বন তুলসি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ঔষধি বিরুৎ

ঔষধি বিরুৎ

বন তুলসি

বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum americanum L., Cent. PI. 1: 15 (1753). সমনাম: Ocimum canum Sims. (1823). ইংরেজি নাম: Rosary Ocimum. স্থানীয় নাম: বন তুলসী। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Asterids বর্গ: Lamiales পরিবার: Lamiaceae গণ: Ocimum প্রজাতির নাম: Ocimum americanum

ভূমিকা:  বন তুলসি বা বনবর্বরিকা (বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum americanum, ইংরেজি: Rosary Ocimum.) লামিয়াসি পরিবারের ওসিমাম গণের বিরুৎ।  বাংলাদেশে যে পাঁচ প্রজাতির তুলসি পাওয়া যায় এটি তার মধ্যে একটি। অন্যান্য তুলসিগুলি হচ্ছে রাম তুলসি, বাবুই তুলসি, কালো তুলসি এবং শ্বেত তুলসি। সবগুলো তুলসিই ভেষজগুণে অনন্য এবং একটির পরিবর্তে অন্যটি ভেষজ কাজে লাগানো যায়।  তুলসির সাবেক বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ছিলো পবিত্র স্থান।[১]

বর্ণনা: বন তুলসি খাড়া, শক্ত, সুগন্ধিযুক্ত বর্ষজীবী বীরুৎ, ৪০ সেমি পর্যন্ত লম্বা। কাণ্ড সরল হতে অনেক শাখান্বিত, তরুণ অংশ অণু রোমশ থেকে রোমশ। পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ০.২-১.৫ সেমি লম্বা, সরু, রোমশ, রোম কদাচিৎ ০.২ সেমি পর্যন্ত। লম্বা, পত্রফলক উপবৃত্তাকার-বল্লমাকার, হালকাভাবে করাত দস্তুর, সূক্ষ্মাগ্র, নিচের পৃষ্ঠের শিরা ব্যতীত মসৃণ ।[২]

পুষ্পমঞ্জরী ৭-৮ সেমি লম্বা, শীর্ষীয় স্পিসিফর্ম সাইমের কাছাকাছি স্থাপিত আবর্তে বিন্যস্ত, রোমশ। মঞ্জরীপত্র ১টি, প্রায় ০.৪ সেমি লম্বা, উপবৃত্তাকার থেকে বল্লমাকার, বক্র, প্রান্তীয় সিলিয়াসহ অখন্ড, শূকযুক্ত, পুষ্পবৃন্তিকা প্রায় ০.১ সেমি লম্বা।

বৃত্যংশ ৫টি, প্রায় ০.২ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর, ফলে বৃতি ০.৩-০.৪ সেমি লম্বা, উপরের বৃতি দন্তক চওড়া ও গোলাকার, শূকযুক্ত, সিলিয়াযুক্ত, অন্য ৪টি বল্লমাকার, পার্শ্বের গুলো মধ্যের জোড়া অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর, যেগুলো উপরের দন্তক থেকে দীর্ঘতর। পাপড়ি ৫টি, ০.৫-০.৬ সেমি লম্বা, সাদা, উপরের ওষ্ঠ ৪-খণ্ডিত, নিচেরটি ১-খণ্ডিত, উপরের গুলো অপেক্ষা অধিকতর লম্বা ও সরু, উপবৃত্তাকার, সূক্ষ্মাগ্র।

পুংকেশর ৪টি, দীর্ঘদ্বয়ী, ০.৬-০.৭ সেমি লম্বা, পরাগধানীর কোষগুলো সম্মিলিত, নিচের পুংদণ্ড হাটু-আকৃতি, সরু এবং রোমশ। গর্ভপত্র ২টি, গর্ভাশয় অধিগভ্র, গর্ভদণ্ড সরল, গর্ভমূলী, গর্ভমুণ্ড দ্বিখণ্ডিত। নাটলেট ৪টি, প্রায় ০.১ x ০.১ সেমি, সরু উপবৃত্তাকার, অতি সূক্ষ্ম ছাপযুক্ত, কালো, ত্রিমুখী, আর্দ্র অবস্থায় অত্যন্ত আঠালো। এদের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জুন থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে।

আরো পড়ুন:  আট প্রজাতির তুলসি গাছ ভারত, বাংলাদেশের ঔষধি বিরুৎ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২৪ (Feoroy, 1969)।

আবাসস্থল ও চাষাবাদ:আর্দ্রস্থান, প্রায়ই রুডেরাল ভেজিটেশন তৈরী করে। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।

বিস্তৃতি: গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকা, মাদাগাস্কার ও পশ্চিম এশিয়া থেকে ভারত উপমহাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশে ইহা অধিকাংশ জেলাতেই পাওয়া যায়।

বন তুলসির ঔষধি ব্যবহার: গাছের বীজ দুধের সাথে মিশিয়ে টনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও পানিতে মিশিয়ে প্রস্তুতকৃত এর ক্বাথ শীতলকারক পানীয় হিসেবে জ্বরে ব্যবহার করা হয় । এই উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন উদ্বায়ী তৈল বিভিন্ন সাবান ও প্রসাধনী তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম রাজস্থানের আদিবাসী জনগণ এপেনডিসাইটিসের ব্যথার চিকিৎসায় পুরো উদ্ভিদটি ব্যবহার করে । সতেজ উদ্ভিদ অথবা শুকনো উদ্ভিদের ধোয়া ঘরে দিলে তা মশা বিতরণের কাজ করে। উদ্ভিদের কাথ পাকস্থলীর ব্যথায় ব্যবহার করা হয়। মূলের ক্বাথ প্রাণীর ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করা হয়। আবদ্ধ রুমে আধ-ঘন্টা আগুণের মধ্যে তাজা উদ্ভিদ পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোয়া মুরগীর শরীরে বিদ্যমান এটেল পোকাকে ধবংস করে (Saxena, 1986)। তুলসির ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে আরো পড়ুন

মহা উপকারি তুলসির ঔষধি গুণাগুণ

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বন তুলসি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বন তুলসি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।[২]

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৭৬-৭৮।

২. মাহবুবা খানম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩০৮-৩০৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  লেবু তুলসি রান্নায় ব্যবহৃত আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার বিরুৎ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: asha sathees

Leave a Comment

error: Content is protected !!