ময়ূরশিখা-র প্রয়োগ:
১. কাসিতে: কাসি নানা কারণে হতে পারে। ঠাণ্ডা লেগে, আবার কখনো বুকে কফ জমে গিয়ে, কখনো বা ধুলোবালি-ধোঁয়া শরীরের মধ্যে অধিক মাত্রায় ঢুকে কাসির সৃষ্টি হয়। অন্য রোগের লক্ষণ হিসেবেও এটি আসে। যেক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অন্য রোগের লক্ষণ হিসেবে এসেছে, সেক্ষেত্রে ঐ রোগের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার চলবে। আর তা না হলে ময়ূরশিখা-র শুকনা গাছ চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২বার করে খেতে হবে গরম জলসহ, কাসির সঙ্গে যদি তরুণ সর্দি থাকে তাহলে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া ভাল। বালকদের ক্ষেত্রে মাত্রা বয়সানুপাতে ১০০-২৫০ মিলিগ্রাম।
২. হুপিং কাসিতে: এর শিকার হয় সাধারণতঃ অল্পবয়স্ক বাচ্চারা। কাসতে কাসতে দম আটকে যাবার মত হতে থাকে, অথচ কফও বিশেষ উঠে না। এক্ষেত্রে ১০০-২৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় ময়ূরশিখা (সমগ্র গাছ) চূর্ণ দিনে ২-৩ বার মধুসহ খাওয়ালে ৫/৭ দিনের মধ্যে ওটার উপদ্রব কমে যায়। আরও কয়েকদিন খাওয়ালে একেবারে চলে যাবে।
৩. রিকেটে: একে অনেকে শুকনা রোগ বা পুঁইয়ে রোগ বলে। যেসব বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হয়, তাদের জন্য উপযুক্ত পথ্যাদির ব্যবস্থা তো চিকিৎসকের পরামশানুসারে করতে হবে এবং সেইসঙ্গে ময়ূরশিখা চূর্ণ ১০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২/৩ বার দুধ অথবা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ২/৩ মাস খাওয়ালে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়।
৪. অতিসারে: পাতলা দাস্ত হচ্ছে, একেবারে জলের মতো নয়, মাঝে-মধ্যে আমসংযুক্ত মল, ক্ষুধা নেই বললে চলে, অরুচি প্রভৃতি যেক্ষেত্রে, সেক্ষেত্রে ১ গ্রাম মাত্রায় ময়ূরশিখা চূর্ণ দিনে ২বার সকালে ও বিকালে জলসহ খেতে হবে। ৩-৪ দিনের মধ্যেই অবস্থা আয়ত্তে এসে যায়, তারপর আরও ২/৪ দিন খাওয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
৫. চুলকানিতে: গায়ের কোন কোন অংশে অথবা সর্বাঙ্গে চুলকানি হলে সেক্ষেত্রে ময়ূরশিখা বেটে হলুদ মাখার মতো মাখতে হবে। ঘণ্টাখানিক থাকার পর ধুয়ে ফেললে চলবে। অল্প জায়গায় হলে কেবল সেটুকু অংশে প্রলেপের মত করে লাগানো দরকার। কয়েকদিন ব্যবহার করলে চুলকানি চলে যায়।
৬. দাদে: ময়ূরশিখা বাটা পুরু করে প্রলেপ দিতে হবে। কিছুদিন ব্যেপে (লাগাতার) ব্যবহার করলে সেরে যায়।
৭. বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে: কোন কোন প্রদেশের, বিশেষতঃ মধ্য ভারতের কোন কোন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক নারীর বন্ধ্যাত্ব দোষ নষ্ট করার ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার করে থাকেন। যে ক্ষেত্রে সবরকমের অত্যাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে যে, নারী-পুরুষের কারও কোন দোষ (ত্রুটি) খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত যোগ দু’টির যে-কোন একটি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে বলে লেখা হয়েছে।
ক) ময়ূরশিখার চূর্ণ ৬ গ্রাম মাত্রায় পরিমাণমত ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে চেটে চেটে খেতে হবে।
খ) ময়ূরশিখা, শিবলিঙ্গী বীজ ও নাগকেশর চূর্ণ প্রত্যেকটি ৩ গ্রাম মাত্রায় মোট ৯ গ্রাম। চূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে ।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ২৩১-২৩৫।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke. প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম Adiantum caudatum
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।