ভুমিকা: রাম কলা বা পাহাড়ী কলা বা রামানজি-কেলা বা ফুল কলা বা আলংকারিক কলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Musa ornata, ইংরেজি নাম: ব্রঞ্জ ব্যানানা, ফ্লাওয়াররিং ব্যানানা) হচ্ছে ) হচ্ছে মুসাসি পরিবারের মুসা গণের একটি সপুষ্পক বিরুৎ। এই প্রজাতিটি সবজি হিসাবে খাওয়ার জন্য লাগানো হয়ে থাকে।
বর্ণনা: রাম কলা ক্ষুদ্র, গুচ্ছাকার, গ্রন্থিকাল বৃক্ষবৎ বীরুৎ, ছদ্ম। কান্ড বেলনাকার, সরু, প্রায় ২.৭ মিটার লম্বা এবং ১০ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট, ফ্যাকাশে সবুজ, মোম ও কালো দাগ যুক্ত। পত্র সবৃন্তক, ফলক রৈখিক-দীর্ঘায়ত, ১৮০ x ৩৫ সেমি, বুনন শক্ত, মধ্যম সবুজ, চকচকে, প্রায়শই মধ্যশিরার অঙ্কীয় পৃষ্ঠ লাল বর্ণযুক্ত।
পুষ্পবিন্যাস স্পাইক, ঋজু বা শেষাবধি ঝুলন্ত। স্ত্রী পুষ্প ১ সারিতে বিন্যস্ত, ৭ টি গুচ্ছের প্রতিটিতে ৩-৫ টি, বৃত্যংশ হলদেটে-সাদা, ৫ দন্ড বিশিষ্ট, পাপড়ি বৃত্যংশের মতো লম্বা।
পুংপুষ্পকুঁড়ি সূক্ষ্মাগ্র, মঞ্জরীপত্র খাজ বিশিষ্ট, অনেকটা চকচকে, ফ্যাকাশে লাল, হলদে দাগ যুক্ত, সাধারণত একই সময়ে একটি করে ওপরে ওঠে, পুংপুষ্প ১ সারিতে এবং একটি মঞ্জরীপত্রের অভ্যন্তরে ৫-৬ টির গুচ্ছ।
ফল দীর্ঘায়ত, ৩ কোণাকার, ৮ সেমি লম্বা, ২ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট, ফ্যাকাশে সবুজাভ-হলুদ, শাঁস সাদা। বীজ প্রায় ৬ মিমি প্রশস্ত, ৩ ব মিমি পুরু, আঁচিল যুক্ত, কালো, কোণাকার, চাপা। এদের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মার্চ-ডিসেম্বর মাসে হয়ে থাকে।[১]
ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ২২ [২]
চাষাবাদ: পাহাড়ী ঢাল জন্মে। সাধারণত উর্ধ্বধাবকের সাহায্যে বংশ বিস্তার হয় তবে বীজের মাধ্যমেও বংশ বিস্তার ঘটাতে পারে।
বিস্তৃতি: আদি নিবাস মায়ানমার ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার রেমা-কেলেঙ্গা বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ থেকে (Uddin and Hassan, 2004), রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড় থেকে (Uddin et al., 1998) এবং কক্সবাজার জেলার হিমছড়ি ন্যাশনাল পার্ক থেকে (Uddin and Rahman, 1999) এটি রিপোর্ট করা হয়।
অনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: স্পাইক সবজি হসেবে গ্রহণ করা হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) রাম কলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংকটের কারণ দেখা হয়েছে আবাস ভূমি নষ্ট, বন্য হাতির অতিরিক্ত চারণ এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত না হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে রাম কলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে। স্বস্থানে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।[৩]
তথ্যসূত্র:
১. এম আমান উল্লাহ এবং এম মতিয়ুর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ১১ খন্ড (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৮২-৩৮৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.
৩. এম আমান উল্লাহ এবং এম মতিয়ুর রহমান, প্রাগুক্ত, প. ৩৮২-৩৮৩।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Judgefloro
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।