কসমস শীত ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়, তবে শীত ঋতুতেই ভালো ফুল হয়। এই ফুলের গাছ খুব কষ্ট সহিষ্ণু এবং আর্দ্রতাযুক্ত মাঝারি ধরনের বেলে-দো-আঁশ বা বেলে মাটিতে ভালো জন্মে। সমতল ভূমির অঞ্চলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এবং পার্বত্য অঞ্চলে আগস্ট ও মার্চ মাসে এর বীজ বপন করা হয়। এই ফুল কেয়ারী বা জমিতে এবং টপে চাষ করা যায়।
কসমসের জাত:
কসমস সাদা, বেগুনী, ক্রিসমন, গোলাপী ইত্যাদি নানা রঙ এর সিঙ্গল ও অর্ধ-ডবল, ডবল জাতের হয়ে থাকে। তবে জনগণের মাঝে অর্ধ-ডবল ফুলের চেয়ে সিঙ্গল ও ডবল ফুলেরই কদর বেশি দেখা যায়। কসমস কন্ডাইকের চাষ গ্রীষ্ম ও বর্ষায় এবং পুরো ডাবল ফুলসহ অন্যান্য জাতের চাষ শীতকালে হয়ে থাকে। রাস্তার ও কেয়ারীর কিনারায় এবং ছোট ছোট কেয়ারীতে সমবেত ভাবে চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা ৬০-১৫০ সেঃ মিঃ হতে দেখা যায়।
জমি প্রস্তুত:
কসমসের চারা তৈরি করে পরে লাগাতে হয়। বীজতলা এবং চারা লাগানোর জমি পৃথক ভাবে তৈরি করতে হয়।
কসমস ফুলের বীজতলা প্রস্তুত:
চারা উৎপাদনের নিমিত্বে চন্দ্রমল্লিকার অনুরূপ পদ্ধতিতে বীজতলার জমি প্রস্তুত করা যেতে পারে। টব বা গামলার জমি হয় অধ্যায়ের টব প্রস্তুতের মতোই করা যাবে। কসমসের বীজতলা প্রস্তুতিতে গোবরের পরিমাণ চন্দ্রমল্লিকার চেয়ে সামান্য কম দিলে ভালো হবে।
চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত:
কসমসের চারা লাগানোর জমি চন্দ্রমল্লিকার অনুরূপভাবে প্রস্তুত করা যাবে, তবে গোবরের পরিমাণ অর্ধেক প্রয়োগ করলে ভালো হবে।
চারা তৈরি ও লাগানো:
প্রস্তুত করা বীজতলায় জুন মাসের মাঝামাঝি এবং টবে অক্টোবর মাসে বীজ বপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বীজ বপনের পর সামান্য পানির ছিটা দিয়ে মাটি হালকা ভাবে চাপিয়ে সমান করে দিতে হবে এবং পশুপাখী যাতে ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ক. চারা ২ বা ৩ ইঞ্চি বা ৫-৮ সেঃ মিঃ লম্বা হলে প্রস্তুতকৃত জমিতে বা টবে লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা বাগানের জমিতে ১-১.৫ ফুট বা ৩০-৪৫ সেঃ মিঃ দূরে দূরে রোপণ করতে হবে এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৪৫-৬০ সেঃ মিঃ রাখাই ভালো।
খ. চারা লাগানোর পর গোবর মাটি সামান্য উঁচু করে দিতে হবে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়।
কসমস গাছের পরিচর্যা ও যত্ন:
গাছ লাগানোর সময় থেকে পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা ভালো ফল পাওয়া যাবেনা।
ক. চারা লাগানোর সময়ই সামান্য ফসফেট সার দিতে হবে এবং সামান্য জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
খ. পানি জমে যাওয়া বা পানি শূন্য হয়ে যাওয়া কোনোটাই চন্দ্রমল্লিকা সহ্য করতে পারেনা বিধায় ফুল আহরণ পর্যন্ত প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে। গাছ সামান্য বড় হলেই ছোট ছোট চিকন খুটির সাথে গাছগুলিকে বেঁধে দিলে ভালো হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ভাল ছেটে দিতে হবে ।
গ. গাছের চাহিদার অতিরিক্ত সার দেয়া হলে গাছ ছাড়িয়ে পাতা বড় হবে ও ডগা দুটি বেঁধে যাবে এবং ফুল ছোট হবে। এ অবস্থায় গাছের ডগা ছেটে দিতে হবে।
ঘ. চারা লাগানোর ১৫ দিন পর থেকে প্রতি ১৫ দিনে একবার পরিমাণ মতো তরল সার এবং মাসে একবার মাছের গুড়া চাপান সার হিসেবে দিতে হবে।
ঙ. গাছে কুড়ি আসার সময় একবার বা দুইবার অ্যামোনিয়াম সালফেট বা ইউরিয়া বা অন্য কোনো নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে।
চ. নাইট্রোজেন সার বেশি মাত্রায় দেয়া যাবেনা। কেননা তাতে ফুলের আকার ছোট ও রঙ ফ্যাকাসে হবে।
ছ. অতিরিক্ত পর্যাপ্ত পটাশ সার দিলে ফুলের রঙ ভালো হয় এবং অতিরিক্ত ফসফরাস সার দিতে ফলের রঙ খারাপ হয়। তাই ফসফরাস সার বেশি মাত্রায় দেয়া যাবেনা।
জ. গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তবে মাটি সাবধানে খুড়তে হবে যাতে গাছের শেকড় না কাটে।
ঝ. গাছ বড় হলে প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৪টি বড় শাখা রেখে বাকীগুলি ছেটে দিলে ফুল বড়ো হবে।
ঞ. গোবর সার ও সরিষার খইল ভিজিয়ে তরল সার তৈরী করে চারা রোপণের পরের মাস থেকেই দিতে হবে এবং কুড়ি আসার সময় তরল সারে সামান্য ইউরিয়া মিশিয়ে দিতে হবে।
ট. গাছ ২৫ থেকে ৩০ সেঃ মিঃ লম্বা হলে প্রধান শাখাটি কোন বাউনীতে বাড়িলে দিলেও তাতে ছোট ছোট শাখা বের হবে এবং ফুলের উৎপাদন হবে।
ফুল সংগ্রহ:
কসমস গাছের ফুল পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হলে তা সংগ্রহ করে নিজেদের ব্যবহারে লাগাতে হবে অথবা বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ক. কসমসের ফুল বেশ শক্ত প্রাণের, গাছে ১০/১২ দিন পর্যন্ত শক্ত থেকে পরে আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়।
খ. বোঁটাসহ ফুল সংগ্রহ করে টবে রাখা যায় এবং বাণিজ্যিকভাবে প্যাক করে বাজারে পাঠানো যায়। ফুল তুলে বোটাগুলি বালতির পানিতে ডুবিয়ে রেখে পরে প্যাক করতে হবে।
গ. লক্ষ্য রাখতে হবে কুড়ি অবস্থায় ফুল যাতে তোলা না হয়। এ অবস্থায় ফুল তুললে তা ফুটে বড়ো হবে না এবং ক্রেতা পছন্দ করবে না ।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১০৮-১১০। আইএসবিএন 984-461-128-7
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।