেকে রক্ষার জন্য স্প্রে করা হয়। কুকুর ও শৃগালের ক্রিমি নষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Euphorbia microphylla

সমগ্র গাছ-স্তন্যবর্ধক।

Euphorbia hypericifolia

সমগ্র গাছ—সংগ্রাহী ও মাদক ।।

১ শুকনো পাতা ভিজানো জল-সঙ্কোচক, প্রবাহিকা, রক্ত প্রদর ও শ্বেত প্রদরে ব্যবহার্য।

২ পাতার রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে শিশুদের পেটের ব্যথায় প্রয়োগ করা হয় ।

দুধিয়া-র প্রকারভেদগুলোর পরিচয়

১. Euphorbia hirta (বড় দুধিয়া) পূর্বে এটির বোটানিক্যাল নাম ছিল Euphorbia pillulifera., বাংলায় এর নাম কেরুই, বড় খেরুই, বড় দুগ্ধিকা; হিন্দীতে বলে দুধিয়া, দূধী; সংস্কৃতে দুগ্ধিকা, স্বাদুপর্ণী, ক্ষীরা, বিক্ষীরিণী, বড় দুগ্ধিকা প্রভৃতি নামে পরিচিত।

ভারতবর্ষের উষ্ণপ্রধান অঞ্চল সমূহে জন্মে। সাধারণতঃ পতিত জমিতে, বাগানে, রাস্তার ধারে অযত্নসম্ভূতভাবে হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, ২৪-পরগণা, হুগলী, হাওড়া আতি জেলার যত্র-তত্র এটিকে দেখা যায়। বর্ষজীবী ক্ষুপজাতীয় গাছ, খাড়া ও অবতভাবে থাকে, উচুতে বা লম্বায় দেড় থেকে দুই ফুটের বেশি হতে সাধারণতঃ দেখা যায় না। ডাঁটার উপর দিকে পাতা থাকে। পাতা লম্বাটে, ডিম্বাকৃতি আয়তাকার, কিনারা কাটা কাটা, লম্বায় ১-২ ইঞ্চি। সমগ্র গাছটি রোমশ, এমন-কি ফলও। পাতার শিরাগুলি স্পষ্ট দেখা যায়। পুষ্পবৃন্ত ছোট, ফুল খুব ছোট ছোট, সাদাটে, কোমল ও লোমযুক্ত। বীজ ফিকে ধূসর বর্ণের, গোলাকার। শীতকালে ফুল ও ফল হয়। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ—সমগ্র গাছ। ফুল ও ফল হওয়া অবস্থায় সংগ্রহ করে ছায়াতে শুকিয়ে রাখতে হয়।

২. Euphorbia thymifolia (1991) এটি ছোট কেরুই-এরই একটি প্রজাতি। সংস্কৃতে লঘু দুগ্ধিকা, বাংলায় দুধিয়া, রক্ত কেরুই ; হিন্দীতে ছোটী দূধী, দূধলী প্রভৃতি নামে পরিচিত। এটিকে রক্ত কেরুই এই জন্য বলা হয়েছে যে, গাছটির কাণ্ড-শাখা-প্রশাখা তামাটে লাল রঙের। কোন কোন পুস্তকে এটির নাম শ্বেত কেরুই থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি তা নয়, বরং Euphorbia microphylla গাছটিকে শ্বেত কেরুই বলা সমীচীন।

আরো পড়ুন:  অরনি বা বাতঘ্নী এশিয়ায় জনানো ভেষজ উদ্ভিদ

কোমল লোমযুক্ত তামাটে শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট বর্ষজীবী এই গাছ ভারতবর্ষের উষ্ণপ্রধান অঞ্চলের যত্র-তত্র দেখা যায়। পাতাগুলি খুবই ছোট ছোট কাণ্ড মাটিতে গড়িয়ে পড়ে, লম্বায় ১০/১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার অগ্রভাগ গোলাকার, মোটা, কিনার করাতের মত কাটা কাটা, কাণ্ডের উভয়দিকে থাকে, লম্বায় ১/৪ ইঞ্চির মত। পুষ্পদণ্ড ক্ষুদ্র ও সরল বছরের সবসময়েই সাদাটে রঙের ফুল হয়ে থাকে। বীজ কোঁকড়ান, বীজকোষ, কোমল লোমযুক্ত। ঔষধ হিসাবে ব্যবহার্য অংশ- সমগ্র গাছ। গাছে ফুল ও ফল হলে সংগ্রহ করে ছায়াতে শুকিয়ে রাখতে হয়।

৩ Euphorbia microphylla (লঘু দুধিয়া/ছোট কেরুই) এটিও ছোট কেরুই-এর একটি প্রজাতি। সংস্কৃতে লঘু দুগ্ধিকা, বাংলায় ছোট কেরুই, হিন্দিতে ছোটী দূধী বলা হয়। এইটিই শ্বেত কেরুই, কারণ এর কাণ্ড সবুজাভ সাদা। ভারতবর্যের উষ্ণপ্রধান অঞ্চলের সর্বত্রই এটিকে পাওয়া যায়। বর্ষজীবী, ১০/১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। কাণ্ড নরম, রোমশ, পত্রময় এবং বহু শাখা বিশিষ্ট। পাতার আকার খুবই ছোট, অগ্রভাগ দন্তুর এবং মসৃণ। ফুল খুবই ছোট, সাদাটে। শীতের শেষে ফুল ও ফল হয়। বীজ মসৃণ, ঈষৎ নীলবর্ণ। ঔষধ হিসাবে ব্যবহার্য অংশ—সমগ্র গাছ। গাছে ফুল ও ফল হলে সংগ্রহ করে ছায়াতে শুকিয়ে রাখতে হয়।

৪. Euphorbia hypericifolia (লঘু দুধিয়া) এটিকে সংস্কৃতে দুগ্ধিকা ও হিন্দীতে দূধী বলে। বাংলায় এটির কোন নাম না থাকলেও এটি এক প্রকার লঘু দুগ্ধিকা এবং ছোট কেরুই-এর প্রজাতি বিশেষ। ভারতের সমস্ত উষ্ণ প্রদেশে বর্ষাকালে প্রচুর জন্মে । মাটিতে গড়িয়ে পড়ে, প্রায় ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়। পাতা লম্বাটে, গোল, ফুল খুব ছোট সাদা ও গোলাপী রঙের। ফল ছোট, ঈষৎ সবুজাভ। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ— সমগ্র গাছ। গাছে ফুল ও ফল হলে সংগ্রহ করে ছায়াতে শুকিয়ে রাখতে হয়।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Harry Rose

আরো পড়ুন:  দইগোটা বা লটকন গাছের উপকারিতা

Leave a Comment

error: Content is protected !!