ভূমিকা: খেসারি (বৈজ্ঞানিক নাম: Lathyrus sativus ইংরেজি নাম: grass pea, white vetch, Indian pea) হচ্ছে ফেবাসি পরিবারের ল্যথারিস গণের সপুষ্পক লতা উদ্ভিদ। খেসারি চাষ করা হয় ডাল হিসাবে খাওয়ার জন্য।
বিবরণ: খেসারি ছোট আকৃতির বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা ছোট, সবুজ ও চিকন। এদের ফুল ছোট আকারে হয় ও রং নীল। দেখতে অনেকটা শিম ফুলের মতো। ফুল থেকে প্রথমে শুঁটি আকারে ফল হয়। শুঁটির ভেতরে ডাল হয়। ডালের রং হলুদ। উদ্ভিদের পাতা যখন কচি থাকে তখন খাওয়া যায়।
বিস্তৃতি: খেসারি ডাল বেশি জন্মে ভারতে; এছাড়াও পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু দেশ জন্মে।
চাষাবাদ: নিম্ন অমিন জমিতে বা চর জমি হতে জল বা পানি নেমে গেলে বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। আশ্বিন-কার্তিকে কাদাযুক্ত বা সর পড়া মাটিতে বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। এরজন্য কোনো রকম সারের দরকার নাই, ধানের জন্য যে সার দেওয়া হয়, সেই সারেই চলে বা নদীর পলি যেখানে পরে সে জমিতেও বীজ ছিয়ান যায় এজন্য সারের প্রয়োজন নাই।
অনেক জমিতে ধান থাকতে থাকতে খেসারির ডাল বোনা হয়। ধান কাটবার সময় খেসারি গাছ ছোট থাকে, চৈত্র মাসে ডাল পাকে। অনেক স্থানে কাচা থাকতেই গরুকে খাওয়ানো হয়। এই ডাল ভারতের পুর্ববঙ্গে ও বাংলাদেশ অনেক বেশী হয়। পাবনা ও ফরিদপুরে সব চেয়ে বেশী জন্মে। পশ্চিম বঙ্গের অনেকের ভুল ধারণা আছে যে খেসারি ডাল খাইলে পক্ষাঘাত বা রাত অন্ধ হয়। এটা সম্পর্কে বিলাতের রাজকীয় ডাক্তারী প্রতিষ্ঠানে ডাঃ ডাষ্টান্ কর্তৃক পরীক্ষিত হয়েছে বা স্থির হইয়াছে যে, খেসারি কলাইতে এমন কোন পদার্থ পাওয়া যায় নাই, যাহাতে পক্ষাঘাত বা রাত অন্ধ হইতে পারে। তবে ইহা মনুষ্য অপেক্ষা পশুর শ্রেষ্ঠ খাদ্য। কিন্তু এটা ডাল খাওয়ার বিশেষ পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতি মেনে খেলে অনেক রোগের প্রতিকার হয়ে যাবে।[১]
আরো পড়ুন: খেসারির ডালের ১০টি ভেষজ গুণ
খেসারির ডাল খাওয়ার নিয়ম: খেসারির ডালে গর্ভপত্র খঞ্জতাকারক। এইটি থেকে সর্বদা আমাদের সাবধান হওয়া দরকার; বাংলা, বিহার বিশেষত উড়িষ্যার গ্রামাঞ্চলে খেসারির বহু চাষ হয় এবং আহার্য ডাল হিসেবে বৎসরের পর বৎসর তাঁরা ব্যবহার করে আসছেন কিন্তু তাঁরা এর দ্বারা কোনো কুফল পাননি সেটা কারণ হচ্ছে, তাঁরা এই ডালটিকে প্রথমে বালির সঙ্গে ভেজে নিয়ে যাঁতায় ভেঙ্গে খোসাটা ঝেড়ে বের করে দিয়ে থাকেন; এর দ্বারা ঐ গর্ভপত্রের দোষ অংশটা বালির উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর ব্যবহার করা হয় বলেই ঐ দোষমুক্ত হয়। আর বাজারে যেগুলি বিক্রি হয় সেগুলি ভাজা নয়, সুতরাং ঔষধার্থে ব্যবহার করতে গেলে তাকে ভাল করে ঝেড়ে, বেছে, ফুটন্ত গরমজলে ধুয়ে নিয়ে, শুকিয়ে রাখতে হবে।[২]
তথ্যসূত্রঃ
১. ডা: শ্রীযামিণী রঞ্জন মজুমদার: খাদ্যশস্য, মি: বি ছত্তার, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৫১, পৃষ্ঠা, ৭৮।
২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,২৪৪-২৪৫।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।