ভুমিকা: কাঁচা কলা বা কাঁচ কলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Musa paradisiaca, ইংরেজি নাম: ব্যানানা, প্লান্টেইন) হচ্ছে মুসাসি পরিবারের মুসা গণের একটি সপুষ্পক বিরুৎ। এই প্রজাতিটি সবজি হিসাবে খাওয়ার জন্য লাগানো হয়ে থাকে।
বর্ণনা:
কাঁচকলা বৃক্ষবৎ বীরুৎ, প্রায় ৯ মিটার পর্যন্ত উঁচু। পত্র সবৃন্তক, ফলক দীর্ঘায়ত, ১-৩ মিটার লম্বা, সাধারণত হেঁড়া, অনুপ্রস্থ সমান্তরাল শিরার মধ্যবর্তী অংশ ফাড়া ।
পুষ্পবিন্যাস ঝুলন্ত স্পাইক, প্রায় ১ মিটার লম্বা, মঞ্জরীদন্ড পুরু, মঞ্জরীপত্র ক্রমান্বয়ে উন্মুক্ত, ডিম্বাকার, ১৫-২০ সেমি। লম্বা, অবতল, গাঢ় লাল, অনেকটা রসাল। বহিস্থ পুষ্পপুটাংশ ২২-২৪ মিমি, ৫ টি দন্ড বিশিষ্ট, রসাল, লাল দাগ যুক্ত। অন্তস্থ পুষ্পপুটাংশ ১৯-২০ মিমি, ডিম্বাকার, সূক্ষ্মা, অবতল। পুংকেশর ৫ টি।
ফল দীর্ঘায়ত, রসাল, বন্যফল বীজসহ ৫-৭ সেমি লম্বা, আবাদী ফল অধিকতর লম্বা ও নির্বীজ। এদের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে বর্ষব্যাপী।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৬, ২২, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৪৪, ৪৮, ৫৫, ৭৭, ৭৮ (Kumar and Subramaniam, 1986)।
চাষাবাদ: পথিপার্শ্ব, পতিত জমি, বাসগৃহ সংলগ্ন তরিতরকারির ক্ষেত, নদী ও পুষ্করিনীর তীরবর্তী অঞ্চল । খর্ব ধাবকের সাহায্যে বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি: আদি নিবাস এশিয়ার উষ্ণাঞ্চল এবং উষ্ণমন্ডলীয় দেশ সমূহে ব্যাপক চাষাবাদ হয়। বাংলা দেশের সর্বত্র পাওয়া যায় ।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
ফল সবজিরূপেও খাওয়া হয়। পাকা কলা চোলাই করে ব্যানানা ওয়াইন, ব্রান্ডি, বিয়ার ভিনেগার ইত্যাদি তৈরি করা হয়। ফলের খোসায় অতিরিক্ত পটাশ থাকায়, খোসা থেকে সাবান তৈরি হয়। বায়বীয় কান্ড আহার্য শ্বেতস্বারের উৎস (Begum, 1987)।
ঔষধি ব্যবহার:
কোষ্ঠ কাঠিন্য, পাকস্থলীর ক্ষত, আমাশয়, বহুমূত্র, বৃক্ক-প্রদাহ, গেটে বাত, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, রক্তের ব্যাধি, ধমনীর প্রদাহ ইত্যাদি নিরাময়ে কলার সফল ব্যবহার রয়েছে। কচি পাতা ফোসকা, পোড়া ঘা ইত্যাদি বাধার পটি রূপে ব্যবহার করা হয়। জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে দেখা যায় কলা গাছের ভিতরের কান্ড রস মৃগীরোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয় (Ghani, 2003)। গ্রামের হাট বাজারে পাতা দ্বারা বিভিন্ন পণ্য দ্রব্যাদি বাঁধা হয়, পাতা খাবারের পাত্র রূপেও ব্যবহৃত হয়। গ্রামের গরিব জনগণ ছদ্ম কান্ডের সাহায্যে ভেলা তৈরি করে জলজ পরিবহনে ব্যবহার করে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাঁচা কলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কাঁচকলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। তবে বাগানে চাষাবাদ করে এটির সম্প্রসারন বাড়াতে হবে।[৩]
তথ্যসূত্র:
১. এম আমান উল্লাহ এবং এম মতিয়ুর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ খন্ড (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৮৩-৩৮৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.
৩. এম আমান উল্লাহ এবং এম মতিয়ুর রহমান প্রাগুক্ত, প. ৩৮৩-৩৮৪।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: antonio57
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।