ভূমিকা: বুনো ঝিঙা (বৈজ্ঞানিক নাম: Gymnopetalum cochinchinense) হচ্ছে কুকুরবিটাসিয়া পরিবারের জিমনোপেটলুম গণের এক প্রকারের গুল্ম। এই প্রজাতিটি দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মায়।
বুনো ঝিঙা-এর বর্ণনা :
বুনো ঝিঙা বহুবর্ষজীবী আরোহী বীরুৎ। এদের কান্ড ও শাখা সরু, কন্টকরোমী বা অতিরোমশ। আকর্ষ সূত্রাকার, সরল। পত্র ডিম্বাকার, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৪-৮ সেমি, অবিভক্ত বা খন্ডিত, অতিরোমশ-খররোমাবৃত, তরঙ্গিত, এবং সামান্য দন্তর, বৃন্ত ২.৫-৪.০ সেমি লম্বা, সরু। উদ্ভিদ সহবাসী।
পুংপুষ্প: একল বা রেসিম, পুষ্প ৩-৮টি, মঞ্জরীদন্ড ৪-১২ মিমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র ফলকাকার, ৩-খন্ডিত, ১.০-২.৫ সেমি লম্বা, হলুদ-বাদামী, অতিরোমশ, বৃতি নল অর্ধবেলনাকার, ২.৫- ৩.০ × ৩.৪ মিমি, খন্ড ৫-৬ মিমি লম্বা, বিস্তৃত, দলমন্ডল সাদা, ২.৫-৩.০ × ৮-১০ মিমি, খন্ড দীর্ঘায়ত-ডিম্বাকার, অতিরোমশ, পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড খাটো, পরাগধানী ৭ মিমি লম্বা, ২ মিমি পুরু, উভয় প্রান্ত সূক্ষ্মাগ্র।
স্ত্রী পুষ্প: একল, মঞ্জরীদন্ড ১-৪ সেমি লম্বা, বৃতি ও দলমন্ডল পুংপুষ্পের বৃতি ও দলমন্ডলের অনুরূপ, গর্ভাশয় দীর্ঘায়ত, ১০-১২ × ৪-৬ মিমি, হলুদ বাদামী, অতিরোমশ, উভয়প্রান্ত সূক্ষাগ্র, গর্ভদন্ড ৫-৮ মিমি লম্বা, সরু, গর্ভমুন্ড ৩টি, ফল দীর্ঘায়ত-ডিম্বাকার, কমলা রংযুক্ত, ৪-৫ সেমি লম্বা, মসৃণ, ১০টি খাঁজযুক্ত, উভয় প্রান্ত সূক্ষ্ণাগ্র। বীজ দীর্ঘায়ত, চাপা, ৭-৮ × ৩ মিমি, ইষৎ কালচে, স্পষ্ট প্রান্ত যুক্ত।
ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n ২২ (Islam and = Saha, 1951).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
বুনো ঝিঙা গুল্মভূমি, অরণ্য, ঝোপে জন্মায়। ফুল ও ফল ধারণ সময় জুলাই-ডিসেম্বর মাস। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি :
ভারত, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন ও শ্রীলংকা। বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে।
বুনো ঝিঙা-এর ভেষজ গুণাগুণ:
এই প্রজাতির ফল বিষাক্ত। মূলের ক্বাথ পাকা ফলে কীটনাশক এবং গর্ভস্রাবের পরে ধনুষ্টঙ্কারের সংক্রমণ প্রতিরোধীরূপে ব্যবহার করা হয়। পাতার রস অক্ষিপ্রদাহে উপকারী। কন্দাল মূলচূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যথা ও ক্ষয় রোগ উপসমের জন্য বাহ্যিক প্রয়োগ করা হয়।
জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:
ভারতের মুন্ডা আদিবাসী সম্প্রদায় শরীরের ব্যথা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষয় রোগের উপসমের জন্য মূলচূর্ণ গরম পানির সাথে মিশিয়ে গায়ে মালিশ করে (Kirtikar et al., 1935)।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ০৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বুনো ঝিঙা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত। বাংলাদেশে বুনো ঝিঙা সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে শীঘ্র সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৭ম, পৃষ্ঠা ৩১৪-৩১৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Roy Bateman
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।