ভূমিকা: সূর্যমুখী বা পাতি সূর্যমুখী (বৈজ্ঞানিক নাম: Helianthus annuus ইংরেজি: Common Sunflower) এস্টারেসি পরিবারের হেলিয়ান্থুস গণের বিরুৎ। বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সূর্যমুখী-এর বর্ণনা:
সূর্যমুখী লম্বা রোমশ, বর্ষজীবী, উচ্চতা ১৮০ সেমি বা ততোধিক হয়। পত্র হৃৎপিন্ডাকার, সবৃন্তক, দপ্তর, খসখসে রোমশ। পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, অসম জননকোষী, অতি বৃহৎ, ব্যাস অনূর্ধ্ব ২৫ সেমি বা ততোধিক, পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, একল, প্রান্তীয় বা কাক্ষিক, রে-বিশিষ্ট, মঞ্জরী পত্রাবরণ প্রশস্ত ঘন্টাকৃতি। মঞ্জরীপত্র বহু-স্তরে সজ্জিত, বীরুৎ সদৃশ, রোমশ, সুক্ষ্মাগ্র, পুষ্পধার সমতল, শল্কবর্মীয়, শল্কবর্ম ভিতরের দিকে ভাঁজকৃত হয়ে উভলিঙ্গ পুষ্পিকাকে আবেষ্টন করে।
প্রান্ত পুষ্পিকা ১টি থেকে বহু-স্তরে সজ্জিত, ক্লীব, মধ্য পুষ্পিকা উভলিঙ্গ, বহু-স্তরে সজ্জিত। প্রান্ত পুষ্পিকার দলমণ্ডল জিহ্বা-আকৃতি, দীর্ঘ, অখন্ড, হলুদ দলমণ্ডল বিশিষ্ট, মধ্য পুষ্পিকার দলমণ্ডল নলাকার, খর্বভাবে ৫খন্ডিত দলফলক নিয়ে সমাঙ্গ, হলুদ। পরাগধানী উপাঙ্গবিশিষ্ট, নিম্নাংশে সূক্ষ্মভাবে ২-খন্ডিত। উভলিঙ্গ পুস্পিকার গর্ভদণ্ড দীর্ঘ রোমশ উপাঙ্গে সমাপ্তি প্রান্ত বাহু বিশিষ্ট। ফল সিপসেলা, আয়তাকার, পুরু, চাপা, রোমশ, বৃতিরোম দুইটি শূকযুক্ত শল্কের, আশুপাতী। ফুল ও ফল ধারণ: সারা বৎসর জুড়ে ফুল ফোটে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২০ = ৩৪ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: বাগান ও আবাদী জমি। বংশ বিস্তার বীজ দ্বারা হয়।
বিস্তৃতি:
উত্তর আমেরিকায় স্থানীয় ভাবে জন্মে, কিন্তু বর্তমানে ফ্রান্স, রাশিয়া, মিশর, তুরষ্ক, জার্মানি এবং ইতালীতে আবাদ করা হয়। পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশে উদ্ভিদটি প্রধানত সৌন্দর্য বর্ধক উদ্ভিদ রূপে বাগানে আবাদ করা হয়, কিন্তু ইদানিং উদ্ভিদটি (ভোজ্য) তেল উৎপাদনক্ষম হিসেবে জমিতে আবাদ করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক:
রাশিয়ায় উদ্ভিদটির কাঁচা বীজ খাওয়া হয়। ছোট বীজপূর্ণ ভ্যারাইটি তেলের নির্যাসের জন্য নির্ধারিত হয়। ঠাণ্ডা প্রয়োগে খাবার টেবিলে পরিবেশন যোগ্য জলপাই অথবা বাদাম তেল এর সমতুল্য হলুদ, লেবু, মিষ্টি তেল উৎপাদিত হয়। উষ্ণতা প্রদানের মাধ্যমে তেল কেক তৈরী ও এক প্রকার অঘনীভূত কম ভোজ্য তেল উৎপাদিত হয় যা আলো জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হয় এবং উলের কাপড়, মোম ও সাবান তৈরী শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
গবাদি পশু পাখি ও পোল্টি খাদ্য এবং আরও অন্যান্য কাজে সূর্যমূখী তেল কেক, অতসী এবং তুলা বীজের প্রায় সমমূল্যবান। সূর্যমুখীর কাণ্ড এবং মাথা থেকে চমৎকার কাগজ তৈরী হয় এবং কাণ্ডের রুপায়নে সুন্দর আঁশ হয় যা রেশমের মতোই জনপ্রিয়। সম্পৃক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আজও অবধি না হওয়ায় এরা শুধু মাত্র অখন্ডীভূত তরল উৎপাদনেই সাধারণভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) সূর্যমুখী প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে সূর্যমুখী সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪৪-৩৪৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।